২৮ জানুয়ারি, ১৮৭৩ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের ডিক্সন স্ট্রিট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
যোসেফ নোবেল ও মারিয়া দম্পতির অষ্টম ও কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন। ক্রাউন স্ট্রিট সুপারিয়র পাবলিক স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ‘মেরি অ্যান’, ‘আল্ফ’ কিংবা ‘মন্টি’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। দর্শকদের প্রিয়পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। ১৮৯৩-৯৪ মৌসুম থেকে ১৯১৯-২০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৮৯৪ সালে কিশোর অষ্টাদশ দলের সদস্যরূপে এ. ই. স্টডার্টের নেতৃত্বাধীন সফররত এমসিসি দলের বিপক্ষে ১৫২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। নিউ সাউথ ওয়েলসের পক্ষে খেলার পর অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন।
১৮৯৮ সাল থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ৪২ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৮৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে আর্চি ম্যাকলারিনের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১ জানুয়ারি, ১৮৯৮ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, বল হাতে নিয়ে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/৪৯ লাভ করেন। এছাড়াও, প্রথম ইনিংসে ১/৩১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৫৫ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সমতায় ফেরে।
পরবর্তী ৩৮ টেস্ট ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন, চারবার বিদেশ সফর করেন ও তিনটি টেস্ট ১৯০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সফরে খেলেন। অনেক কনিষ্ঠ খেলোয়াড়ের কাছে অধিনায়কত্বকালীন ‘মি. নোবেল’ নামে পরিচিতি পেতেন।
১৯০২-০৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জো ডার্লিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১১ অক্টোবর, ১৯০২ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১ ও ৫৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি, বল হাতে নিয়ে ২/৫৪ ও ১/৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯০৩-০৪ মৌসুমের শেষদিকে নিজ দেশে পেলহাম ওয়ার্নারের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৪ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৭/১০০ ও ১/৪০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৬* ও ৫৩* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। স্বাগতিকরা ১৫৭ রানে জয়লাভ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে ফ্রেডরিক ফেনের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১৩ ডিসেম্বর, ১৯০৭ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৩৭ ও ২৭ রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, ০/১৪ ও ২/২৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ২ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
১৯০৯ সালের অ্যাশেজ সিরিজ খেলতে অজি দলকে নিয়ে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৭ মে, ১৯০৯ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ১৫ ও ১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয়লাভ করে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ৯ আগস্ট, ১৯০৯ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ২ ও ৫৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/২৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
এছাড়াও, ১৯১৩-১৪ মৌসুমে আর্থার সিমসের নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেছিলেন।
১৮০০ শতকের শেষদিক থেকে শুরু করে ১৯০০ শতকের সূচনাকাল পর্যন্ত সর্বাপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ খেলোয়াড় ছিলেন। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের স্বর্ণযুগে তিনি বিদ্যালয়ের সহপাঠী ভিক্টর ট্রাম্পারকে সাথে নিয়ে নতুন যুগের সূচনা করেন। নেভিল কারডাসের কাছে তিনি ধ্রুপদীশৈলীর ব্যাটসম্যান হিসেবে চিত্রিত হলে ভিক্টর ট্রাম্পার কল্পনাপ্রবণ হিসেবে বিবেচিত হতেন। সঠিকমানের ও চিন্তাশীল হলেও তিনি অনুভূতিশীল খেলোয়াড় ছিলেন না। বলকে বেশ জোড়ালোভাবে আঘাত করতে পারতেন। তবে, মাঝে-মধ্যে রক্ষণাত্মক ধাঁচ অবলম্বনেও অগ্রসর হতেন।
১৯০০ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ তারিখে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, কুমার সাঙ্গাকারা, অব্রে ফকনার, লিয়ারি কনস্ট্যান্টাইন, স্ট্যান ম্যাককাবে, বিনু মানকড়, টেড ডেক্সটার ও ডেসমন্ড হেইন্সের সাথে একযোগে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন।
পেশাগত জীবনে ব্যাংকের কেরাণী ছিলেন। পরবর্তীতে হেনরি পিচের অধীনে দন্তঃশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। ১৫ এপ্রিল, ১৯০১ তারিখে নিবন্ধিত হন। ম্যাককুয়ারি স্ট্রিটে দন্তসেবা প্রদান করতেন। সিডনিভিত্তিক ডেন্টাল হাসপাতালে সম্মানসূচক সহকারী ডেন্টাল সার্জন হিসেবে মনোনীত হন। ১৯১৫ সালে নিউ সাউথ ওয়েলস ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন এবং ১৯২৬ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত রাজ্যের ডেন্টাল বোর্ডে যুক্ত ছিলেন।
২২ জুন, ১৯৪০ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের র্যান্ডউইক এলাকায় ৬৭ বছর ১৪৬ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
