২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৬ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, রেফারি ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হতেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

দৃষ্টিনন্দন ক্রীড়াশৈলী উপহার দিয়ে তৎকালীন ইংরেজ শৌখিন ক্রিকেটে উজ্জ্বীবনী শক্তি জুগিয়েছিলেন। তেমন কিছু চেষ্টা না করলেও অনেক সময় তা প্রকাশিত হয়ে পড়তো। কেমব্রিজের ব্লুধারী ছিলেন ও পিতা জাহাঙ্গীর খানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। তবে, তিনি তাঁর পিতার ন্যায় লর্ডসে উড়ন্ত চড়ুইকে আঘাত করতে পারেননি। ২০০৫ সালে তাঁর সন্তান বাজিদ খানের পাকিস্তানের পক্ষে অভিষেক ঘটলে হ্যাডলি পরিবারের পর দ্বিতীয় পরিবার হিসেবে তিন প্রজন্মের টেস্ট ক্রিকেটারের সাথে জড়িত থাকার সম্মাননার সাথে জড়িয়ে পড়েন। পাকিস্তানের জনপ্রিয় ক্রিকেট পরিবারের সন্তান তিনি। চাচাতো ভাই ইমরান খান ও জাভেদ বার্কি’র ন্যায় তিনিও পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

১৯৬১-৬২ মৌসুম থেকে ১৯৮৪-৮৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে লাহোর, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স, পাঞ্জাব ও রাওয়ালপিন্ডির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, ইংল্যান্ডে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও গ্ল্যামারগন এবং অস্ট্রেলিয়ায় কুইন্সল্যান্ডের পক্ষে খেলেছেন।

খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে পেস বোলিং করতেন। তবে, পিঠের আঘাতের পাশাপাশি বাউন্সে বৈধতার বিষয়ে সন্দেহের সৃষ্টি করতে থাকলে মাঝে-মধ্যে অফ-স্পিন বোলিংয়ের দিকে অগ্রসর হতেন। তাঁর ব্যাটিংয়ের ক্ষিপ্রতার কারণে দ্রুত তাঁকে উপরের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানের পক্ষে সাদিক মোহাম্মদকে সাথে নিয়ে উচ্চমানসম্পন্ন ও সফলতম জুটি গড়েন।

১৯৬৪ থেকে ১৯৮৩ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ৬৩ টেস্ট ও ২৩টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে নিজ দেশে বব সিম্পসনের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১৮ বছর বয়সে ২৪ অক্টোবর, ১৯৬৪ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। আব্দুল কাদির, আসিফ ইকবাল, বিলি ইবাদুল্লাহ, পারভেজ সাজ্জাদ ও শাফকাত রানা’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। একবার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে জনি মার্টিনের বলে এলবিডব্লিউতে শূন্য রানে বিদেয় নেন। এছাড়াও, ২/৫৫ ও ১/৪২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোর পাশাপাশি একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।

এরপর থেকে পাকিস্তান দলের সদস্যরূপে নিয়মিতভাবে টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন ও আটটি শতক হাঁকানোর কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ১৯৬৭ সালে দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। গ্ল্যামারগনের বোলার রজার ডেভিসের এক ওভার থেকে পাঁচ ছক্কা আদায় করে নেন। সব মিলিয়ে ১৩ ছক্কায় ১৪৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। এরফলে, কাউন্টি দলের সাথে চুক্তিবদ্ধ হবার ক্ষেত্র তৈরি করে।

১৯৬৮ সাল থেকে পরবর্তী আট মৌসুম গ্ল্যামারগন ক্লাবের বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নেন। এরপর, ইংরেজ মৌসুমের দ্রুততম শতরান করার সুবাদে ১৯৭২ সালে ওয়াল্টার লরেন্স ট্রফি লাভ করেন। ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে ৭০ মিনিটে এ কৃতিত্বের দাবীদার হন। ওয়েলসের কাউন্টি দলটিতে ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত নেতৃত্ব দেন ও ২১টি প্রথম-শ্রেণীর শতক হাঁকান।

১৯৭২-৭৩ মৌসুমে ইন্তিখাব আলমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১১০ ও ৩৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৩০ ও ০/১১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে নিজ দেশে জন পার্কারের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৩০ অক্টোবর, ১৯৭৬ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ১১২ ও ৫০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, প্রথম দিনে মধ্যাহ্নভোজনের পূর্বেই ৭৭ বলে ১১২ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে তিন অঙ্কের কোটা স্পর্শ করেন। এরফলে, ভিক্টর ট্রাম্পার, ম্যাককার্টনি ও ডন ব্র্যাডম্যানের সাফল্যের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। তবে, জাভেদ মিয়াঁদাদের দ্বি-শতরানের বদৌলতে করাচীতে পাকিস্তান দল ৫৬৫ রান সংগ্রহ করে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিক দল তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে।

১৯৭৭ সালে অ্যান্ডি রবার্টস, জোয়েল গার্নার, কলিন ক্রফ্টের ন্যায় অবিস্মরণীয় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলিং আক্রমণ রুখে দিয়ে সেরা সিরিজ খেলেন। পাঁচ টেস্ট থেকে ৫৩০ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন তিনি।

স্বীয় চাচাতো ভাই ইমরান খান তাঁকে দল থেকে বাদ দিলে দূর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি ঘটে। এরফলে তাঁদের মধ্যকার সম্পর্ক তিক্ততার দিকে গড়ায়। ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে নিজ দেশে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৩ জানুয়ারি, ১৯৮৩ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে কপিল দেবের বলে সৈয়দ কিরমানি’র কটে শূন্য রানে বিদেয় নেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

দর্শনীয় ড্রাইভিং ও হুকিংয়ের মাধ্যমে তিনি দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। রান সংগ্রহও করেছেন দ্রুতলয়ে। ১৯৭০ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর আইসিসি ও পাকিস্তান – উভয় পর্যায়ে প্রশাসক হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৯৩ সালে পাকিস্তানের প্রধান দল নির্বাচক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার সিরিজে আইসিসি ম্যাচ রেফারির দায়িত্বে ছিলেন ও শীর্ষ ক্রিকেট দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার স্থান লাভ পর্যবেক্ষণ করেন। ৪টি টেস্ট পরিচালনা করেছেন। এছাড়াও, ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে ছিলেন। প্রশাসক হিসেবে দূরদৃষ্টিতার স্বাক্ষর রাখেন। তবে, ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় খেলা গড়াপেটার কথা ছড়িয়ে পড়তে থাকলেও তিনি নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

Similar Posts

  • | | |

    এভারটন উইকস

    ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৫ তারিখে বার্বাডোসের পিকউইক গ্যাপ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, রেফারি ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে দক্ষ ছিলেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। সেন্ট লিওনার্ডস বয়েজ স্কুলে অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে, হোটেল ম্যানেজম্যান্ট বিষয়ে পড়াশুনো করেছেন। তবে,…

  • | |

    ওয়েস হল

    ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৭ তারিখে বার্বাডোসের গ্লেব ল্যান্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। প্রকৃত মানসম্পন্ন অসাধারণ বোলার হিসেবে অপরিসীম শক্তিমত্তা, একাগ্রতা ও দক্ষতার সুনিপুণ বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। এমনকি নিস্তেজ…

  • | |

    রামনাথ কেনি

    ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৩০ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৫০-৫১ মৌসুম থেকে ১৯৬৩-৬৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলা ও বোম্বে…

  • |

    আর্থার মেইলি

    ৩ জানুয়ারি, ১৮৮৬ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের জেটল্যান্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, ব্যাঙ্গচিত্রবিদ ও সাংবাদিক ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯২০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। জন হ্যাম্বলটন মেইলি ও জেন শার্লত দম্পতির তৃতীয় পুত্র ছিলেন। ১৩ বছর বয়সে ওয়াটারলু পাবলিক স্কুল থেকে চলে…

  • | |

    স্টিভ স্মিথ

    ২ জুন, ১৯৮৯ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের সিডনিতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিংয়ে পারদর্শী। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সকল স্তরের ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৬ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। পিটার স্মিথ ও জিলিয়ান স্মিথ দম্পতির সন্তান। ক্রিস্টি স্মিথ নাম্নী জ্যেষ্ঠা…

  • | |

    রঙ্গনা হেরাথ

    ১৯ মার্চ, ১৯৭৮ তারিখে কুরুনেগালায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণসহ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে কুরুনেগালা ইয়ুথ ক্রিকেট ক্লাব, মুরস স্পোর্টস…