|

সিলভেস্টার ক্লার্ক

১১ ডিসেম্বর, ১৯৫৪ তারিখে বার্বাডোসের লিড ভেল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

‘সিলভার্স’ ডাকনামে ভূষিত সিলভেস্টার ক্লার্ক ৬ ফুট ২ ইঞ্চি দীর্ঘ উচ্চতাসহ শক্ত মজবুত গড়নের অধিকারী ছিলেন। সেন্ট বাথোলমিউজ বয়েজ স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। দ্রুত গতিসম্পন্ন পেস ও স্বীয় উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে বাউন্স আনয়ণে সক্ষম ছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ সমীহ জাগানো পেসারে পরিণত হন। ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম ভীতদায়ক বোলার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে বার্বাডোস, দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে নর্দার্ন ট্রান্সভাল, অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট ও ট্রান্সভাল এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারে দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৭৭-৭৮ মৌসুম থেকে ১৯৮৯-৯০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৭ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের খেলায় নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ৮/৬২ লাভ করেন। ঐ খেলায় তাঁর দল দশ উইকেটের সহজ বিজয় লাভ করে। সারের তারকা খেলোয়াড়ের মর্যাদা পেয়েছিলেন।

১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ১১ টেস্ট ও ১০টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ক্যারি প্যাকারের ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে দলের অধিকাংশ সদস্য চলে গেলে ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে নিজ দেশে বব সিম্পসনের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ৩১ মার্চ, ১৯৭৮ তারিখে জর্জটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যাসিল উইলিয়ামস, আলভিন গ্রীনিজ, ডেভিড মারে, নরবার্ট ফিলিপ ও শিবু শিবনারায়ণের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৬ উইকেট দখল করলেও তাঁর দল ৩ উইকেটে পরাজিত হয়। তাসত্ত্বেও, পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকে। খেলায় তিনি ৩/৫৮ ও ৩/৮৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৬ ও ৫* রান সংগ্রহ করেন।

একই সফরের ১২ এপ্রিল, ১৯৭৮ তারিখে ক্যাস্ট্রিজে ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন।

ভারতের বিপক্ষে পরবর্তী সফরে তাঁকে দলে রাখা হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দেন। এ সিরিজে ২১ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, কিংবদন্তীতুল্য ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার পাঁচবার তাঁর শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। ব্যাঙ্গালোর টেস্টে ব্যক্তিগত সেরা ৫/১২৬ লাভ করেন।

১৯৮০-৮১ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান সফরে যান। ৮ ডিসেম্বর, ১৯৮০ তারিখে ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। ৩/২৮ ও ১/৩৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান এবং ৩৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। তাঁর অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কারণে সফরকারীরা ১৫৬ রান জয় পেয়ে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

একই সফরে অনাকাঙ্খিত ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। মুলতানে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে সীমানা বরাবর ফিল্ডিংকালে দর্শকদের রোষানলে পড়েন। দর্শকেরা তাঁকে লক্ষ্য করে কমলালেবু ও পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। তিনিও রাগ সামলাতে না পেরে ইট নিক্ষেপ করলে জনৈক দর্শক মারাত্মকভাবে আহত হন। দাঙ্গার উপক্রম হলে আলভিন কালীচরণ হাঁটু নুইয়ে তাঁর পক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা করে পরিস্থিতি সামাল দেন। এরফলে, তিন খেলার জন্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত হন। ইংল্যান্ড গমনার্থে তাঁকে রাখা হলেও নাম প্রত্যাহার করে নেন ও মাইকেল হোল্ডিংকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয়।

১৯৮১-৮২ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২ জানুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ১/৫১ ও ০/২৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৪ ও ৫ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ব্রুস ইয়ার্ডলি’র শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। ব্রুস ইয়ার্ডলি’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখলেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তীতুল্য পেসার হিসেবে নিজেকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। দলে জায়গা করে নিতে অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নার, ম্যালকম মার্শালকলিন ক্রফ্টের ন্যায় তারকা খেলোয়াড়দের সাথে তাঁকে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে হয়েছিল। এছাড়াও, তৎকালীন বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে নিষিদ্ধ ঘোষিত দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদ্রোহী দলের সাথে যুক্ত হবার ফলে দলে তাঁর অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে পড়ে।

১৯৯০ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এ পর্যায়ে তিনবার হ্যাট্রিকসহ ৯৪২ উইকেটের সন্ধান পেয়েছিলেন। তবে, তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান অনেকাংশেই স্বীয় যোগ্যতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ক্রাইস্টচার্চে ফিরে যান ও ক্লাব ক্রিকেটে সক্রিয় থাকেন। এছাড়াও, সফররত দলের বিপক্ষে অনুশীলনীতে দ্রুতগতির বোলার হিসেবে ভূমিকা রাখতেন। এ পর্যায়ে এসেও সমসাময়িক যে-কোন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলারের চেয়ে নিজেকে এগিয়ে রেখেছিলেন। ১৯৮১ সালে ওয়াল্টার লরেন্স ট্রফি লাভ করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। পেগি নাম্নী এক রমণীর সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৯ তারিখে বার্বাডোসের ক্রাইস্টচার্চে নিজ গৃহে হৃদযন্ত্রক্রীয়ায় আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৪ বছর ৩৫৮ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। ২০০৫ সালে সারে কর্তৃপক্ষ ওভালের ভক্সহল এন্ডে ২০জন কিংবদন্তীর অন্যতম হিসেবে নামকরণ করে।

Similar Posts

  • | |

    হার্বার্ট সাটক্লিফ

    ২৪ নভেম্বর, ১৮৯৪ তারিখে ইয়র্কশায়ারের সামারব্রিজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। অন্যতম সেরা ও কিংবদন্তীতুল্য ব্যাটসম্যান ছিলেন। সিবি ফ্রাই তাঁকে ‘দ্য হ্যাচেট ম্যান’ ডাকনামে আখ্যায়িত করতেন। ওয়ালি হ্যামন্ড কিংবা জ্যাক হবসের সমতুল্য…

  • | | |

    ডেভিড গাওয়ার

    ১ এপ্রিল, ১৯৫৭ তারিখে কেন্টের টানব্রিজ ওয়েলসে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘স্টোট’, ‘লুবো’ কিংবা ‘লু’ ডাকনামে পরিচিত ডেভিড গাওয়ার ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ক্যান্টারবারির কিংস স্কুলে অধ্যয়ন করেন। অতঃপর, লন্ডনভিত্তিক ইউনিভার্সিটি…

  • |

    সৈয়দ মুশতাক আলী

    ১৭ ডিসেম্বর, ১৯১৪ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে দক্ষ ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দীর্ঘকায় গড়নের অধিকারী ও পরিপাটি অবস্থায় খেলতে নামতেন। ভারতের শুরুরদিকের ক্রিকেটারদের অন্যতম ছিলেন। অনেকাংশেই তিনি বলিউডের নায়কের ন্যায় ছিলেন। ক্রিজে…

  • |

    বিল এডরিচ

    ২৬ মার্চ, ১৯১৬ তারিখে নরফোকের লিংউড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ইনিংস উদ্বোধনে নামতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করেছেন। এছাড়াও, ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। নরউইচভিত্তিক ব্রাকনডেল স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৩৪ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে মিডলসেক্স দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, মাইনর…

  • | | |

    জেফ ক্রো

    ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৮ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও রেফারি। মূলতঃ ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। মার্টিন ক্রো’র চার বছরের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা তিনি। কনিষ্ঠের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশের এক বছর পর তিনি খেলার সুযোগ পান। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে প্রাদেশিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরেন। এরপরই…

  • | | |

    জেমস লিলিহোয়াইট

    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৮৪২ তারিখে সাসেক্সের ওয়েস্টহাম্পনেট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী পেশাদার ক্রিকেটার ও আম্পায়ার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলতেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ের পাশাপাশি বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৮৭০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। জন লিলিহোয়াইট নামীয় রাজমিস্ত্রির সন্তান ছিলেন। গুডউড পার্কে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন ও সেখানকার স্থানীয় ক্লাবে…