২ মে, ১৯০১ তারিখে সারের মিলফোর্ড হিদ হাউজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী শৌখিন ও বিখ্যাত ক্রিকেটার এবং প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। ইংল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
কভেন্ট্রিভিত্তিক রাজা অষ্টম হেনরি স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন রয়্যাল এয়ার ফোর্সের পাইলট অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ওয়ারউইকশায়ার ও ওরচেস্টারশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯২৩ থেকে ১৯৫১ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। অবসর গ্রহণকালীন তিনি ৮৫টি শতরান করেছিলেন।
অধিনায়ক হিসেবে তেমন জনপ্রিয়তা পাননি। দলীয়সঙ্গী ও প্রতিপক্ষীয় খেলোয়াড়দের কাছে সম্মানীয় হলেও কিছু শূন্যতা রেখে গেছেন। ১৯৩৪ সালে ডার্বিশায়ারের লেগ-স্পিনার টমি মিচেল তাঁর অধিনায়কত্বে বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। ‘আপনি শীর্ষ পর্যায়ের সৈনিকদেরকে সীমানায় আটকে রাখার যোগ্যতাসম্পন্ন নন’ – মন্তব্য করেছিলেন।
১৯২৭ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৪০ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে, ১৮ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে অন্যতম সম্মানীয় ক্রিকেটার ছিলেন। ১৯২৭-২৮ মৌসুমে রনি স্ট্যানিফোর্থের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেন। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯২৭ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ওয়ালি হ্যামন্ড, জিওফ্রে লেগ, ইয়ান পিবলস, রনি স্ট্যানিফোর্থ ও ইউয়ার্ট অ্যাস্টিলের সাথে একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে হেনরি প্রমিৎজের বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। এছাড়াও, ০/৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ১০ উইকেটে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ২১ জানুয়ারি, ১৯২৮ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে এইচডব্লিউ টেলরকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ০/৫। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৩/৪ ও ০/৩১ লাভ করেন। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে সিরিল ভিনসেন্টের বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
এরপর, ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৮ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২২ ও ২০* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত ৩ ও দলীয় ৪৭/৩ থাকা অবস্থায় রিটায়ার্ড হার্ট হন। তবে, দলীয় সংগ্রহ ৮৯/৫ থাকাকালে পুণরায় মাঠে ফিরে আসেন। এছাড়াও, ০/১৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে ২-২ ব্যবধানে সিরিজ শেষ করতে সক্ষম হয়।
১৯৩২-৩৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফরে এমসিসি দলের সদস্যরূপে গমন করেন।
১৯৩৩ সালে নিজ দেশে জ্যাকি গ্র্যান্টের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১২ আগস্ট, ১৯৩৩ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে দলের একমাত্র ইনিংসে ১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ টেস্টে স্বাগতিক দল ইনিংস ও ১৭ রানের ব্যবধানে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
১৯৩৪ সালে নিজ দেশে বিল উডফুলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১৮ আগস্ট, ১৯৩৪ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ১৭ ও ২২ রান সংগ্রহ করে উভয় ক্ষেত্রেই ক্ল্যারি গ্রিমেটের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/২৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ৫৬২ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পেলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
১৯৩৫ সালে নিজ দেশে হার্বি ওয়েডের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৫ জুন, ১৯৩৫ তারিখে নটিংহামে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৭৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১১৩ রান অতিক্রম করেন। ঐ টেস্টে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে দলের একমাত্র ইনিংসে ১৪৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি আমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ২৯ জুন, ১৯৩৫ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৫৩ ও ১৬ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৯ ও ০/২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ১৫৭ রানে পরাজয়বরণ করলে স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
এছাড়াও, ১৯৩৬-৩৭ মৌসুমে গাবি অ্যালেনের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে পুণরায় অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৭ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩৮ ও ৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ইনিংস ও ২০০ রানে পরাভূত হলে সফরকারীরা ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
টেস্টগুলো থেকে দুই শতক সহযোগে ৩১.৭০ গড়ে ১৮৩৯ রান তুলেছেন। সব মিলিয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৪০.০৪ গড়ে ৩৯৪০৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। বোলার হিসেবে তিনি মাঝে-মধ্যে বোলিংয়ে অগ্রসর হতেন। শুরুতে মিডিয়াম-পেস বোলিং করলেও পরবর্তীতে অফ-স্পিন বোলিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন। বলে সুইং আনয়ণ করতে পারতেন ও থিতু হয়ে আসা জুটি ভাঙ্গতেই মূলতঃ বোলিং করতেন। টেস্টে ৩৫.৬৭ গড়ে ১৮ উইকেট পেলেও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৩২.৮৪ গড়ে ৯০১টি উইকেটের সন্ধান পেয়েছেন। তরুণ বয়সে সীমানা বরাবর বিরামহীন ফিল্ডিং করতেন।
১৯৫০ ও ১৯৫১ সালে খেলার পাশাপাশি ইংল্যান্ড দলের নির্বাচকের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫০-৫১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া গমনার্থে ইংল্যান্ড দল থেকে বিল এডরিচের বাদ পড়ার ক্ষেত্রে তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দলের জয় পালনকালে মিডলসেক্সের ব্যাটসম্যান রাত্রে বেশ গোলমেলে পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন ও পাশের কক্ষেই তিনি অবস্থান করেছিলেন। ১৯৫৩ সালের অ্যাশেজ করায়ত্ত্ব ও ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে তা অক্ষত রাখার ক্ষেত্রে দল নির্বাচন করেছিলেন।
১৯৩০ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৩৬ সালে ‘দি ইন্স এবং আউটস অব ক্রিকেট’ শিরোনামীয় গ্রন্থ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে, ১৯৫১ সালে ‘থ্রি স্ট্রেইট স্টিক্স’ শিরোনামের আত্মজীবনী রচনায় অগ্রসর হন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন মোলি উইকস নাম্নী এক রমণীর সাথে পরিচিত হন। ১০ নভেম্বর, ১৯৪২ তারিখে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। এ দম্পতির এক পুত্র সন্তান ছিল।
২০ এপ্রিল, ১৯৯৫ তারিখে কর্নওয়ালের ত্রুরো এলাকায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ বছর ৩৫৩ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। লন্ডনের সেন্ট জোন্স উড চার্চে তাঁর শবানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। ১৯৯৬ সালের হিসেব অনুযায়ী মৃত্যুকালীন £২৬৫,৯৫৯ পাউন্ড-স্টার্লিং মূল্যমানের সম্পদ রেখে যান। ইয়র্কশায়ারের প্রধান ও পেশাদার ক্রিকেটার লেন হাটন তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘আমার জানা মতে, তাঁর ন্যায় অন্য কেউ ক্রিকেটের প্রতি সুগভীর অনুরাগ কিংবা জটিল খেলাটি সম্পর্কে অধিক জ্ঞান রাখতে পারেননি। ত্রিশের দশকে ইয়র্কশায়ার দলের কাছে বেশ সুপরিচিত ছিলেন। স্বীয় দক্ষতা, যোগ্যতা, দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে অগণিত রান তুলেছেন।’
