|

ইলিয়াস সানি

১ জানুয়ারি, ১৯৮৬ তারিখে ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংয়ে অভ্যস্ত। পাশাপাশি, সীমানা অঞ্চলে দক্ষ ফিল্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ২০১০-এর দশকে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

আধুনিক ধাঁচের ক্রিকেটার হিসেবে শুধুমাত্র একমূখী বোলিংয়ের দিকে ধাবিত হননি। কার্যকরী ব্যাটসম্যান হিসেবে যে কোন অবস্থানে থেকে ব্যাটিং করতে পারেন। এছাড়াও, মাঠে প্রাণবন্ত ফিল্ডিং করতেন। মূলতঃ বামহাতে স্পিন বোলিংয়ে পারদর্শী। তিন শতাধিক প্রথম-শ্রেণীর উইকেট দখল করেছেন। বলের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার পাশাপাশি ঘূর্ণায়মান ভঙ্গীমায় বলকে বাঁক খাইয়ে ব্যাটসম্যানদের প্রলুদ্ধ করার মাধ্যমে সফলতা পেয়েছেন। রৌদ্রোজ্জ্বল পিচে অধিকাংশ স্পিনারদের তুলনায় বলকে যথেষ্ট উপরে ওঠাতে সক্ষমতা দেখিয়েছেন। সচরাচর একদিনের ক্রিকেটের উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। প্রিমিয়ার লীগে প্রায়শঃই বোলিং গড়ে শীর্ষে অবস্থান করেছেন।

চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করলেও শৈশবকাল ঢাকায় অতিবাহিত করেন। পরবর্তীতে ঢাকাভিত্তিক ক্লাব ক্রিকেটের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। ২০০২-০৩ মৌসুমে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৭ দলের পক্ষে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। ২০০৩-০৪ মৌসুম থেকে ২০১৯-২০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে মধ্যাঞ্চল, ঢাকা বিভাগ ও ঢাকা মেট্রোপলিসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বরিশাল বার্নার্সের পক্ষে খেলেছেন।

৪ জানুয়ারি, ২০০৪ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ঢাকা বিভাগের সদস্যরূপে চট্টগ্রাম বিভাগের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে ঢাকার প্রিমিয়ার লীগে অন্যতম নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়ে পরিণত করেন। পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রাম দলের অন্যতম খেলোয়াড়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। সাধারণতঃ নিচেরসারিতে ব্যাটিং করেন। তবে, অনেক সময় চট্টগ্রামের পক্ষে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে দেখা যায় ও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে শতরানের সন্ধান পেয়েছেন। ২০০৬-০৭ মৌসুম শেষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রায় সহস্র রান সংগ্রহ করেছেন। তন্মধ্যে, বরিশাল বিভাগে বিপক্ষে ১৭৬ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস উপহার দিয়েছেন। ৯৭ উইকেট দখল করেছেন। খুলনার বিপক্ষে ৫/৪৬ লাভ করেন।

ঘরোয়া আসরে কয়েক বছর ক্রমাগত সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে দল নির্বাচকমণ্ডলীর সু-নজরে ছিলেন। অবশেষে ২০১০ সালের টি২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ পান। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সদস্যরূপে ছিলেন। সেখানকার নিষ্প্রাণ পিচে অনুষ্ঠিত একদিনের খেলায় নিজের গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরেন। অবশেষে, জাতীয় দলের পক্ষে টি২০ খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ হয়।

২০১১ থেকে ২০১৩ সময়কালে বাংলাদেশের পক্ষে চারটিমাত্র টেস্ট, সমসংখ্যক ওডিআই ও সাতটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ২০১১-১২ মৌসুমে নিজ দেশে ড্যারেন স্যামি’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২১ অক্টোবর, ২০১১ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। নাসির হোসেনের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। প্রথম ইনিংসে ৬/৯৪ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। এরফলে, টেস্ট অভিষেকে বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা বোলারের মর্যাদা পান ও দলকে ১০৬ রানে এগিয়ে থাকতে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ১/৩৪ লাভ করেন। সব মিলিয়ে ঐ খেলায় ১২৮ রান খরচায় ৭ উইকেট দখল করেন। তবে, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে দেবেন্দ্র বিশু’র বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিং শৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

কয়েক মাস পর নিজ দেশে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন। ৩ ডিসেম্বর, ২০১১ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় তিনি এক উইকেট লাভ করেন। দলের অপরিহার্য্য অল-রাউন্ডারে পরিণত হন। নিখুঁত নিশানা বরাবর বল ফেলার পাশাপাশি বেশ বাঁক খাওয়ানোয় দক্ষতা অর্জনের ফলে প্রতিপক্ষীয় ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত হন।

টি২০আই দলে সম্মুখসারির খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৮ জুলাই, ২০১২ তারিখে বেলফাস্টে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০আইয়ে প্রথম খেলেন। নির্ধারিত চার ওভারে একটি মেইডেন ওভারসহ ৫/১৩ পান। ঐ খেলায় তাঁর দল ৭১ রানে জয় তুলে নেয় ও তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। তাঁর এ বোলিং বিশ্লেষণ টি২০আই অভিষেকে সেরা হিসেবে পরিগণিত হয়। তবে, আঘাত ও ছন্দহীনতার কারণে জাতীয় দলে নিয়মিত সদস্যে পরিণত হতে পারেননি। ২০১২-১৩ মৌসুমে মুশফিকুর রহিমের অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ৮ মার্চ, ২০১৩ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। খেলায় ১৬৫ রান খরচ করলেও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। ০/৮৯ ও ০/৭৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে তিলকরত্নে দিলশানের বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। দলীয় অধিনায়কের দ্বি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

Similar Posts

  • |

    কেএল রাহুল

    ১৮ এপ্রিল, ১৯৯২ তারিখে কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। ডানহাতে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি (১.৮০ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ২০১০-১১ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে কর্ণাটক ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, ব্যাঙ্গালোর ব্রিগেডিয়ার্স,…

  • | | | |

    গ্রাহাম গুচ

    ২৩ জুলাই, ১৯৫৩ তারিখে এসেক্সের হুইপস ক্রস এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত পেশাদার ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাশাপাশি, স্লিপ অঞ্চলে দূর্দান্ত ফিল্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘জ্যাপ’ কিংবা ‘গুচি’ ডাকনামে ভূষিত গ্রাহাম গুচ ৬ ফুট…

  • |

    প্রকাশ ভাণ্ডারী

    ২৭ নভেম্বর, ১৯৩৫ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৫০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ঘরোয়া আসরে তারকা খেলোয়াড় ছিলেন। রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতার একটি খেলায় দ্বি-শতকসহ নয় উইকেট দখল করেছিলেন। অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে ভাস্বর ছিল তাঁর জীবন। সর্বদাই…

  • | | |

    এইচডি অ্যাকারম্যান

    ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩ তারিখে কেপ প্রভিন্সের কেপটাউনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৯০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। শীর্ষসারির প্রভাববিস্তারকারী ব্যাটসম্যান ছিলেন। বেশ প্রতিভাবান খেলোয়াড় হলেও দূর্দান্ত সূচনা করলেও নিজের…

  • | |

    রঙ্গনা হেরাথ

    ১৯ মার্চ, ১৯৭৮ তারিখে কুরুনেগালায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণসহ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে কুরুনেগালা ইয়ুথ ক্রিকেট ক্লাব, মুরস স্পোর্টস…

  • |

    মধুসূদন রেগে

    ১৮ মার্চ, ১৯২৪ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পানভেলে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৪০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৪৪-৪৫ মৌসুম থেকে ১৯৫৪-৫৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। একগুঁয়েমিপূর্ণ মনোভাব…