|

এস শ্রীশান্ত

৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩ তারিখে কেরালার কথামঙ্গলমে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ‘গপু’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ২০০২-০৩ মৌসুম থেকে ২০১২-১৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে কেরালা ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ওয়ারউইকশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, এশীয় একাদশ, কিংস ইলাভেন পাঞ্জাব, কোচি তুস্কার্স কেরালা ও রাজস্থান রয়্যালসের পক্ষে খেলেছেন।

প্রতিভাবান ফাস্ট বোলারের মর্যাদা পান। তবে, অচিরেই ক্রিকেটবিহীন সত্ত্বা হিসেবে তাঁর অহংবোধ বড় ধরনের শত্রুতে পরিণত হয়ে পড়ে। তাঁর ফাস্ট বোলিং সম্মোহনের পর্যায়ে উপনীত হয় ও বোলিংয়ের এক পর্যায়ে দলে জয়ের ভিত্তি এনে দিতেন। লেগ-স্ট্যাম্পের দিকে সুইং করাতে পারতেন ও অফ-স্ট্যাম্পের শীর্ষে আঘাত হানতে দক্ষ ছিলেন। মসৃণ বোলিং ভঙ্গীমা নিয়ে অগ্রসর হতে। বল অবমুক্তকরণের পূর্বে সিমের অবস্থান উঁচুতে নিয়ে কব্জী বরাবর রাখতেন।

২০০৫ থেকে ২০১১ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ২৭ টেস্ট, ৫৩টি ওডিআই ও ১০টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ২৫ অক্টোবর, ২০০৫ তারিখে নাগপুরে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন।

২০০৫-০৬ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ১ মার্চ, ২০০৬ তারিখে নাগপুরে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৪/৯৫ ও ০/৩৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ম্যাথু হগার্ডের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

২০০৯-১০ মৌসুমে নিজ দেশে কুমার সাঙ্গাকারা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২৪ জুন, ২০০৯ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী উপহার দেন। খেলায় তিনি ৫/৭৫ ও ১/৪৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৪৪ রানের ব্যবধানে জয় পায় এবং তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। ঐ টেস্টে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০১১ সালে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৮ আগস্ট, ২০১১ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ৩/১২৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ০ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ইয়ান বেলের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৮ রানে জয় পেয়ে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ তারিখে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের খেলা গড়াপেটা বিতর্কের সাথে যুক্ত থাকায় বিসিসিআই কর্তৃক আজীবন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন। এরফলে ক্রিকেট বিশ্বে সিম ও সহজাত আউট-সুইঙ্গারে পারদর্শী ফাস্ট বোলারের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে।

ভারতের মাটিতে একদিনের আন্তর্জাতিকে অ্যান্ড্রু সায়মন্ডস প্রভূত্ব দেখালেও তাঁর বলে কট এন্ড বোল্ড হয়েছিলেন। জোহানেসবার্গে আন্দ্রে নেল ছক্কা হাঁকালেও পরের বলেই শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। জন্মদিনের তাৎক্ষণিক নৃত্যে প্রত্যেকেই হতবাক হয়ে পড়েছিলেন।

জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক পর্যায়ে ৫/৪০ লাভ করেছিলেন। হাশিম আমলাকে হতবিহ্বল করে দিয়েছিলেন। লেগ-স্ট্যাম্পের দিকে আসা বলে কিছুটা দেরীতে আসলে ব্যাটের প্রান্ত স্পর্শে দ্বিতীয় স্লিপে চলে যায়। জ্যাক ক্যালিসকেও একইভাবে বিদেয় করেন।

অদ্ভূতভাবে খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। অসম্ভব উচ্চতায় আরোহণের পরপরই বেশ নিচেরদিকে খেলার মানকে নিয়ে যান। আরও একটি বিতর্কিত ঘটনায় নিজেকে জড়ান। ২০০৮ সালে মোহালিতে আইপিএলের খেলায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হরভজন সিংয়ের সাথে ঝগড়া করেন। শিশুসূলভ আচরণের বিষয়টি পরবর্তীতে সংবাদ শিরোনামে পরিণত হয়।

২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় ম্যাথু হেইডেনকে বোল্ড করে বিরাটভাবে উৎফুল্ল হন। তাঁকে বিদেয় করার পূর্বে পিচে দুই হাতে আঘাত করেছিলেন। তাঁর এ আগ্রাসী প্রতিক্রিয়া ক্রিকেট বিশ্বে অনেকটা নতুন কিছু দেখার ন্যায় ছিল।

তারকা ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরতে বেশ ভালোবাসতেন। চ্যালেঞ্জার ট্রফিতে শচীন তেন্ডুলকরকেও এর বাইরে রাখেননি। এর খেসারতস্বরূপ শচীন তেন্ডুলকর কেরালার গতিদানবের বল থেকে দুইটি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন।

গ্রায়েম স্মিথের সাথে মৌখিক বিবাদে জড়ান। এমএস ধোনি সম্ভবতঃ প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তাঁর আচরণের বিষয়ে জনসমক্ষে প্রকাশ করেছিলেন। এক সময়ে ক্রিকেট মাঠের বাইরের দিকে তাঁর চলে যাবার বিষয়ে জোড়ালো চিৎকারের মাধ্যমে সতর্ক করেছিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্টে মিড-অফের অনেক বাইরে অবস্থান করলে এমএস ধোনি হতাশ হয়ে পড়েন। তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, ‘শ্রীশান্ত সামনে আস। বান্ধবীর পিছনে থেকো না।’

২০১৬ সালে বিজেপিতে যোগদান করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ভুবনেশ্বরী কুমারী নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।

Similar Posts

  • | | |

    রয় ডায়াস

    ১৮ অক্টোবর, ১৯৫২ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, রেফারি ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুম থেকে ১৯৯১-৯২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে কলম্বো ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৭৯ থেকে…

  • |

    মাধব আপ্তে

    ৫ অক্টোবর, ১৯৩২ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৫০-এর দশকে ভারতের সদস্যরূপে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছোটাতেন। খেলোয়াড়ী জীবনে তেমন কিছু করতে না পারলেও কেবলমাত্র ড. ডিবি দেওধর ও শচীন তেন্ডুলকরের সাথে একত্রে খেলে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।…

  • | | |

    চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত

    ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৬১ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও কোচ। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দর্শনীয় স্ট্রোক খেলতেন ও দক্ষ উইকেট-রক্ষক হিসেবে সুনাম ছিল তাঁর। ১৯৭৯-৮০ মৌসুম থেকে ২০০০-০১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয়…

  • | | |

    জেরেমি কোনি

    ২১ জুন, ১৯৫২ তারিখে ওয়েলিংটনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মজবুত গড়নের অল-রাউন্ডার ছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, স্লিপ অঞ্চলে ফিল্ডিংয়ে সবিশেষ পারদর্শী ছিলেন। নিউজিল্যান্ড দলে স্বল্প সময়ের জন্য অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করলেও বেশ সফল ছিলেন। গড়পড়তা নিউজিল্যান্ডীয় বালকদের সাথে তাঁর শৈশবকালও তেমন বৈচিত্র্যময় ছিল না। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে রাগবি খেলায় জড়িয়ে…

  • | | |

    অরবিন্দ ডি সিলভা

    ১৭ অক্টোবর, ১৯৬৫ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শীতার স্বাক্ষর রেখেছেন। শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়কত্ব করেছেন। পিতা স্যাম তাঁর উপযোগী বিদ্যালয় খুঁজে বের করতে বেশ হিমশিম খেয়েছিলেন। অবশেষে ডিএস সেনানায়েকে কলেজ আরআইটি অ্যালিসের অধ্যক্ষকে প্রথম গ্রেডে ভর্তি করাতে সক্ষম হন। খুব…

  • | | |

    অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার

    ২৮ এপ্রিল, ১৯৬৮ তারিখে কেপ প্রদেশের কেপটাউন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে বামহাতে ইনিংসে উদ্বোধনে নামতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ফ্লাওয়ার ভ্রাতৃদ্বয়ের মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠ। ‘পেটালস’ ডাকনামে পরিচিত অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী।…