৩০ নভেম্বর, ১৮৫৭ তারিখে সারের রদারহিদ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
ওভাল মাঠে অনেকগুলো বছর ‘গাভনর’ নামধারী ববি অ্যাবেল দর্শকদের কাছে অতি পরিচিত ছিলেন। শক্তিধর সারে দলের অন্যতম বিশ্বস্ত ব্যাটসম্যানের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী ও চালচলনে বেশ গম্ভীরভাব বজায় রাখতেন।
অসম্ভব ধৈর্য্য শক্তির পরিচয় বহন করলেও সচরাচর বেশ দ্রুতলয়ে রান সংগ্রহে তৎপর হতেন। ড্রাইভ ও কাট বেশ ভালোভাবে রপ্ত করেন। তবে, পা বরাবরে আসা বলের দিকেই সপাটে আক্রমণ চালাতে কুণ্ঠাবোধ করতেন না। স্লিপ অঞ্চলে ফিল্ডিং করতেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। এছাড়াও, পর্যাপ্ত দক্ষতায় অফ-স্পিন বোলিং করতে অগ্রসর হতেন। তবে, খুব কম সময়ই সুসংগঠিত সারের বোলিং আক্রমণে নিজেকে জড়াতে পেরেছেন। এক সময়ে বিশেষ করে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে শুরু করলে তাঁকে ফাস্ট বোলিং মোকাবেলায় বেশ অস্বস্তিতে ফেলতো।
১৮৮১ থেকে ১৯০৪ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ১৮৮১ সালে ২৩ বছর বয়সে সারে দলের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনা ঘটান। নিজস্ব তৃতীয় মৌসুমে ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন। ১৮৮৬ সালে ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৪৪ সালের স্মরণীয় ইনিংস খেলেন। ১৮৮৮ সালে অন্যতম আর্দ্রময় গ্রীষ্মে পেশাদার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ৩১ গড়ে ১৩২৩ রান তুলেন। কেবলমাত্র ১৮৯৩ সালে চোখের গুরুতর সংক্রমণের কারণে সফলতম খেলোয়াড়ী জীবনে ব্যাঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শেষদিকেই কেবলমাত্র স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। ১৮৯৫ থেকে ১৯০২ সাল পর্যন্ত শীর্ষ ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পান। উপর্যুপরী আট মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলো থেকে দুই সহস্রাধিক রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তন্মধ্যে, ১৯০১ সালে ৩৩০৯ রান তুলেছিলেন। ঐ আট বছরে রান সংগ্রহের গড় ৫৬ থেকে ৪১-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯০৩ সালে চোখে পুণরায় সমস্যা হতে থাকলে চশমা পরিধান করে খেলতে বাধ্য হন। পরের মৌসুমে খেলা থেকে বিদেয় নিতে বাধ্য হন।
মে, ১৮৯৯ সালে ওভালে সমারসেটের বিপক্ষে ৩৫৭ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। এছাড়াও, আরও আট ইনিংসে দ্বি-শতক হাঁকিয়েছিলেন। নয়বার প্রথম-শ্রেণীর খেলায় শুরু থেকে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপারাজিত ছিলেন। জ্যাক হবস, টম হেওয়ার্ড, ওয়াল্টার রিড ও হ্যারি জাপের ন্যায় ব্যাটসম্যানদের সাথে একত্রে সারে দলে খেলেন।
জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলাগুলোয় অসাধারণ সফলতা পেয়েছেন। ১৮৯৪ সালে ওভালে অপরাজিত ১৬৮ রান করেন। ১৮৯৯ সালে ১৯৫, ১৯০০ সালে অপরাজিত ১৫৩ ও ১৯০১ সালে ২৪৭ রান তুলেছিলেন। তন্মধ্যে, ২৪৭ রানের ইনিংসটি ১৯২৫ সালে স্কারবোরায় জ্যাক হবসের ২৬৬ রান সংগ্রহের পূর্ব পর্যন্ত টিকেছিল। ১৯০০ সালে প্লেয়ার্সের সদস্যরূপে লর্ডসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৯৮ রান তুলে স্মরণীয় খেলায় ভূমিকা রাখেন।
১৮৮৮ সালে ইংল্যান্ডের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম খেলেন। সবমিলিয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে আট টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৮৯৬ সালে লর্ডসে সর্বোচ্চ ৯৪ রান তুলেন। ১৮৮৭-৮৮ মৌসুমের শীতকালে সিডনি ও মেলবোর্নের ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের বিবাদের ফলে দুইটি ইংরেজ দল অস্ট্রেলিয়া গমন করে। জর্জ ভার্ননের নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরূপে ২৪ গড়ে ৩২০ রান তুলতে পেরেছিলেন।
১৮৮৮ সালে নিজ দেশে পার্সি ম্যাকডোনেলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১৬ জুলাই, ১৮৮৮ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। স্যামি উডসের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৩ ও ৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ৬১ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
মেজর হোয়ার্টনের ব্যবস্থাপনায় ১৮৮৮-৮৯ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকায় এমসিসি দলের প্রথম সফরে যান। এ সফরে ৪৮ গড়ে ১০৭৫ রান তুলেন। মোট রান সংগ্রহ ও গড়ের দিক দিয়ে দলের অন্য যে-কোন সদস্যের তুলনায় দ্বিগুণ অগ্রসর ছিলেন। ১২ মার্চ, ১৮৮৯ তারিখে পোর্ট এলিজাবেথের জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪৬ ও ২৩* রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ৮ উইকেটে জয়লাভ করলে তাঁর দল দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ২৫ মার্চ, ১৮৮৯ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৭০ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। ব্যাট হাতে নিয়ে দলের একমাত্র ইনিংসে ১২০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ইনিংস ও ২০২ রানে জয়লাভ করে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
১৮৯১-৯২ মৌসুমে ডব্লিউজি গ্রেসের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৯ জানুয়ারি, ১৮৯২ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অস্ট্রেলিয়ায় নিজস্ব দ্বিতীয় সফরে অপরাজিত ১৩২ রানের স্মরণীয় ইনিংস খেলেন। এ পর্যায়ে প্রথম ইংরেজ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটের পূর্ণাঙ্গ ইনিংসে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে মাঠ ত্যাগের প্রথম উদাহরণ তৈরি করেন। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে ১ রান সংগ্রহ করলেও খেলায় দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ৭২ রানে জয় পেলে স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
ওভালে ১৮৯৯ সালে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩৫৭ রান করেন ও ১৯৩৮ সালে লেন হাটন নতুন রেকর্ড গড়ার পূর্ব পর্যন্ত অক্ষত ছিল।
১৮৯১-৯২ মৌসুমে লর্ড শেফিল্ড একাদশের অধিনায়ক ডব্লিউ. জি. গ্রেসের নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরূপে পুণরায় অস্ট্রেলিয়ায় যান। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৩২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেও অ্যালিক ব্যানারম্যানের সাড়ে সাত ঘণ্টা ব্যাটিংয়ে সংগৃহীত ৯১ রানের কল্যাণে অস্ট্রেলিয়া দল বিজয়ী হয়।
অনাবিল সম্ভাবনা ও ধৈর্য্যশীল ব্যাটসম্যানে মূর্ত প্রতীক ছিলেন। ছোটখাটো গড়নের অধিকারী হলেও মারকুটে ভঙ্গীমায় খেলতেন। ওভালে একবার দুপুর বারোটা থেকে মধ্যাহ্নভোজনের মধ্যকার সময়ে শতরান হাঁকানো বিরল কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছিলেন। সারে দলে খেলাকালীন বিল ব্রোকওয়েলের সাথে জুটি গড়ে অনেকগুলো বড় ধরনের রান সংগ্রহে তৎপরতা দেখিয়েছিলেন। আগস্ট, ১৮৯৭ সালে ওভালে হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে ঐ সময়ের উদ্বোধনী জুটিতে ৩৭৯ রানের রেকর্ড গড়েন। সেপ্টেম্বর, ১৮৯৮ সালে ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে ২৬৫; মে, ১৮৯৭ সালে সাসেক্সের বিপক্ষে ২৩১ ও ১৯০০ সালে কেন্টের বিপক্ষে নিরবিচ্ছিন্ন ২৭০ রানের জুটি তাঁরা একই মাঠে করেছিলেন। এছাড়াও, ওভালে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে ডিগবি জেফসনের সাথে ৩৬৪ রান, ১৯০২ সালে হ্যাস্টিংসে সাসেক্সের বিপক্ষে টম হেওয়ার্ডের সাথে ২৪৬ রান ও ১৮৮৯ সালে স্কারবোরায় সাউথের সদস্যরূপে নর্থের বিপক্ষে ডব্লিউ. জি. গ্রেসের সাথে ২২৬ রান তুলেন। তন্মধ্যে, বড় ধরনের সবকটি জুটির মধ্যে ওভালে ১৮৯৯ সালে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে সারের সদস্যরূপে চতুর্থ উইকেটে ৪৪৮ রানের সংগ্রহটি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। বিশ্বরেকর্ডের জুটিটিতে নিজে করেন ১৯৩ ও টম হেওয়ার্ড করেন ২৭৩ রান।
১৯০২ সালে জো ডার্লিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৪ জুলাই, ১৯০২ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৬ ও ২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। নাটকীয়ভাবে ৩ রানে পরাজিত হলে স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
বেশ ভালোভাবেই ড্রাইভ ও কাটের মার মারতে পারতেন। তবে, অন-সাইডেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন ও রান সংগ্রহের ক্ষেত্রে বেশ তৎপরতা দেখাতেন। খুব কমসংখ্যক ব্যাটসম্যানই তাঁর ন্যায় শর্ট লেগ অঞ্চল থেকে রান সংগ্রহে দক্ষতা দেখাতে পেরেছেন ও পায়ের দিকের বলগুলো থেকে স্ট্রোক মারায় পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছিলেন। ছোট গড়নের অধিকারী থাকায় ব্যাটকে সঠিক ও সোজাভাবে রাখতে পারতেন না। তবে, বোলিংয়ের নিশানা সম্পর্কে নিখুঁতভাবে যাচাই করা ও পায়ের গতিময়তায় এ সকল ত্রুটিগুলো পাশ কাটিয়ে যেতে পেরেছেন। মাঠে সর্বদাই উপস্থিত থাকতেন ও প্রায়শঃই স্লিপ অঞ্চলে অবস্থান করতেন। দক্ষতার সাথে স্লো অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী হলেও সারের বোলিং আক্রমণে তেমন ভূমিকা রাখতে পারতেন না। ব্যক্তিগত সাফল্যের বহিঃপ্রকাশের তেমন প্রতিফলন ঘটাতেন না। ওভালে নিজের স্বর্ণালী দিনগুলোয় শতক হাঁকাতে থাকলেও তেমন সাড়া দিতেন না। তবে, দলের সাফল্যের পর সমর্থকদের প্যাভিলিয়নমুখী হয়ে ‘বব, বব, বব’ বলে রব ধ্বনি কেবলমাত্র গাভনরের উপস্থিতি না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকতো।
অনবদ্য ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৮৯০ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। তাঁর দুই সন্তান-ডব্লিউজে অ্যাবেল ও টিই অ্যাবেল সারে দলের পক্ষাবলম্বন করেছেন। ১৮৯৩ সালে প্রথমবারের মতো চোখের সমস্যায় পড়েন। ফলশ্রুতিতে ১৯০৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর, শেষ বয়সে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান। ১০ ডিসেম্বর, ১৯৩৬ তারিখে লন্ডনের স্টকওয়েল এলাকায় ৭৯ বছর বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
