১২ ডিসেম্বর, ১৯৬০ তারিখে মোরাতুয়ায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৮২-৮৩ মৌসুম থেকে ১৯৯৫-৯৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে মোরাতুয়া স্পোর্টস ক্লাব ও নন্দেস্ক্রিপ্টস ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
শ্রীলঙ্কা দলে খেলাকালীন দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট ছিলেন। বামহাতে কার্যকর ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি দক্ষ উইকেট-রক্ষক ছিলেন। প্রায়শঃই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁকে মাঠে নামতে হতো। নতুন বলে প্রতিরক্ষামূলক ব্যাটিং করতেন ও প্রয়োজনে আক্রমণাত্মক স্ট্রোক খেলতেন। স্ট্যাম্পের পিছনে অবস্থান করে পেসারদের বল নিপুণতার সাথে গ্লাভসবন্দী করতেন।
১৯৮৩ থেকে ১৯৮৮ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে নয়টিমাত্র টেস্ট ও ২০টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে সোমাচন্দ্র ডি সিলভা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে নিউজিল্যান্ড সফর করেন। ১১ মার্চ, ১৯৮৩ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। তবে, তাঁর অভিষেক পর্বটি বেশ বিবর্ণময় ছিল। ব্যাট হাতে মাত্র ৮ ও ০ রান তুলেন এবং গ্লাভস হাতে দুইটি ক্যাচ মুঠোয় পুড়েন। স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। এছাড়াও, এটি নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম ঘটনা হিসেবে উপর্যুপরী দুই-টেস্ট জয় ছিল।
নিউজিল্যান্ডে পরবর্তী সফরে তাঁকে পাশ কাটিয়ে গাই ডি অলউইজকে প্রাধান্য দেয়া হয়। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে উইকেট-রক্ষণের দায়িত্ব লাভের প্রশ্নে তাঁর সাথে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে শ্রীলঙ্কা দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। আঘাতের কারণে গাই ডি অলউইজের পরিবর্তে দলে যুক্ত হন। লর্ডসে ড্র হওয়া টেস্টে নিজস্ব দ্বিতীয় খেলায় অংশ নেন ও সুযোগের সদ্ব্যবহারে তৎপরতা দেখান। ইনিংস উদ্বোধনে নেমে অপরাজিত ১০২ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করার গৌরব অর্জন করেন। ১২ চারের মারে ২৫৫ বল মোকাবেলান্তে এ রান তুলেন। ক্রিকেটের স্বর্গভূমিতে এটিই সফরকারী দলের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে ছিল। এরপূর্বে প্রথম ইনিংসে সতীর্থ সিদাথ ওয়েতিমুনি ও দিলীপ মেন্ডিস শতক হাঁকান। এরপর, দ্বিতীয় ইনিংসে বেশ শান্তচিত্তে ক্রিজ থেকে নিরাপদে ফিরে আসেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন।
চমৎকার অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে ভারতের বিপক্ষে পরবর্তী টেস্ট সিরিজ খেলার সুযোগ পান। এসএসসিতে সিরিজের প্রথম টেস্টে নয় ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করে ড্র হওয়া টেস্টে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। দ্বিতীয় টেস্টে নিজেকে আরও উঁচুতে নিয়ে যান। অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। ১১১ রান, ৮ ক্যাচ ও ১ স্ট্যাম্পিং করে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসের প্রথম টেস্টে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেন। ২১ ক্যাচ ও ১ স্ট্যাম্পিং করে সবমিলিয়ে ২২টি ডিসমিসাল ঘটান ও অদ্যাবধি এক সিরিজের সর্বাধিক ডিসমিসালের শ্রীলঙ্কান রেকর্ড গড়েন।
এরপর থেকে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে ভাটা পড়তে থাকে। নতুন বলে হিমশিম খাবার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন উইকেট-রক্ষকের মর্যাদা হারান। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ শেষে দল নির্বাচকমণ্ডলী বিকল্প খেলোয়াড়দেরকে অগ্রাধিকার দিতে থাকেন। ১৯৮৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটিমাত্র টেস্টে পুণরায় দলে ফিরে এসেছিলেন। ঐ বছর রঞ্জন মাদুগালে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফর যান। ২৫ আগস্ট, ১৯৮৮ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১ ও ১৬ রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। তবে, রবি রত্নায়েকের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন স্বত্ত্বেও স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রশাসনের দিকে ধাবিত হন। এক পর্যায়ে শ্রীলঙ্কা দলের দল নির্বাচকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ৪ মে, ২০১২ তারিখে এ দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন।
