|

দিলীপ সরদেশাই

৮ আগস্ট, ১৯৪০ তারিখে পর্তুগীজ অধ্যূষিত গোয়ার মারগাঁওয়ে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

১৯৬০-৬১ মৌসুম থেকে ১৯৭২-৭৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বোম্বের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কিশোর বয়সে অধ্যয়নের লক্ষ্যে বোম্বেতে চলে আসেন। গোয়ার একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ভারত দলে খেলেছেন। ব্যাটসম্যান ছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেটে নবজাগরণের ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর সন্তান রাজদীপ বলেন যে, ১৭ বছরের পূর্ব-পর্যন্ত উপযুক্ত টার্ফ উইকেটে তিনি খেলেননি। ২১ বছর বয়সে উঁচু স্তরের ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

১৯৫৯-৬০ মৌসুমে বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যরূপে রোহিতন বাড়িয়া ট্রফিতে অংশ নেন। এরফলে, নভেম্বর, ১৯৬০ সালে সফররত পাকিস্তানী একাদশের বিপক্ষে খেলার জন্যে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় দলের সদস্যরূপে অংশগ্রহণের জন্যে মনোনীত হন। পুনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয়। ফজল মাহমুদের ন্যায় তারকা বোলারের বিপক্ষে ৮৭ রানের ইনিংস খেলেন। পরবর্তীতে, বোর্ড সভাপতি একাদশের প্রতিনিধিত্ব করে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। বোম্বের পক্ষে রঞ্জী ট্রফিতে অংশ নেয়ার পূর্বেই এ সফলতা পেয়েছিলেন।

১৯৬১ থেকে ১৯৭২ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৩০ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৬১-৬২ মৌসুমে নিজ দেশে টেড ডেক্সটারের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১ ডিসেম্বর, ১৯৬১ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ফারুক ইঞ্জিনিয়ারের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় এগুতে থাকে। একমাত্র ইনিংসে ২৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন।

১৯৬২ সালে নরি কন্ট্রাক্টরের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে প্রথমবারের মতো বিদেশ সফরে যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দলের স্বার্থক সফরে তিন শতক সহযোগে ৬৪২ রান তুলে নিজেকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। ওয়েস হল ও চার্লি গ্রিফিথের ন্যায় বোলারের বিপক্ষে খেলার জন্যে যে-কোন তরুণ ক্রিকেটারের জন্যে অগ্নিপরীক্ষা ছিল। ঐ সফরে চার্লি গ্রিফিথ নিজেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলার হিসেবে চিত্রিত করেছিলেন। কিন্তু, প্রথমবারের মতো তাঁর বল মোকাবেলায় যথেষ্ট সচেতনতার পরিচয় দেন। তাঁর বাউন্সার থেকে নরি কন্ট্রাক্টর গুরুতর আহত হলে শূন্যতা পূরণে স্বেচ্ছায় ব্যাটিং উদ্বোধনে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে আসেন। সিরিজের বাদ-বাকী টেস্টগুলোয়ও এ ধারা অব্যাহত থাকে।

১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে নিজ দেশে জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২ মার্চ, ১৯৬৫ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে খেলেন। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ১/০ থাকাকালীন রিটায়ার্ড হার্ট হলে মাঠের বাইরে চলে যান। অবশ্য, প্রথম ইনিংসে ২২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৭২-৭৩ মৌসুমে নিজ দেশে টনি লুইসের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২০ ডিসেম্বর, ১৯৭২ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ১২ ও ১০ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়েছিলেন। সফরকারীরা ৬ উইকেটে জয় পেয়ে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

মাকারান্ড ওয়াইনগঙ্কা তাঁর ‘গাটস এন্ড গ্লোরি’ শীর্ষক গ্রন্থে দিলীপ সরদেশাই সম্পর্কে দারুণ তথ্য প্রকাশ করেছিলেন। ভবিষ্যতের পত্নী নন্দিনী পন্তের সাথে পরিচয়কালীন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেটার ছিলেন। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে তিনি তাঁর প্রথম বিদেশ সফরকালীন প্রত্যেক দিনই চিঠি বিনিময় করতেন। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফর থেকে দেশে ফিরে আসাকালীন তাঁরা ৯০টি চিঠি বিনিময় করেছিলেন। নন্দিনী বলেছেন যে, আমার ভালোবাসার চিঠিগুলোর অর্ধেকই তাঁর ইংরেজী বানানের বিষয়ে ব্যয় করেছিলেন। তবে, তাঁদের ভালোবাসা বেশ গভীর থেকে গভীরতর ছিল। সেখান থেকেই আমাকে শিক্ষকতার দিকে নিয়ে যেতে সহায়তা করে। ২ জুলাই, ২০০৭ তারিখে ৬৬ বছর ৩২৮ দিন বয়সে মুম্বইয়ে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • | |

    জো ডার্লিং

    ২১ নভেম্বর, ১৮৭০ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন অসমন্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যবসায়ী জন ডার্লিং ও ইসাবেলা দম্পতির ষষ্ঠ পুত্র ছিলেন। ১৮৮৩ থেকে ১৮৮৪ সাল পর্যন্ত মেলবোর্নভিত্তিক স্কচ কলেজে অধ্যয়ন করেন। এরপর, অ্যাডিলেডভিত্তিক প্রিন্স আলফ্রেড…

  • |

    আরশাদ খান

    ২২ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের পেশাওয়ারে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। মূখ্যতঃ দুইটি কারণে নিজেকে অফ-স্পিনারের মর্যাদার আসনে নিয়ে যেতে পারেননি। প্রথমতঃ পেশাওয়ার থেকে এসেছেন ও এলাকাটি ফাস্ট বোলারদের আস্তানা হিসেবে পরিচিত। দ্বিতীয়তঃ অন্যদের…

  • | |

    ডব্লিউজি গ্রেস

    ১৮ জুলাই, ১৮৪৮ তারিখে ব্রিস্টলের ডাউনএন্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত শৌখিন ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়াও, ইংল্যান্ডের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। সন্দেহাতীতভাবেই সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারদের প্রতীকি খেলোয়াড়ের পরিচিতি লাভ করেছেন। পরিচিতিমূলক দাঁড়ি রাখার পাশাপাশি অসম্ভব ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে ঊনবিংশ ও বিংশ শতকের সূচনালগ্নে অন্যতম…

  • | | |

    জন আর্নল্ড

    ৩০ নভেম্বর, ১৯০৭ তারিখে অক্সফোর্ডের কাউলি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী পেশাদার ক্রিকেটার, আম্পায়ার ও রেফারি ছিলেন। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে স্লো বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৩০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯২৯ থেকে ১৯৫০ সময়কাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।…

  • | |

    জসপ্রীত বুমরা

    ৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে গুজরাতের আহমেদাবাদে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করে থাকেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জসবীর সিং ও দলজিৎ বুমরা দম্পতির সন্তান। সাত বছর বয়সে পিতৃহারা হন। মাতা দলজিৎ বুমরা বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল। জুলিকা নাম্নী…

  • | | | |

    জন অ্যাম্বুরি

    ২০ আগস্ট, ১৯৫২ তারিখে লন্ডনের পেকহাম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। দলে মূলতঃ বোলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হতেন। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘এম্বার্স’, ‘আর্নি’ কিংবা ‘নাকল’ ডাকনামে পরিচিত জন এম্বুরি ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। পেকহাম ম্যানর সেকেন্ডারি স্কুলে অধ্যয়ন…