| | |

অতুল বাসন

২৩ মার্চ, ১৯৬৮ তারিখে দিল্লিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৯০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

দীর্ঘকায় গড়নের অধিকারী। ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে বেশ সাড়া জাগান। কঠোর পরিশ্রমী মিডিয়াম-পেস বোলার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। রজার বিনি ও মদন লালের অনুপস্থিতিতে ভারতের অন্যতম সিমার হিসেবে খেলতেন। পরবর্তীতে জবাগল শ্রীনাথের উত্থানে স্থবির হয়ে পড়েন। অঢেল সম্ভাবনার দ্বার থাকা সত্ত্বেও নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থতার পরিচয় দেন।

নিশ্চিতভাবেই তিনি দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলার ছিলেন না। তবে, ক্লান্তিবিহীন অবস্থায় ওভারের পর ওভার বোলিং করতে পারতেন। বিশেষতঃ ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে নিখুঁততার সাথে বোলিং কর্মে অগ্রসর হয়েছিলেন। নিজের সেরা দিনে যে-কোন প্রতিপক্ষের কাছে সমীহের পাত্রে পরিণত হতেন ও নিজেকে বোলিং উদ্বোধনে নামা বোলারদের উপযোগী হিসেবে বিবেচিত হতেন।

দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন ও সেখানেই শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ক্রিকেটে দিল্লি দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুম থেকে ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। নিজস্ব ১৯তম জন্মদিনের দুই দিন পূর্বে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় প্রতিপক্ষ দল ছিল হায়দ্রাবাদ। প্রথম পরিবর্তিত বোলার হিসেবে উভয় ইনিংস থেকে একটি করে উইকেটের সন্ধান পান। ঐ খেলায় হায়দ্রাবাদ শিরোপা জয় করেছিল।

পরের মৌসুমে দিল্লি দল রঞ্জী ট্রফির শিরোপা লাভ করলেও চূড়ান্ত খেলায় তাঁকে খেলানো হয়নি। ইরানী ট্রফিতে অংশ নেন। দিল্লির বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। খেলায় পাঁচ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। পরের খেলায় সার্ভিসেস দলের মুখোমুখি হন। ৫/৫৯ ও ৫/৬৬ লাভ করেন। এটিই তাঁর প্রথম পাঁচ-উইকেট ও দশ উইকেট লাভের ঘটনা ছিল।

৮০ খেলা নিয়ে তাঁর প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন গড়ে উঠেছে। এ পর্যায়ে ২৮.২১ গড়ে ২৯০ উইকেট লাভ করেছিলেন। তন্মধ্যে, সতেরোবার পাঁচ-উইকেট ও চারবার দশ উইকেটের সন্ধান পান। ব্যাট হাতে নিয়েও কিছুটা সফল হয়েছিলেন। এক শতক সহযোগে ১৮.৯৮ গড়ে ১৩১০ রান পেয়েছেন। লিস্ট-এ ক্রিকেটে ২৫.৫৫ গড়ে ৬৫ উইকেট লাভ করেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল তিনি ওভার প্রতি মাত্র ৩.৫৫ রান খরচ করেছিলেন।

১৯৯০ থেকে ১৯৯১ সময়কালে ভারতের পক্ষে চারটিমাত্র টেস্ট ও নয়টিমাত্র ওডিআইয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। বেঙ্কটাপতি রাজু’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১/৯৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ২ ও ২৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। জন রাইটের অনবদ্য ব্যাটিংয়ের সুবাদে স্বাগতিক দল ১০ উইকেটে জয়ে পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ২৪ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৫৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে এমজে গ্রেটব্যাচকে বিদেয় করে টেস্টে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ১/৪৮। বল হাতে নিয়ে ৪/১০৮ ও ১/৮০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ইয়ান স্মিথের অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্র হলেও স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

এরপর, ১ মার্চ, ১৯৯০ তারিখে ডুনেডিনে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন। ওডিআইয়ে ২৫.৭২ গড়ে ১১ উইকেট ও ওভারপ্রতি ৩.৯৮ রান খরচ করেছেন। কমপক্ষে ১০ উইকেট লাভকারী ভারতীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে গড় ও মিতব্যয়ী বোলিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছেন। তবে, অংশগ্রহণকৃত টেস্টগুলোয় ১০ উইকেট লাভের জন্যে তাঁকে ৫০.৪০ গড়ে রান খরচ করতে হয়েছিল।

১৯৯০ সালে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৩ আগস্ট, ১৯৯০ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে দিল্লি দলের নেতৃত্বে ছিলেন। এছাড়াও, মাইনর কাউন্টিজ লীগ ক্রিকেটে অংশ নেন। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর টেলিভিশনে ধারাভাষ্যকর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এছাড়াও, রঞ্জী ট্রফিতে দিল্লি দলের দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। কৈশোরের প্রেমিকা সনু’র সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। এ দম্পতির অংশুমান ও অবন্তীকা নাম্নী দুই সন্তান রয়েছে। মোবাইল ফোন যন্ত্রাংশের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। জুলাই, ২০১১ সালে দিল্লি-গুড়গাঁও টোল প্লাজায় মন্ত্রীর গাড়ী অতিক্রমের অভিযোগে দোষী হন। এ ঘটনা গণমাধ্যমে বেশ সাড়া জাগায়।

Similar Posts

  • | |

    এমএস ধোনি

    ৭ জুলাই, ১৯৮১ তারিখে বিহারের রাঁচিতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারত দলের পক্ষে সকল স্তরের ক্রিকেট খেলেছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার) উচ্চতার অধিকারী এমএস ধোনি ‘এমএস’, ‘মাহি’, ‘এমএসডি’, ‘থালা’, ‘ক্যাপ্টেন কুল’ প্রভূতঃ ডাকনামে ভূষিত…

  • |

    রোল্যান্ড পোপ

    ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৬৪ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের অ্যাশফিল্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে স্লো বোলিং করতেন। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষকের ভূমিকায় তাঁকে অবতীর্ণ হতে হতো। ১৮৮০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। হোবার্টভিত্তিক হাচিন্স স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। বিদ্যালয় একাদশে ব্যাটসম্যান ও বোলারের দায়িত্ব পালন করতেন। পরবর্তীতে, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের…

  • | |

    টিই শ্রীনিবাসন

    ২৬ অক্টোবর, ১৯৫০ তারিখে মাদ্রাজে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও আম্পায়ার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। আয়ানগর পরিবারে তাঁর জন্ম। নাঙ্গামবাক্কাম কর্পোরেশন স্কুলে পড়াশুনো করেছেন। সেখানকার কংক্রিটের পিচে অনুশীলন করতেন। বিদ্যালয়ের পেস বোলারদের বিপক্ষে দারুণ খেলতেন। এক পর্যায়ে তাদেরকে…

  • | | |

    পার্সি শারওয়েল

    ১৭ আগস্ট, ১৮৮০ তারিখে নাটালের ইসিপিঙ্গো এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতেন। উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের নেতৃত্বে ছিলেন। নাটালে জন্মগ্রহণ করলেও ইংল্যান্ডে অবস্থানকালে তাঁর ক্রিকেটে উত্তরণ ঘটে। কর্নওয়ালের পক্ষে মাইনর কাউন্টি ক্রিকেটে অংশ নেন। এক পর্যায়ে দেশে ফিরে আসেন ও খনিজ প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন।…

  • | |

    ডিন এলগার

    ১১ জুন, ১৯৮৭ তারিখে অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের ওয়েলকম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। বামহাতে ব্যাটিং করে থাকেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি (১.৭৩ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটিয়ে থাকেন। ২০০৫ সালে ফ্রি স্টেটের পক্ষে…

  • | | |

    বিল লরি

    ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৭ তারিখে ভিক্টোরিয়ার থর্নবারি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বামহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। খেলাধূলাপ্রিয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। ১৯৪৯ সালে প্রেস্টন টেকে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নকালীন বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের পরিচিতি তিনি তুলে ধরেছিলেন। ১১ বছর বয়সে বিজ্ঞান…