|

ধীরাজ পারসানা

২ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ তারিখে গুজরাতের রাজকোটে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট কিংবা স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৭০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

৪০ একর ভূমির মালিক, ধনী কৃষকের সন্তান ছিলেন। ১৯৬৫-৬৬ মৌসুম থেকে ১৯৮২-৮৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে গুজরাত, রেলওয়েজ ও সৌরাষ্ট্র এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডারহামের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৮ বছর বয়সের পূর্বেই তাঁর অভিষেক ঘটে। তবে, প্রথম তিন মৌসুম থেকে তেমন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেননি। কলেজে চূড়ান্ত বর্ষে অবস্থানকালে ইন্ডিয়ান রেলওয়েতে চাকুরী পান। এরপর দল পরিবর্তন করতে থাকেন।

১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে পাঞ্জাবের বিপক্ষে প্রথমবারের নিজের প্রতিভা বিকাশে সোচ্চার হন। এ পর্যায়ে তিন নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩১ রান তুলেন। এরপর, বল হাতে নিয়ে বিরাট প্রভাব ফেলেন। পাঞ্জাব দলকে ফলো-অনে ফেলার পূর্বে দুই ইনিংসে ৬/৪৫ ও ৭/১৪৬ পান। এরফলে, বসন্ত রঞ্জনে’র পর রেলওয়েজের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে খেলায় ১৩ উইকেট লাভ করেন। পরবর্তীতে অবশ্য গুণন্ত দেশাই ও কুলামানি পারিদা তাঁর এ সাফল্যকে ছাঁপিয়ে যান। দুই খেলা পর সার্ভিসেসের বিপক্ষে ৬/৪৬ ও ৪/১০৫ লাভ করেন।

বিষেন বেদী’র সরব উপস্থিতির ফলে ১৯৭০-এর দশকের শেষদিক থেকে ১৯৮০-এর দশকের শেষদিক পর্যন্ত অন্য কোন বামহাতি স্পিনারের দলে অংশগ্রহণকে বাঁধাগ্রস্ত করে। তাসত্ত্বেও, তিনি উঁচু স্তরের ক্রিকেটে দুই টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় ব্যাট হাতে শ্রেয়তর ছিলেন।

রঞ্জী ট্রফিতে সৌরাষ্ট্র ও গুজরাতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বোম্বে ও বরোদা দলে খেলেছেন। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী ছিলেন। দ্রুতগতিতে বোলিং না করলেও সুইং করাতে পারতেন। এছাড়াও, উভয়দিক দিয়েই বোলিং করতেন। প্রায়শঃই বামহাতে স্পিন বোলিং করে পর্যাপ্ত সফলতা পেয়েছেন।

পরের মৌসুমে গুজরাতে চলে যান ও মফতলালে চাকুরী পান। এক পর্যায়ে গুজরাতের তারকা খেলোয়াড়ে পরিণত হন। ব্যাটসম্যান, সিমার ও স্পিনার – এ তিন ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে সৌরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১০৬ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস উপহার দেন। পরের খেলায় মহারাষ্ট্রের বিপক্ষে ২/১৩ ও ৬/১৪ পান। পরের খেলায় বরোদার বিপক্ষে নিজস্ব স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিবাহিত করেন।

দলের সংগ্রহ ৪০/৩ থাকাকালে ১০৪ রানে অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে ২৩০ রানে নিয়ে যান। এরপর, বোলিং উদ্বোধনে নেমে ৪/৫৬ নিয়ে বরোদাকে ২০৬ রানে গুটিয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন। দ্বিতীয়বারের মতো মাঠে নেমে ৪১ তুলেন। ৩০৬ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নামা বরোদা দলের বিপক্ষে ৫/৭৪ পান। গুজরাতের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে খেলায় শতক ও সাত বা ততোধিক উইকেট লাভকারী খেলোয়াড়ে পরিণত হন।

১৯৭৯ সালে ভারতের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। উভয় টেস্টই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেছিলেন। ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে নিজ দেশে আলভিন কালীচরণের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১২ জানুয়ারি, ১৯৭৯ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১/৩২ ও ০/৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ৩ উইকেটে জয় পেয়ে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ২৪ জানুয়ারি, ১৯৭৯ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম টেস্টে অংশ নেন। দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের সুযোগ পেয়ে ০/১১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ঘরোয়া ক্রিকেটে উৎসাহব্যঞ্জক ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। বামহাতি অল-রাউন্ডার হিসেবে দারুণ খেললেও টেস্ট ক্রিকেটে এর ধারে-কাছেও ছিলেন না। সংক্ষিপ্ত খেলোয়াড়ী জীবনে মাত্র দুই টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। তুলনান্তে তাঁর প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন বেশ বিস্ময়কর ছিল। ২৬.৫৪ গড়ে ২৯৪৬ রান সংগ্রহের পাশাপাশি ২২.২৪ গড়ে ৩২০ উইকেট দখল করেছিলেন।

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর মোতেরায় কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করেন।

Similar Posts

  • | | | |

    সোমাচন্দ্র ডি সিলভা

    ১১ জুন, ১৯৪২ তারিখে গল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘ডি. এস.’ নামে অধিক পরিচিত ছিলেন। সেরা অল-রাউন্ডারের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। ডানহাতে প্রকৃত মানসম্পন্ন লেগ-স্পিন ও ডানহাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাধর্মী ব্যাটিংয়ে লিপ্ত হতেন। খেলোয়াড়ী জীবনের যাত্রা…

  • |

    রবীন্দ্র জাদেজা

    ৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৮ তারিখে সৌরাষ্ট্রের নবগ্রাম-খেড় এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। বামহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি (১.৭৩ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। অনিরুদ্ধসিং ও লতা জাদেজা দম্পতির সন্তান। খুব ছোটবেলা থেকেই তাঁর মাঝে বিশাল প্রতিভা…

  • | | |

    কেন ক্রান্সটন

    ২০ অক্টোবর, ১৯১৭ তারিখে ল্যাঙ্কাশায়ারের এইগবার্থ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটানোর পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৪০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘদেহের অধিকারী। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। প্রথম মৌসুমেই…

  • |

    চার্লি ম্যাকলিওড

    ২৪ অক্টোবর, ১৮৬৯ তারিখে ভিক্টোরিয়ার স্যান্ডব্রিজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ব্যাটিংয়ে অসম্ভব ধৈর্য্যশীলতার পরিচয় দিতে ও নিখুঁতমানের বোলার হিসেবে সবিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। তবে, শ্রবণেন্দ্রিয়ের সমস্যার কারণে ফিল্ডিং ও উইকেটের প্রান্ত বদলে বিরূপ প্রভাব ফেলতেন। ১৮৯৩-৯৪ মৌসুম…

  • | | |

    জেরেমি কোনি

    ২১ জুন, ১৯৫২ তারিখে ওয়েলিংটনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মজবুত গড়নের অল-রাউন্ডার ছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, স্লিপ অঞ্চলে ফিল্ডিংয়ে সবিশেষ পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ড দলে স্বল্প সময়ের জন্য অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করলেও বেশ সফল ছিলেন। গড়পড়তা নিউজিল্যান্ডীয় বালকদের সাথে তাঁর শৈশবকালও তেমন বৈচিত্র্যময় ছিল না। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে রাগবি খেলায় জড়িয়ে…

  • | | |

    পমি এমবাঙ্গা

    ২৬ জুন, ১৯৭৬ তারিখে মাতাবেলেল্যান্ডের প্লামট্রি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। জিম্বাবুয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ক্রিকেটের সাথে পারিবারের কোন সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও বেশ প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। আধুনিক যুগের অন্যতম ক্রেতাদূরস্ত টেলিভিশন ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ…