৩ ডিসেম্বর, ১৯০৫ তারিখে কেন্টের এলহাম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। দলে মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। পাশাপাশি, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
সন্দেহাতীতভাবে ও খুব সহজেই বিংশ শতাব্দীতে ক্রিকেটের সেরা উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যানের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছেন। খেলাকালীন তাঁর চেয়েও দক্ষ উইকেট-রক্ষক থাকলেও কেবলমাত্র ব্যাটিংয়ের কল্যাণে ১৯৩০-এর দশকে নিজেকে ইংল্যান্ড দলে খেলার উপযোগী করেছিলেন। এ কারণেই ডগলাস জার্ডিন ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে ডাকওয়ার্থের চেয়ে তাঁকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। নিজেকে পূর্ণাঙ্গভাবে উপযোগী করে ১৯৩১ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের শীর্ষ উইকেট-রক্ষকের আসনে নিয়ে যান।
১৯২৬ থেকে ১৯৫১ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্ট দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। স্ট্যাম্পের পিছনে অবস্থান করে ডন ব্র্যাডম্যান, জর্জ হ্যাডলি ও ওয়ালি হ্যামন্ডের ন্যায় তারকা খেলোয়াড়দের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বয়ং পরিচিতি ঘটান। শতাধিক প্রথম-শ্রেণীর শতক হাঁকিয়েছিলেন। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও কুমার সাঙ্গাকারা ক্রিকেট জগতে অবিশ্বাস্য সফলতা লাভের পূর্বে সেরা উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন।
১৯২৯ থেকে ১৯৩৯ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৪৭ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯২৯ সালে নিজ দেশে নামি ডিনের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৭ আগস্ট, ১৯২৯ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। নবি ক্লার্কের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে কুইন্টিন ম্যাকমিলানের বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে দুইটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯৩১ সালে নিজ দেশে টম লরি’র নেতৃত্বাধীন নিউজিল্যান্ড দলের মুখোমুখি হন। ২৭ জুন, ১৯৩১ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৮৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১৩৭ ও ১৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ ও সমসংখ্যক স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৩৪ সালের গ্রীষ্মে অ্যাশেজ লড়াইয়ে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লর্ডসে দারুণ খেলেন। দ্বিতীয়বারের মতো এ মাঠে শতক হাঁকান। ১২০ রান তুলতে ২৬২ মিনিট ব্যয় করেন, ৩২৫ বল মোকাবেলা করে ১৪টি বাউন্ডারি হাঁকান। অনিন্দ্য সুন্দর এ শতরানের ফলে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করার গৌরব অর্জন করেন। এরপর, মরিস লেল্যান্ডের শতকের কল্যাণে স্বাগতিক দল প্রথম ইনিংসে ৪৪০ রান তুলতে সমর্থ হয়। এর জবাবে অস্ট্রেলিয়া দল ২৮৪ রান তুলে ফলো-অনের কবলে পড়ে। এ টেস্টে হ্যাডলি ভেরিটি ১৫ উইকেট তুলে নেন ও ইংল্যান্ড দলকে ইনিংস ও ৩৮ রানে জয় এনে দেন। ৭৫ বছর পর এ মাঠে ইংল্যান্ড দল অ্যাশেজ টেস্টে জয় পায়।
১৯৩৫ সালে নিজ দেশে হার্ভি ওয়েডের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৭ আগস্ট, ১৯৩৫ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ১৪৮* রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে তিনটি ক্যাচ ও দুইটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯৩৮-৩৯ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ওয়ালি হ্যামন্ডের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। এ সফরে তাঁর দল অপরাজিত ছিল। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৩৮ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪২ ও ৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে একটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ৩ মার্চ, ১৯৩৯ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৮৪ ও ১৭* রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে দুইটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দীকরণে অগ্রসর হন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলেও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
অংশগ্রহণকৃত টেস্টগুলো থেকে আট শতক সহযোগে ৪০.৫৬ গড়ে ২৪৩৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এ পর্যায়ে ৭৪ ক্যাচ ও ২৩টি স্ট্যাম্পিংয়ে জড়িত ছিলেন। জেফ ডুজনের ন্যায় উইকেট-রক্ষকের পূর্বে নিয়মিতভাবে দলে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পরও ক্রিকেটের সাথে যুক্ত থাকেন। প্রশাসক, ব্যবস্থাপক ও দল নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০ তারিখে কেন্টের ক্যান্টারবারি এলাকায় নিজ গৃহে আকস্মিকভাবে ৮৪ বছর ৮৬ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। উইজডেনের শোক সংবাদে ‘সন্দেহাতীতভাবে সেরা উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান’ হিসেবে তাঁকে চিত্রিত করা হয়। এছাড়াও, এতে ‘কেন্টের প্রকৃত খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর ভূমিকা’ রাখার কথা তুলে ধরা হয়।
