|

যশস্বী যশওয়াল

২৮ ডিসেম্বর, ২০০১ তারিখে উত্তরপ্রদেশের ভাদোহির সূর্য্যবন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। বামহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মুম্বই ও বহিঃভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, রাজস্থান রয়্যালস, ভারত ‘এ’ অনূর্ধ্ব-১৯, ভারত ‘বি’, ভারত অনূর্ধ্ব-২৩ দলের পক্ষে খেলেছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকাকালীন তাঁর মাঝে নির্ভিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। আইপিএলের পাশাপাশি ২০২০-এর শুরুরদিকে ঘরোয়া আসরে মুম্বইয়ের পক্ষে তাঁর রেকর্ডও যথেষ্ট ভালো ছিল।

১২ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলতে উত্তরপ্রদেশের গ্রামীণ এলাকা ছেড়ে মুম্বইয়ে পাড়ি জমান। তাবু খাঁটিয়ে ঘুমোতেন ও পানি পুরি বিক্রয় করে হাত খরচ মেটাতেন। আজাদ ময়দানে স্থানীয় কোচ জ্বালা সিংয়ের সুনজরে পড়েন ও তাঁকে দুই বছর স্বীয় ছত্রচ্ছায়ায় রাখেন। এভাবেই তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের যাত্রা শুরু হয়।

অক্টোবর, ২০১৯ সালে ঘরোয়া ৫০-ওভারের প্রতিযোগিতা বিজয় হাজারে ট্রফিতে ১১৩, ২২, ১২২, ২০৩ ও ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। কেবলমাত্র ঐ প্রতিযোগিতায় মুম্বইয়ের বিদেয়ের ফলে তাঁর এ অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রধান ব্যাটিং চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। ঐ প্রতিযোগিতায় তাঁর দল রানার্স-আপ হলেও তিনি প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার লাভ করেন। ফলশ্রুতিতে, আইপিএলে বড় ধরনের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। রাজস্থান রয়্যায়লস কর্তৃপক্ষের সাথে ₹২.৪ কোটি রূপীতে (প্রায় $৩৩৮,০০০ মার্কিন ডলার) চুক্তিবদ্ধ হন।

ঘরোয়া আসরের বোলার ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের খেলায় তাঁর সাফল্যের মসৃণতা এমনিতেই আসেনি। প্রচণ্ড পরিশ্রম ও দীর্ঘ সময় ধরে নিজের কৌশল নিয়ে কাজ করতেন। রয়্যালস একাডেমি কোভিডের পর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে তাঁর মাঝে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। ২০২১-২২ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় নিজস্ব প্রথম আসরে উপর্যুপরী তিনটি শতক হাঁকিয়ে মুম্বইকে চূড়ান্ত খেলায় নিয়ে যান।

২০২২ সালের আইপিএলের আসরেও রয়্যালসে থেকে যান। এ পর্যায়ে জোস বাটলারের সাথে ক্ষুরধার উদ্বোধনী জুটি গড়েন। ২০২৩ সালের আইপিএলে মাত্র ১৩ বলে দ্রুততম অর্ধ-শতক হাঁকিয়ে প্রতিযোগিতার ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়েন।

২০২৩ সাল থেকে ভারতের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ঐ বছর রোহিত শর্মা’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ১২ জুলাই, ২০২৩ তারিখে রোজিওতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ঈশান কিষাণের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। রোহিত শর্মা’র (১০৩) সাথে প্রথম উইকেটে শতরানের জুটি গড়েন। এ দুজন ২৬ ওভারে ১২১ রান তুলেন। ১৭১ রানের ইনিংস খেলে বিদেয় নেন। এরফলে, ভারতের পক্ষে টেস্ট অভিষেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের দূর্দান্ত বোলিংয়ের সহায়তা নিয়ে তাঁর দল ইনিংস ও ১৪১ রানে জয়লাভ করে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

দ্বিতীয় টেস্টেও ভালো খেলেন। ২০ জুলাই, ২০২৩ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৫৭ ও ৩৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মোহাম্মদ সিরাজের অসামান্য বোলিংয়ের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। ঐ সিরিজে তাঁর দল ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।

২০২৩-২৪ মৌসুমে নিজ দেশে বেন স্টোকসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া পুরো সিরিজে অসাধারণ ব্যাটিংশৈলী উপহার দিয়েছেন। ৭ মার্চ, ২০২৪ তারিখে ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের পাশাপাশি কুলদীপ যাদবের অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে ঐ টেস্টে তাঁর দল ইনিংস ও ৬৪ রানে জয়লাভসহ ৪-১ ব্যবধানে সিরিজে জয় করে নেয়। টেস্টগুলোয় তিনি ৮০, ১৫; ২০৯, ১৭; ১০, ২১৪*, ৭৩, ৩৭; ৫৭ রান তুলেন। সবমিলিয়ে ঐ সিরিজে ৭১২ রান সংগ্রহ করেন। তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে রোহিত শর্মা’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখের বক্সিং ডেতে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৭ ও ৫ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ন্যান্ড্রি বার্গারের ছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ডিন এলগারের অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৩২ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

২০২৪-২৫ মৌসুমে নিজ দেশে টম ল্যাথামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে ওয়াংখেড়েতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে ৩০ ও ৫ রান সংগ্রহ করেন। তবে, এজাজ প্যাটেলের স্মরণীয় বোলিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা মাত্র ২৫ রানে জয়লাভ করলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

২০২৫ সালে শুভমান গিলের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। ৩১ জুলাই, ২০২৫ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২ ও ১১৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মোহাম্মদ সিরাজের বল হাতে নিয়ে অপূর্ব বোলিং কৃতিত্বের কারণে স্বাগতিকরা নাটকীয়ভাবে ৬ রানে পরাভূত হলে সিরিজটি ২-২ ব্যবধানে শেষ হয়।

Similar Posts

  • | |

    রমেশ কালুবিতরানা

    ২৪ নভেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলছেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ক্ষুদ্রাকায় গড়নের অধিকারী তিনি। ‘কালু’ ডাকনামে পরিচিতি পান। সীমিত-ওভারের খেলায় ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ণে নিজেকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। এ পর্যায়ে বোলারদের উপর চড়াও হতেন, সর্বশক্তি প্রয়োগে দলের রানকে স্ফীততর করার…

  • |

    ওয়াসিম জাফর

    ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। ২০০০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম থেকে ২০১৯-২০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া পর্যায়ের ভারতীয় ক্রিকেটে মুম্বই, বিদর্ভ ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, আবাহনী লিমিটেড, রয়্যাল…

  • |

    রোল্যান্ড পোপ

    ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৬৪ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের অ্যাশফিল্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে স্লো বোলিং করতেন। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষকের ভূমিকায় তাঁকে অবতীর্ণ হতে হতো। ১৮৮০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। হোবার্টভিত্তিক হাচিন্স স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। বিদ্যালয় একাদশে ব্যাটসম্যান ও বোলারের দায়িত্ব পালন করতেন। পরবর্তীতে, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের…

  • |

    আইজাক বাইস

    ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৫ তারিখে কেপ কলোনির সমারসেট ইস্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯২০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯২১-২২ মৌসুম থেকে ১৯২৪-২৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর…

  • | |

    হান্সি ক্রোনিয়ে

    ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে অরেঞ্জ ফ্রি স্টেটের ব্লোমফন্তেইনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতার স্বাক্ষর রেখেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুম থেকে ১৯৯৯-২০০০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ফ্রি স্টেট ও…

  • | | | |

    মনসুর আলী খান পতৌদি

    ৫ জানুয়ারি, ১৯৪১ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মধ্যপ্রদেশের ভোপালে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার, প্রশাসক ও ম্যাচ রেফারি ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। মজা করে তাঁকে ‘ভোপালের নবাব’ হিসেবে ডাকা হতো। নীল রক্ত বহমান, অক্সফোর্ডের শিক্ষিত, দর্শনীয়, বুদ্ধিমান হিসেবে…