১০ নভেম্বর, ১৯৩৩ তারিখে বার্বাডোসের জ্যাক-মাই-ন্যানি গ্যাপ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, প্রশাসক ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, উইকেটের কাছাকাছি এলাকায় দূর্দান্ত ফিল্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

আক্রমণাত্মক ধাঁচে ব্যাটিং করতেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে শীর্ষসারিতে খেলতেন। পরবর্তীতে মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ক্রিকেটে অংশ নেয়ার পূর্বে ফুটবল খেলায় অংশ নিতেন। পায়ে আঘাত পেলে ফুটবল ছেড়ে দেন ও ক্রিকেটে মনোনিবেশ ঘটান। ব্ল্যাক স্পার্স ফুটবল ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে বার্বাডোসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুম থেকে ১৯৭১-৭২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে দূর্দান্ত খেলার সুবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলে ঠাঁই পান। কেনসিংটন ওভালে সফররত এমসিসি দলের বিপক্ষে ২১৩ রানের ইনিংস খেলার কল্যাণে তাঁর খেলার পথ সুগম হয়।

১৯৬০ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ২৯ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তন্মধ্যে, ২০ টেস্ট ৩২ বছর বয়সে এসে খেলেছিলেন। ১৯৫৯-৬০ মৌসুমে নিজ দেশে পিটার মে’র নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। তৃতীয় টেস্টের পূর্বে ফ্রাঙ্ক ওরেলের আঘাতের কারণে তিনি খেলার সুযোগ পান। ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬০ তারিখে কিংস্টনের সাবিনা পার্কে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এ খেলায় প্রথমবারের মতো শ্বেতাঙ্গদের বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরেন। খেলায় তিনি ৭০ ও ১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে গ্যারি সোবার্সের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৩৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৯৫ ও ১৬৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ৫ উইকেটে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের শেষ টেস্টে ২৫৮ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদেয় জানান। ১৩ মার্চ, ১৯৬৯ তারিখে ক্রাইস্টচার্চের অ্যামি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে এ সাফল্য পান। অদ্যাবধি এ সংগ্রহটি যে-কোন বিদায়ী টেস্ট ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ সংগ্রহ হিসেবে চিত্রিত হয়ে আছে। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ২০১ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে ২৩৫ রানে পৌঁছানোকালে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে ১-১ ব্যবধানে সিরিজের সমাপ্তি ঘটে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান ছিলেন। তবে, তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন স্বল্পকালীন ছিল। যদি ভিন্ন যুগে জন্মগ্রহণ করতেন, তাহলে হয়তোবা বিস্ময়কর ভূমিকা রাখতেন। চতুর্থ ইনিংসে নিজেকে বেশ মেলে ধরতেন। দুইটি শতকসহ চতুর্থ ইনিংস থেকে ৭২.৪০ গড়ে রান পেয়েছিলেন। টেস্টগুলো থেকে ছয়টি শতক সহযোগে ৪৭.৬০ গড়ে ২৫২৩ রান তুলেছিলেন। ১৪১টি প্রথম-শ্রেণীর খেলা থেকে ২৬ শতক সহযোগে ৪৩.৯৩ গড়ে ৯৪৮৯ রান তুলেছেন। উইকেটের কাছাকাছি এলাকায় ফিল্ডিং করতেন। ১১৬টি ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন। তন্মধ্যে, ২১টিই ছিল টেস্টে।

১৯৬৭ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এছাড়াও, কোচিং জগতে প্রবেশ করেন। বার্বাডোস দলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। ৬ মে, ২০১৯ তারিখে বার্বাডোসের কুইন্স এলিজাবেথ হাসপাতালে ৮৫ বছর ১৭৭ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • | | |

    ইউনুস খান

    ২৯ নভেম্বর, ১৯৭৭ তারিখে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মারদান এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে অংশ নিতেন। পাকিস্তানের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। মারদানে জন্মগ্রহণ করলেও শৈশবেই পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচীতে চলে যান।…

  • | |

    দীপক সোধন

    ১৮ অক্টোবর, ১৯২৮ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের গুজরাতের আহমেদাবাদে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও রেফারি ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৫০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান ছিলেন। নিজের সেরা দিনগুলোয় দৃষ্টিনন্দন স্ট্রোকের ফুলঝুঁড়ি ছোটাতেন। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুম থেকে ১৯৬১-৬২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন…

  • |

    ডগলাস কার

    ১৭ মার্চ, ১৮৭২ তারিখে কেন্টের ক্রানব্রুক এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯০০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। বার্নার্ড বোসানকুয়েতকে যদি ‘গুগলির রূপকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, তাহলে তাঁকে ‘বাস্তবায়ক’ হিসেবে পরিগণিত করা হবে। সাটন ভ্যালেন্সের পর অক্সফোর্ডের…

  • |

    ডেভিড সিউয়েল

    ২০ অক্টোবর, ১৯৭৭ তারিখে ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বামহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষদিকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৫-৯৬ মৌসুম থেকে ২০০৫-০৬ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ওতাগোর পক্ষাবলম্বন করেছেন। ২১৮টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট লাভের পাশাপাশি লিস্ট-এ ক্রিকেটে ২৫টি উইকেট…

  • | |

    মন্টি নোবেল

    ২৮ জানুয়ারি, ১৮৭৩ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের ডিক্সন স্ট্রিট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। যোসেফ নোবেল ও মারিয়া দম্পতির অষ্টম ও কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন। ক্রাউন স্ট্রিট সুপারিয়র পাবলিক স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ‘মেরি অ্যান’, ‘আল্ফ’ কিংবা…

  • |

    নীল র‌্যাডফোর্ড

    ৭ জুন, ১৯৫৭ তারিখে নর্দার্ন রোডেশিয়ার লুয়ানশিয়া এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলত বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৮০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী নীল র‍্যাডফোর্ড জোহানেসবার্গভিত্তিক অ্যাথলোন বয়েজ হাইয়ে অধ্যয়ন করেছেন। ক্ষীপ্র গতিসম্পন্ন বোলার ছিলেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৫ সময়কালে…