| |

জিম পার্কস, ১৯৩১

২১ অক্টোবর, ১৯৩১ তারিখে সাসেক্সের হেওয়ার্ডস হিদ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। উইকেট-রক্ষণের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিং ও লেগ-ব্রেক বোলিং করতে পারতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

পাঁচ বছর বয়সে ক্রিকেটের প্রতি তাঁর আসক্তি গড়ে উঠে। ক্রিকেটপ্রিয় পরিবারে সর্বাপেক্ষা সদস্যের মর্যাদা পান। তাঁর পরিবারের সাথে সাসেক্সের সম্পর্ক ১৯২৪ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ছিল। এ সময়ে পরিবারটি সত্তর হাজারের অধিক রান তুলেছিল। ইংরেজ টেস্ট ক্রিকেটার জেএইচ পার্কসের সন্তান ছিলেন। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণে ক্রিকেটের দিকে ঝুঁকে পড়েন। বিদ্যালয়ে থাকাকালীন ক্রিকেটার হিসেবে বেশ সুনাম কুড়ান। হোভ কাউন্টি স্কুলের পক্ষে খেলেন।

ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেট ও সাসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৭ বছর বয়সে সাসেক্সের সাথে খেলার জন্যে চুক্তিতে আবদ্ধ হন। ১৯৪৯ থেকে ১৯৭৬ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ১৯৪৯ সালে সাসেক্সের পক্ষে প্রথম খেলেন। অভিষেক খেলায় ১০০ রান তুলেন। পরের মৌসুমে কেন্টের বিপক্ষে ১৫৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। ১৯৫১ সালে আবারও কেন্টের বিপক্ষে ১৮৮ রান তুলেন। এ পর্যায়ে জিম ল্যাংগ্রিজের সাথে ২৯৪ রানের জুটি গড়েন। ফলশ্রুতিতে, কাউন্টি ক্যাপ লাভের অধিকারী হন।

১৯৫০-এর দশকের শুরুতে ন্যাশনাল সার্ভিসের দায়িত্ব পালনকালে ফ্রেড ট্রুম্যান ও রে ইলিংওয়ার্থের ন্যায় তারকা খেলোয়াড়ের সংস্পর্শে থেকে অমূল্য অভিজ্ঞতা লাভ করেন। ১৯৫৩ সালে ন্যাশনাল সার্ভিসের দায়িত্ব সম্পন্ন করেন। এরপর থেকে সাসেক্সের পক্ষে পূর্ণাঙ্গ সময় ব্যয় করতে থাকেন। প্রথমবারের মতো সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। স্ট্রোকপ্লে’র কারণে পরিচিতি পেয়েছেন। সচরাচর কভার ড্রাইভে পারদর্শী ছিলেন। খুব বেশী সময় নেননি ইংরেজ দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে।

১৯৫৪ থেকে ১৯৬৮ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে ৪৬ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালে আব্দুল কারদারের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২২ জুলাই, ১৯৫৪ তারিখে ম্যানচেস্টারে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। জিম ম্যাককোননের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

এরপর ‘এ’ দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। তবে, ১৯৫৬-৫৭ মৌসুমের শীতকালে দক্ষিণ আফ্রিকা গমনার্থে এমসিসি দলের পক্ষে অন্তর্ভুক্ত হবার পূর্ব পর্যন্ত ইংল্যান্ড দলের পক্ষে খেলার সুযোগ পাননি। তবে, আঘাত ও অসুস্থতার কারণে সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় দল মাঠে নামার পর মাথায় গুরুতর চোট পান। এরফলে, দৃষ্টিশক্তিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে ও তাঁকে ইংল্যান্ডে প্রেরণ করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় পুণরায় ফিরে আসার পর সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হন ও বিমান থেকে নামার পর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে নেয়া হলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এভাবেই শুরু না করেই তাঁর এ সফর শেষ হয়।

১৯৬৫-৬৬ মৌসুমে মাইক স্মিথের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩০ ও ৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৮টি ক্যাচ গ্লাভসবন্দীসহ ০/৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে কলিন কাউড্রে’র নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ২৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাট হাতে নিয়ে ল্যান্স গিবসের বলে শূন্য রানে বিদেয় হন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে তিনটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

১৯৬৮ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর হুইটব্রেডের পক্ষে কাজ করেন। সাসেক্সের বিপণন ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর, প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। বেশ কয়েক বছর ওল্ড ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের ব্যবস্থাপক মনোনীত হন। ২০১৩ সালে সাসেক্সের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। আরজে পার্কস নামীয় সন্তানের জনক। ৩১ মে, ২০২২ তারিখে সাসেক্সে ৯০ বছর ২২২ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • |

    জাভেদ ওমর

    ২৫ নভেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘গুল্লা’ ডাকনামে পরিচিত জাভেদ ওমর বেলিম কখনোবা ‘ওমর বেলিম’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম থেকে ২০১১-১২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর…

  • | | |

    হিমু অধিকারী

    ৩১ জুলাই, ১৯১৯ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী এবং অত্যন্ত সম্মানীয় ভারতীয় ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। এছাড়াও, সেনাবাহিনীতে যুক্ত ছিলেন তিনি। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও লেগ-ব্রেক বোলিং করতেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যতিক্রমধর্মী ফিল্ডার হিসেবে তিনি ফিল্ডিংয়ের গুরুত্বতা সম্পর্কে সতীর্থদেরকে অবহিত করে গেছেন। সামরিক শৃঙ্খলাকে উপজীব্য করে ঐ সময়ের ভারতীয় ক্রিকেটে…

  • | | |

    কিরণ মোরে

    ৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৬২ তারিখে গুজরাতের বরোদায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ক্ষুদ্রকায় গড়নের অধিকারী তিনি। ১৯৮০-৮১ মৌসুম থেকে ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বরোদার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।…

  • | | |

    টিপ স্নুক

    ১ ফেব্রুয়ারি, ১৮৮১ তারিখে টেম্বুল্যান্ডের সেন্ট মার্কস এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ধ্রুপদীশৈলীর ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে অপূর্ব দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার দলনেতার দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হয়েছিলেন। ১৮৯৭-৯৮ মৌসুম থেকে ১৯২৩-২৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে…

  • | |

    জনি ক্লে

    ১৮ মার্চ, ১৮৯৮ তারিখে ওয়েলসের বনভিলস্টন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হতেন। ১৯৩০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। উইনচেস্টারে অধ্যয়ন করেছেন। চিপস্টো এলাকায় ক্রীড়াপ্রেমী পরিবারের সন্তান ছিলেন। যুবক অবস্থায় ক্ষীপ্রগতিসম্পন্ন ফাস্ট বোলার ছিলেন। শুরুতে মাইনর কাউন্টি…

  • |

    ডিক মোৎজ

    ১২ জানুয়ারি, ১৯৪০ তারিখে ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৬০-এর দশকে নিউজিল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। লিনউড হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। তবে, বেশীদূর পড়াশুনো করতে পারেননি। উদীয়মান ফাস্ট বোলার হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। এছাড়াও, মারকুটে ভঙ্গীমায় ছক্কা…