| |

স্টুয়ার্ট কার্লাইল

১০ মে, ১৯৭২ তারিখে সলসবারিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়কত্ব করেছেন।

১৯৯৩-৯৪ মৌসুম থেকে ২০০৫-০৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে ম্যাশোনাল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। অত্যন্ত দক্ষ ও কার্যকর ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তবে, দলীয় ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন। বিস্ময়কর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। ধ্রুপদীশৈলীর ড্রাইভগুলো কভার ও পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে চলে যেতো। এছাড়াও, ক্ষীপ্রময় ফিল্ডার হিসেবেও পয়েন্ট অঞ্চলে অবস্থান করতেন। বিরাট প্রতিভার অধিকারী হলেও নিজেকে কখনো পূর্ণাঙ্গভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। লাজুক প্রকৃতির হওয়া সত্ত্বেও এক পর্যায়ে জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সময়কালে জিম্বাবুয়ের পক্ষে সব মিলিয়ে ৩৭ টেস্ট ও ১১১টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে নিজ দেশে সেলিম মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৩১ জানুয়ারি, ১৯৯৫ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে হেনরি ওলোঙ্গা’র সাথে তাঁর একযোগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ব্যাট হাতে নেয়ার সুযোগ না পেলেও তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ঐ খেলায় জিম্বাবুয়ে দল ইনিংস ও ৬৪ রানের ব্যবধানে তাদের ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ আস্বাদন করে। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিক দল ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলতে যান। ১৩ জানুয়ারি, ১৯৯৬ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৪ ও ১৯ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ক্রিস কেয়ার্নসের অসাধারণ বোলিংশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে অকল্যান্ড টেস্টে প্রথম উইকেটে জিডব্লিউ ফ্লাওয়ার-এসভি কার্লাইলের মধ্যেকার রেকর্ড গড়েন। ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম উইকেটে গেভিন রেনি-জিডব্লিউ ফ্লাওয়ারের সাথে ১৫৬ রানের জুটি গড়ে নতুন জিম্বাবুয়ীয় রেকর্ড গড়লে তাঁদের এ রেকর্ড ম্লান হয়ে পড়ে।

সবমিলিয়ে পাঁচটি আন্তর্জাতিক শতরানের সন্ধান পেয়েছেন। তন্মধ্যে, ২০০০-এর দশকের শুরুতেই অস্ট্রেলীয় পিচে তিনটি পেয়েছিলেন। এছাড়াও, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে শতক হাঁকিয়েছিলেন। ২০০৩-০৪ মৌসুমে নিজ দেশে হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দলের মুখোমুখি হন। একমাত্র ইনিংসে ১০৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।

তবে, ব্যাট হাতে নিয়ে দলে নিয়মিতভাবে খেলার সুযোগ পাননি। দলের জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপকে ঘিরে প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন। এক পর্যায়ে বেশ কয়েকজন তারকা খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে খেলায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। ২০০৪ সালে একই ধরনের ঘটনায় খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের কোপানলে পড়ে দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড়কে বাদ দেয়া হলে অধিনায়কের দায়িত্ব লাভ করেন। ২০০২ সালের শুরুতে পাঁচ সপ্তাহের অচলাবস্থায় ব্রায়ান মার্ফি, গাই হুইটল, হিথ স্ট্রিকঅ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলকে বিভিন্ন কারণে দল পরিচালনা করা থেকে বিরত রাখা হয়। ব্যাটিং গড়ের কারণে এ দায়িত্ব পান। তবে, ছয় টেস্টের পাঁচটিতেই পরাজিত হলে তাঁকেও চড়া মূল্য গুণতে হয়। শুরুতে অধিনায়কত্ব থেকে অব্যহতি পান ও পরবর্তীতে দল থেকে বাদ পড়েন। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায়ও অনুপস্থিত ছিলেন। প্রচুর সাহস ও দক্ষতা বিকাশের চেয়েও আত্মবিশ্বাস নিয়েই দলকে পরিচালনায় অগ্রসর হতেন।

সামনের পায়ে ভর রেখে খেলায় অগ্রসর হতেন। তবে, নির্ধারিত অবস্থানে যদি নিয়মিতভাবে খেলার সুযোগ পেতেন তাহলে হয়তোবা সংগৃহীত রান আরও স্ফীততর হতে পারতো। ১ থেকে ৭ নম্বর অবস্থানে ব্যাট করেছেন। বেশ দৌঁড়ুতে পারতেন ও ফিল্ডারদের উজ্জ্বীবিত রাখতেন। সচরাচর স্কয়ার অঞ্চলে দণ্ডায়মান থেকে একদিনের ক্রিকেটে অনেকগুলো দৃষ্টিনন্দন ক্যাচ মুঠোয় পুড়েছেন।

২০০৩ সালে ইংল্যান্ড গমনার্থে পুণরায় দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ পান। তবে, ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের পূর্বে হাত ভেঙ্গে ফেলেন। কিন্তু, দলে ফিরে নিজস্ব প্রথম টেস্ট শতরানের সন্ধান পান। অক্টোবর, ২০০৩ সালে সিডনিতে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ সফলতা লাভ করেন।

এপ্রিল, ২০০৪ সালে হিথ স্ট্রিকের আর্থিক সংঘাতের কারণে বাদ পড়ার ঘটনায় নিজেকেও জড়িয়ে ফেলেন। এরফলে, অপরাপর বিদ্রোহী কয়েকজন খেলোয়াড়ের সাথে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে দলে ফেরার সুযোগ পেলেও অক্টোবর, ২০০৫ সালে বিদেয় নেন।

২০০৫-০৬ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন নিউজিল্যান্ড দলের মুখোমুখি হন। ১৫ আগস্ট, ২০০৫ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। সফরকারীরা ইনিংস ও ৪৬ রানের ব্যবধানে জয়লাভসহ ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। খেলায় তিনি ১ ও ১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। এরপূর্বে ৭ আগস্ট, ২০০৫ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে ২০* ও ০ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। ঐ টেস্টে তাঁর দল ইনিংস ও ২৯৪ রানের ব্যবধানে পরাজয়বরণ করেছিল।

Similar Posts

  • | |

    মার্ভ ওয়ালেস

    ১৯ ডিসেম্বর, ১৯১৬ তারিখে অকল্যান্ডের গ্রে লিন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। এছাড়াও, নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৩৩-৩৪ মৌসুম থেকে ১৯৬০-৬১ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে অকল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করছেন। স্ট্রোকপ্লের ফুলঝুড়ির পাশাপাশি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় অজস্র রানের…

  • | | | |

    মঈন খান

    ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ তারিখে পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও কোচ। দলে মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। হাল ছেড়ে না দেয়ার মানসিকতার কারণে সবিশেষ পরিচিতি লাভ করেছিলেন। দলের বিপর্যয় রোধে নিচেরসারিতে বেশ তৎপরতা দেখিয়েছিলেন। একদিনের ক্রিকেটে দ্রুতলয়ে পদ সঞ্চালনে ভূমিকা রাখতেন।…

  • | | |

    ডারমট রিভ

    ২ আগস্ট, ১৯৬৩ তারিখে হংকংয়ের কাউলুন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা পালনে সচেষ্ট থাকতেন। ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৯০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেট, সাসেক্স ও ওয়ারউইকশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, হংকংয়ের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৮৩ থেকে…

  • |

    মার্কো জানসেন

    ১ মে, ২০০০ তারিখে ক্লার্কসডর্প এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলিংয়ের দিকেই অধিক জোর দিয়ে থাকেন। বামহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। লায়েরস্কুল গুডকপে অধ্যয়ন করেছেন। ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি (২.০৩ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জগতে নয় মাসের মধ্যে অবিশ্বাস্যভাবে তাঁর উত্থান…

  • | | | |

    মনসুর আলী খান পতৌদি

    ৫ জানুয়ারি, ১৯৪১ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মধ্যপ্রদেশের ভোপালে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার, প্রশাসক ও ম্যাচ রেফারি ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। মজা করে তাঁকে ‘ভোপালের নবাব’ হিসেবে ডাকা হতো। নীল রক্ত বহমান, অক্সফোর্ডের শিক্ষিত, দর্শনীয়, বুদ্ধিমান হিসেবে…

  • | | |

    ইউনুস খান

    ২৯ নভেম্বর, ১৯৭৭ তারিখে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মারদান এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে অংশ নিতেন। পাকিস্তানের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। মারদানে জন্মগ্রহণ করলেও শৈশবেই পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচীতে চলে যান।…