|

বিল পন্সফোর্ড

১৯ অক্টোবর, ১৯০০ তারিখে ভিক্টোরিয়ার নর্থ ফিটজরয় এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

উইলিয়াম পন্সফোর্ড ও এলিজাবেথ দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ছিলেন। নর্থ ফিটজরয়ের আলফ্রেড ক্রিসেন্ট স্টেট স্কুলে অধ্যয়ন। সেখানে ক্রিকেটে দুইবার পদক লাভ করেন। ১৯১৫ সালে প্রাহরানের হ্যাসেটস কোচিং কলেজে ভর্তি হন। এরপর, ভিক্টোরিয়া স্টেট সেভিংস ব্যাংকে চাকুরী পান। প্রতিদিনের কাজ সম্পাদনের পর দ্রুততার সাথে ফিটজরয় ক্রিকেট ক্লাবের অনুশীলনীতে যোগ দিতেন। সেখানে ম্যাটিং পিচে জুনিয়র হিসেবে ব্যাট করতেন। ১৯১৬ সালে পরিবারের সাথে এলস্টার্নউইকে চলে গেলে তিনি সেন্ট কিল্ডা ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দেন। প্রথম একাদশে টার্ফ উইকেটে খেলতেন। এছাড়াও ফিটজরয় ও সেন্ট কিল্ডার পক্ষে বেসবলে অংশ নিতেন। ব্যাটার ও ক্যাচার হিসেবে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯১৯ থেকে ১৯৩৪ সময়কালে ভিক্টোরিয়া দলের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদা পান।

ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯২০-২১ মৌসুম থেকে ১৯৩৩-৩৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ১৮৯৫ সালে আর্চি ম্যাকলারিনের ৪০০ রানের চতুর্শতক ভঙ্গ করার পর দুইবার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে চার শতাধিক রান সংগ্রহ করেছিলেন। ডন ব্র্যাডম্যানের সাথে ৪৫১ রানের জুটি গড়েছিলেন। এছাড়াও, প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ঘরোয়া মৌসুমে সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। পরবর্তীকালে ব্রায়ান লারা তাঁর এ কীর্তিগাঁথার সাথে শামিল হন। ডিসেম্বরে পাঁচ ইনিংস থেকে ১১৪৬ রান তুলে অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েন। চারটি ত্রি-শতক হাঁকিয়েছেন। কেবলমাত্র ডন ব্র্যাডম্যান (৬) ও ওয়ালি হ্যামন্ড (৪) প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তাঁর তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন।

১৯২৪ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ২৯ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯২৪-২৫ মৌসুমে নিজ দেশে আর্থার জিলিগানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১৯ ডিসেম্বর, ১৯২৪ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। আর্থার রিচার্ডসন ও ভিক রিচার্ডসনের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। শতক হাঁকিয়ে অভিষেক পর্বকে স্মরণীয় করে রাখেন। খেলায় তিনি ১১০ ও ২৭ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ১৯৩ রানে জয় পেলে স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৩৪ সালে বিল উডফুলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৮ আগস্ট, ১৯৩৪ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২৬৬ ও ২২ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ৫৬২ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পেলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

টেস্টগুলো থেকে ৪৮.২২ গড়ে সাত শতক সহযোগে ২১২২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলো থেকে ৬৫.১৮ গড়ে ৪৭ শতক সহযোগে ১৩৮১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের অন্যতম স্বতঃস্ফূর্ত রান সংগ্রাহক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

১৯৩৫ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ১৯৮২ সালে ক্রিকেটে অসামান্য ভূমিকা পালনের এমবিই উপাধিতে ভূষিত হন। ১০ ডিসেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে স্পোর্টস অস্ট্রেলিয়া হল অব ফেমে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট হল অব ফেমের প্রথমদিকের দশজন খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে ঠাঁই পান। ২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের শতাব্দীর সেরা দলে আর্থার মরিসের উদ্বোধনী সঙ্গী হিসেবে মনোনীত হন। এছাড়াও, ২০০১ সালে মেলবোর্ন সিসি’র শতাব্দীর সেরা দলের সদস্য হন। ২০০৫ সালে এমসিজিতে তাঁর সম্মানার্থে ডব্লিউএইচ পন্সফোর্ড ছাউনির বাইরে বিল পন্সফোর্ডের ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর পুত্রকে নিয়ে ভিক্টোরিয়ার উডল্যান্ডে চলে যান। ৬ এপ্রিল, ১৯৯১ তারিখে ভিক্টোরিয়ার কাইনটন এলাকায় ৯০ বছর ১৬৯ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। মৃত্যু-পূর্বকালে অস্ট্রেলিয়ার বয়োজ্যেষ্ঠ জীবিত টেস্ট ক্রিকেটারসহ ১৯২৬ সালে এইচএল কলিন্সের নেতৃত্বাধীন দলের একমাত্র জীবিত সদস্যের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন।

Similar Posts

  • |

    ইউনুস আহমেদ

    ২০ অক্টোবর, ১৯৪৭ তারিখে ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। পাশাপাশি, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স কিংবা বামহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে টেস্ট ও ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৬১-৬২ মৌসুম থেকে ১৯৮৬-৮৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে করাচী, লাহোর ও পাকিস্তান…

  • | | |

    জেফ ক্রো

    ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৮ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও রেফারি। মূলতঃ ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। মার্টিন ক্রো’র চার বছরের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা তিনি। কনিষ্ঠের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রবেশের এক বছর পর তিনি খেলার সুযোগ পান। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে প্রাদেশিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরেন। এরপরই…

  • | | | |

    কৃষ শ্রীকান্ত

    ২১ ডিসেম্বর, ১৯৫৯ তারিখে তামিলনাড়ুর মাদ্রাজে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর অফ-ব্রেক বোলিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ভারত ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিদ্যুৎ প্রকৌশলী হিসেবে শিক্ষালাভ করেন। চেন্নাইভিত্তিক গুইন্ডির ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যয়ন করেছিলেন তিনি। সহজাত প্রকৃতির তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও অতিদ্রুততার সাথে ভারসাম্য বজায়…

  • | |

    মার্ক ডেকার

    ৫ ডিসেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে ম্যাশোনাল্যান্ডের গাটুমা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে মিডিয়াম কিংবা স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৯০-এর দশকে জিম্বাবুয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। খাঁটিমানসম্পন্ন শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান ও কভার অঞ্চলে চমৎকার ফিল্ডার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপনায় সচেষ্ট ছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণ…

  • | |

    ওয়ালি হ্যামন্ড

    ১৯ জুন, ১৯০৩ তারিখে কেন্টের বাকল্যান্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটিং কর্মে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। ইংল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। সিরেনচেস্টার গ্রামার স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। প্রায় যে-কোন বয়সী প্রজন্মের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করবেন। কেন্টে জন্মগ্রহণ করলেও ঘরোয়া…

  • |

    উইলি ওয়াটসন, ১৯৬৫

    ৩১ আগস্ট, ১৯৬৫ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। দলে তিনি মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। অন্যতম মিতব্যয়ী বোলার হিসেবে চিত্রিত হয়েছেন। স্ট্যাম্প বরাবর নিখুঁততার সাথে বোলিং করে ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত হয়েছেন। ১৯৯০-এর দশকে ‘ডিবলি ডবলি পেসার্স’ ডাকনামে আখ্যায়িত ক্রিস হ্যারিস ও…