৩০ আগস্ট, ১৯৮০ তারিখে তামিলনাড়ুর মাদ্রাজে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
২০০০-০১ মৌসুম থেকে ২০১৬-১৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রেখেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে তামিলনাড়ুর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, চেন্নাই সুপার কিংস, কারাইকুডি কালাই ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গোলারের পক্ষে খেলেছেন। ২০০০ সালে তামিলনাড়ুর পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। দলের ব্যাটিংয়ের ভিত্তি বেশ ক্ষাণিকটা তাঁর উপর নির্ভরশীল ছিল। তবে, ২০০৫-০৬ মৌসুমের পূর্ব পর্যন্ত তেমন সাড়া জাগাতে পারেননি। এ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফিতে ৮০-এর কম গড়ে সাত খেলা থেকে ৬৩৬ রান তুলেন। এক খেলায় কম অংশ নিয়ে মাত্র ৩৬ রানের জন্যে অমল মজুমদারকে পাশ কাটিয়ে শীর্ষ রান সংগ্রাহক হতে পারেননি। এ সাফল্যের পর তামিলনাড়ুর অধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। তুলনান্তে পরের মৌসুমে তেমন ভালো করতে পারেননি। তাসত্ত্বেও, প্রায় ৫০ গড়ে ৪৩৬ রান তুলেছিলেন।
রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় তামিলনাড়ু দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ও রান সংগ্রহে ব্যাপক তৎপরতা দেখিয়েছিলেন। প্রায়শঃই দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে ধারাবাহিক ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। ডানহাতে ব্যাট নিয়ে দারুণ সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। মানসিক দৃঢ়তা ও স্থির মস্তিষ্ক কাঁধে নিয়ে ব্যাটিংকর্মে অগ্রসর হতেন। শক্ত প্রতিরক্ষাব্যূহ গড়ে বোলারদের মনোবল ভেঙ্গে দিতে ও ইনিংসের ভিত্তি গড়নে সচেষ্ট ছিলেন। পাশাপাশি, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতে পারতেন। এছাড়াও, ফিল্ডার হিসেবে নিপুণতার সাথে হস্তযুগলের মাধ্যমে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
অধিকাংশ খেলাতেই মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে আবির্ভূত হতেন। দৃঢ়চেতা মানসিকতার কারণে ‘মি. ডিপেন্ডেবল’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। শচীন তেন্ডুলকরকে পছন্দের খেলোয়াড়দের তালিকায় শীর্ষে রেখেছেন ও বিদ্যালয়ে অবস্থানকালে শুরুরদিকে তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরন অনেকাংশেই তাঁর অনুরূপ ছিল। রান সংগ্রহে ব্যাপক তৎপরতা দেখাতেন। ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে তামিলনাড়ু দলের প্রধান চালিকা শক্তি ছিলেন। ক্রিজে খুঁটির ন্যায় দণ্ডায়মান থাকতেন ও সঠিক মানের কৌশল অবলম্বন করে খেলতেন। পয়েন্ট অঞ্চলে দক্ষ ফিল্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
২০০৭ সালে জাতীয় পর্যায়ে তাঁর পরিচিতি ঘটে। এ পর্যায়ে জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়া সফরে ভারত ‘এ’ দলের সদস্যরূপে বেশ রান সংগ্রহ করেন। এরপর, সফররত দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের বিপক্ষে ২০০ রানের ইনিংস খেলেন। ফলশ্রুতিতে, অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ তিনটি ওডিআইয়ের জন্যে দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁকে ভারত দলে রাখে। কিন্তু, কোন খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাননি। পরবর্তী সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁকে দলের বাইরে রাখা হয়।
তাসত্ত্বেও, ঘরোয়া ক্রিকেটে ঠিকই রানের ফল্গুধারা বহমান রাখেন। ২০০৭-০৮ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় ৬৫.৯০ গড়ে ৬৫৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। এরফলে, প্রায়শঃই ভারতীয় দলে প্রবেশের জন্যে কড়া নাড়তেন। অবশেষে দশ মাস পর ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কা গমনার্থে শচীন তেন্ডুলকরের পরিবর্তে ভারতের ওডিআই দলে তাঁকে রাখা হয়।
২০০৮ থেকে ২০১১ সময়কালে ভারতের পক্ষে দুইটিমাত্র টেস্ট, সাতটিমাত্র ওডিআই ও একটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ২০০৮-০৯ মৌসুমে দলের সাথে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। প্রথম খেলাতেই বেশ সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ২০ আগস্ট, ২০০৮ তারিখে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক ঘটে। কঠিন পরিস্থিতিতে মাঠে নামেন ও দক্ষতার সাথে স্পিনারদের রুখে দেন। মামুলী ১৪৩ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় এমএস ধোনি’র সাথে জুটি গড়ে জয়সূচক রান সংগ্রহ করেন। ৫৭ বলে ২৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলাকালে মুত্তিয়া মুরালিধরন ও অজন্তা মেন্ডিসের ন্যায় বোলারদেরকে মোকাবেলা করতে হয়েছিল। পরবর্তীতে এটিই ওডিআইয়ে তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সংগ্রহে পরিণত হয়। ঐ সিরিজে আরও দুইটি ওডিআইয়ে অংশ নেন। এরপর তাঁকে দলের বাইরে চলে যেতে হয়।
অক্টোবর, ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট খেলার জন্যে দলে অন্তর্ভুক্ত হন। কিন্তু, তাঁকে খেলানো হয়নি। ২০০৯ সালে ব্রিসবেনে এমার্জিং প্লেয়ার্স প্রতিযোগিতায় ভারত দলের বিজয়ে অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। সুচারূরূপে দলকে পরিচালনার পাশাপাশি ব্যাট হাতে নিয়েও দারুণ ভূমিকা রাখেন। একটি খেলায় ৮১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জয় এনে দেন।
২০০৯-১০ মৌসুমে মুম্বইয়ের বিপক্ষে স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিক্রম করেন। এগারো ঘণ্টার অধিক সময় নিয়ে ২৫০ রান তুলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে দূর্দণ্ড প্রতাপে খেললেও জাতীয় দলে খেলার তেমন সুযোগ পাননি। রাহুল দ্রাবিড়, শচীন তেন্ডুলকর, সৌরভ গাঙ্গুলী ও ভিভিএস লক্ষ্মণের ন্যায় তারকা খেলোয়াড়দের কারণে মাঝারিসারিতে তাঁকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে হয়েছিল।
২০০৯-১০ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে তাঁকে যুক্ত করা হয়। রাহুল দ্রাবিড় ও ভিভিএস লক্ষ্মণের অনুপস্থিতিতে মাঝারিসারিতে শূন্যতা পূরণে তাঁকে এ সুযোগ দেয়া হয়। এক বছর দলের বাইরে থাকার পর ২৯ বছর বয়সে ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ তারিখে নাগপুরে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ঋদ্ধিমান সাহা’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অভিষেক খেলায় শক্ত পেস বোলিং আক্রমণ রুখে দিয়ে ৫৬ রান তুলেন। ডেল স্টেইন ও মরনে মরকেলের ন্যায় বোলারদের বিপক্ষে কেবলমাত্র বীরেন্দ্র শেহবাগের পর মাত্র আরেকজন খেলোয়াড় ১২ রান অতিক্রম করতে পেরেছিলেন। ডেল স্টেইনের ৭/৫১ বোলিং পরিসংখ্যানের কল্যাণে ভারত দল ২৩৩ রানে গুটিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সফরকারীরা ইনিংস ও ৬ রানে জয় পেয়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
এরপর, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ তারিখে কলকাতায় আর একটিমাত্র টেস্টে অংশ নিতে পেরেছিলেন। সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। ডেল স্টেইন তাঁর বিখ্যাত অফ-কাটারে তাঁকে বিদেয় করেছিলেন। চারজন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের শতকের কল্যাণে ভারত দল ৬৪৩/৬ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। তবে, হাশিম আমলা’র জোড়া শতক সত্ত্বেও স্বাগতিক দল ইনিংস ও ৫৭ রানে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। এরপর আর তাঁকে দলে খেলানো হয়নি।
দুই বছর দলের বাইরে থাকার পর রাহুল দ্রাবিড় ও ভিভিএস লক্ষ্মণের অবসর গ্রহণের কারণে পুণরায় তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু, শ্রীলঙ্কায় পরবর্তী টেস্ট সফরে তাঁকে দল থেকে বাদ দেয়া হয় এবং বিরাট কোহলি, চেতেশ্বর পুজারা, যুবরাজ সিং ও সুরেশ রায়নাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উপেক্ষার শিকারে পরিণত হলেও ঘরোয়া আসরে দূর্দান্ত খেলতে থাকেন। মনোসংযোগ ও অসম্ভব দম নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাটিং করতে থাকেন। রঞ্জী ট্রফিতে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে অবস্থান করছেন। ২০১০-১১ মৌসুমে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। ১১১ গড়ে ১২২৬ রান তুলেছিলেন। রঞ্জী ট্রফি ও আইপিএলে ক্রমাগত সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমনার্থে তাঁকে একদিনের দলে যুক্ত করা হয়।
৪ জুন, ২০১১ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পান। ৩৭ বলে ৪৩ রান তুলে নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। তবে, ঐ সফরে ৩টি ওডিআইয়ে অংশ নিলেও ব্যাট হাতে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। কোন টেস্টে তাঁকে খেলানো হয়নি। দলে আসা-যাবার পালায় অবস্থান করতে থাকেন। ২০১২ সালে ভিভিএস লক্ষ্মণের অবসর গ্রহণের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার জন্যে দলে যুক্ত হন। তবে, পরবর্তী টেস্ট সিরিজ খেলার জন্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দল থেকে বাদ পড়ার বিষয়টিতে কোন কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি। ৩০-এর বয়সে এসে শারীরিক সুস্থতা থাকা সত্ত্বেও আর তাঁকে দলে নিয়ে আসার জন্যে বিবেচনায় আনা হয়নি।
আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের পক্ষে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খেলেন। প্রথম পাঁচটি আসরের সবকটিতেই দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। প্রত্যেকবারই শতাধিক স্ট্রাইক রেটে রান পেয়েছেন। তন্মধ্যে, ২০০৮ সালে এ সংখ্যাটি ১৪৮-এ চলে গিয়েছিল। প্রায়শঃই দলের আপদকালীন সময়ে ভূমিকা রাখতেন ও মারকুটে ভঙ্গীমায় খেলতেন। এ প্রতিযোগিতায় সহস্রাধিক রান পেয়েছেন। ২০১৩-১৪ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় তেমন খেলেননি। এছাড়াও, অন্যান্য প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয়ও তেমন ভালো করেননি। ২০১৪ সালের আইপিএলের আসরে চুক্তিবদ্ধ হননি ও তামিলনাড়ু দল থেকেও প্রত্যাখ্যাত হন। অবশ্য, ২০১৫ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। তবে, কোন খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাননি। খেলায় সুযোগ কমতে থাকায় ২০১৪ সালে বিদর্ভের পক্ষে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। দুই বছর পর হায়দ্রাবাদের অধিনায়ক হিসেবে তাঁকে মনোনীত করা হয়। নভেম্বর, ২০১৬ সালে বলসাদে ছত্তিশগড়ের বিপক্ষে ১৩৪ রানের মনোরম শতক হাঁকান। এ পর্যায়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে দশ সহস্রাধিক রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। সব মিলিয়ে ১৪৫টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৫০ ঊর্ধ্ব গড়ে রান পেয়েছেন।
