|

মোসাদ্দেক হোসেন

১০ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর অফ-ব্রেক বোলিং করে থাকেন। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

ক্রিকেট অনুরাগী পরিবারের সন্তান। ‘সৈকত’ ডাকনামে পরিচিত মোসাদ্দেক হোসেন ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৪ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে ঘরোয়া আসর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিচ্ছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের ক্রিকেট থেকে উঠে আসা সেরা খেলোয়াড়দের অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এরপর, ২০১৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে সামনে রেখে বাংলাদেশ দলে যুক্ত হবার সুযোগ পান। ৯৩.৫০ গড়ে ১৮৭ রান ও ওভারপ্রতি ৩.২২ রান খরচ করে ১১ উইকেট দখল করেন। এরফলে, বাংলাদেশের শীর্ষ উইকেট সংগ্রহকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এছাড়াও, এপ্রিল, ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে দুই খেলায় দলকে নেতৃত্ব দেন।

২০১৩-১৪ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে পূর্বাঞ্চল ও ঢাকা বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, আবাহনী লিমিটেড, গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ও সিডনি থান্ডারের পক্ষে খেলেছেন। ১৯ এপ্রিল, ২০১৪ তারিখে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত খুলনা বিভাগ বনাম ঢাকা বিভাগের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। শুধুমাত্র স্ট্রোকের ফুলঝুড়িই নয়; মাথা খাঁটিয়ে খেলার প্রবণতা রয়েছে। তিন সহস্রাধিক প্রথম-শ্রেণীর রান সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৬০-এর কাছাকাছি গড়ে। তবে, এ পর্যায়ের ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে না পারলেও সাদা-বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের ঘরোয়া আসরেও অন্যতম তারকা ক্রিকেটার হিসেবে চিত্রিত হয়েছেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক মৌসুমকে মোটেই স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি। কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় খুলনার বিপক্ষে জোড়া শূন্য লাভ করেন। তবে, পরের মৌসুমেই নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। বরিশালের পক্ষে খেলার সুযোগ পান ও দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে সচেষ্ট হন। ২৫০ ও ২৮২ রান করেন। এ সংগ্রহগুলো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ব্যক্তিগত দুইটি দুই শতাধিক রানের ইনিংস ছিল। মৌসুমের দশম খেলায় সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ২০১৫ সালের শেষদিকে আরও একটি দ্বি-শতক হাঁকান। এরফলে, জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন।

২০১৩-১৪ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে আবাহনী লিমিটেডের পক্ষে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। লিস্ট-এ ক্রিকেটে নিজস্ব দ্বিতীয় খেলায় প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে সতেরো বছর বয়সে শতক হাঁকান। নয় খেলা থেকে একটি শতরান ও তিনটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। ৫৪.৩৭ গড়ে ৪৩৫ রান তুলে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। এ মৌসুম শেষে ক্রিকইনফো তাঁকে বাংলাদেশের অন্যতম উদীয়মান তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে নামাঙ্কিত করে।

২০১৫ সালে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে গমন করেন। তন্মধ্যে, জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের বিপক্ষে দুইটি খেলায় অংশ নিয়ে ১৯৪ রান তুলে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। ২০১৮-১৯ মৌসুমের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের খসড়া তালিকা তাঁকে রাখা হয়। চিটাগং ভাইকিংস দলের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন।

২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০১৫-১৬ মৌসুমে টি২০আই দলে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০ জানুয়ারি, ২০১৬ তারিখে খুলনায় অনুষ্ঠিত টি২০ আন্তর্জাতিকে সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাঁর অভিষেক ঘটলেও তেমন সফলতা পাননি। ফলশ্রুতিতে, ২০১৬ সালের বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় তাঁকে বাংলাদেশ দলে রাখা হয়নি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে উপেক্ষিত হলেও ঘরোয়া পর্যায়ে ঠিকই রানের ফল্গুধারায় অবস্থান করেছিলেন। ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ তারিখে নিজস্ব দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক খেলায় অংশ নেন। ঢাকায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। ওডিআইয়ে বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম বলেই উইকেট লাভের কৃতিত্বের অধিকারী হন। ৪৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলে স্থায়ী আসন গাড়েন।

২০১৬-১৭ মৌসুমে মুশফিকুর রহিমের অধিনায়কত্বে দলের সাথে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ১৫ মার্চ, ২০১৭ তারিখে কলম্বোয় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলার জন্যে মনোনীত হন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের শততম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৭৫ ও ১৩ রান তুলে বাংলাদেশের ৪ উইকেটের বিজয়ে স্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। এ সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে ড্রয়ে পরিণত হয়।

এরপর, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ১৫-সদস্যের বাংলাদেশ দলে তাঁকে রাখা হয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন উইকেট নিয়ে দলের বিজয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন। ২০১৮ সালের এসিসি এমার্জিং টিমস এশিয়া কাপের সদস্য ছিলেন। ১৭ এপ্রিল, ২০১৯ তারিখে আবু জায়েদের সাথে বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলের সদস্যরূপে যুক্ত করা হয়।

২০২১-২২ মৌসুমে নিজ দেশে ডিমুথ করুণারত্নের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কা দলের মুখোমুখি হন। ২৩ মে, ২০২২ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ০ ও ৯ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩৮ রান খরচ করলেও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। সফরকারীরা দশ উইকেটে জয় পায় ও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত তিনি। চাচাতো বোন শারমিন সামিরা ঊষার সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।

Similar Posts

  • | | |

    সনথ জয়সুরিয়া

    ৩০ জুন, ১৯৬৯ তারিখে মাতারায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিকে অংশ নিয়েছিলেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। যখনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রথমবারের মতো পদার্পণ করেছেন, ঠিক তখন থেকেই শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম শক্তিধর খুঁটির…

  • |

    দিনেশ রামদিন

    ১৩ মার্চ, ১৯৮৫ তারিখে ত্রিনিদাদের কুভা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। উইকেট-রক্ষণের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। শুরু থেকেই প্রকৃত মানসম্পন্ন উইকেট-রক্ষক ও ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর দক্ষতা নিয়ে কোন সন্দেহের সৃষ্টি হয়নি। এমনকি, অভিষেকের পর থেকে…

  • | | |

    জেফ থমসন

    ১৬ আগস্ট, ১৯৫০ নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্রীনাক্রে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ‘থম্মো’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ১৯৭২-৭৩ মৌসুম থেকে ১৯৮৫-৮৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন সরব রেখেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে…

  • | | | |

    মাইক গ্যাটিং

    ৬ জুন, ১৯৫৭ তারিখে মিডলসেক্সের কিংসবারি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী তিনি। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘গ্যাট’ ডাকনামে পরিচিতি পান। ইংল্যান্ডের তারকা খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান। দ্রুত পদচালনায় অগ্রসর হওয়াসহ স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে বেশ আগুয়ান ছিলেন। ঘরোয়া…

  • | | |

    ড্যানিয়েল ভেট্টোরি

    ২৭ জানুয়ারি, ১৯৭৯ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি (১.৯১ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনেই খেলাকালীন চশমা পরিধান করে খেলতেন। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম…

  • |

    উইলিয়াম মোল

    ৩১ জানুয়ারি, ১৮৫৮ তারিখে ভিক্টোরিয়ার ব্রাইটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। ১৮৮০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৮৭৮-৭৯ মৌসুম থেকে ১৮৮৫-৮৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৮৮০ সালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে…