২৩ এপ্রিল, ১৯৭৮ তারিখে ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
‘রোকন’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম থেকে ২০০৭-০৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে ঢাকা মেট্রোপলিসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষে উভয় দলেই একাধিপত্য বজায় রেখেছিলেন। বাংলাদেশের খ্যাতনামা ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাভারভিত্তিক বিকেএসপি’র শুরুরদিকের ছাত্র ছিলেন। এ সময়ে অনেকগুলো বয়সভিত্তিক দলে খেলার সুযোগ পান। ১৯৯৩ সালে বিসিবি একাদশের পক্ষে খেলার সুযোগ পান। পাশাপাশি নিয়মিতভাবে লেগ-স্পিন বোলিং করতেন। এছাড়াও, বিশ্বব্যাপী অনেকগুলো প্রতিনিধিত্বমূলক দলের পক্ষে খেলেছেন। তাসত্ত্বেও, ওডিআই অভিষেকের জন্যে ছয় বছর অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়।
বিভিন্ন বয়সভিত্তিক খেলায় মূলতঃ লেগ-স্পিনার হিসেবে অংশ নিতেন। তবে, ঘরোয়া ক্রিকেটে বোলিংয়ে পারদর্শী ব্যাটসম্যান হিসেবে যুক্ত হন। অন-সাইডে খেলতেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। ১৯৯৮ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সর্বাধিক রান সংগ্রাহকের মর্যাদা পান। ৪৭.৩৩ গড়ে ২৮৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পনেরো বছর বয়সে লিস্ট-এ ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো অংশ নেন।
১৯৯০-এর দশকে অনেক উদীয়মান ব্যাটসম্যানের ন্যায় বাংলাদেশ দলে যুক্ত হন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তেমন খেলার সুযোগ পাননি। তবে, ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে বেশ সদর্পে খেলেছিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে শতক হাঁকানোর কৃতিত্ব প্রদর্শন করে ইতিহাসের পর্দায় নিজেকে ঠাঁই করে নিয়েছেন। বাংলাদেশে ঘরোয়া পর্যায়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা আয়োজনের দুই বছর পূর্বে ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত খেলায় সাউদার্ন কনফারেন্সের বিপক্ষে ১০২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ধীরলয়ে উত্তরণকালে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাসমূহে নিয়মিত সদস্যের মর্যাদা পান। ব্যাটিং ভঙ্গীমায় সমস্যার কবলে পড়ার বিষয়টি দৃশ্যমান ছিল। পেস বোলারদের বিপক্ষে অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। হাতলের নিচে হাত রেখে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। ‘বল দেখে আঘাত করার’ নীতি অবলম্বন করতেন। ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশের অন্যতম উদীয়মান প্রতিভাধর ব্যাটসম্যান হিসেবে তুলে ধরতে বেশ হিমশিম খান। পাশাপাশি, মোহাম্মদ আশরাফুলের উত্থানে স্থান হাতছাড়া হয়ে যায়।
১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সময়কালে বাংলাদেশের পক্ষে সব মিলিয়ে ১৫ টেস্ট ও ২৯টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৬ মার্চ, ১৯৯৯ তারিখে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের শেষদিন অব্যবহৃত হলে ঐদিন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্রুততার সাথে ওডিআই খেলার আয়োজন করা হয়েছিল। এ খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর ওডিআই অভিষেক ঘটে। নিজস্ব তৃতীয় খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। ২৯টি ওডিআইয়ে গড়া খেলোয়াড়ী জীবনে পরবর্তীতে এটিই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসে পরিণত হয়।
সর্বদাই ক্ষুদ্রতর সংস্করণের খেলার উপযোগী সেরা খেলোয়াড়ের তকমা লাভ করেন। তবে, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে কিছু দারুণ ইনিংস খেলে টেস্ট দলে জায়গা করে নিতে সক্ষম হন। ২০০০-০১ মৌসুমে নিজ দেশে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ১০ নভেম্বর, ২০০০ তারিখে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করেন। দলের অন্যান্য সকলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। সফরকারী ভারতের বিপক্ষে ঐ টেস্টে ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামলেও তেমন সুবিধে করতে পারেননি। এরপর অবশ্য জিম্বাবুয়ে, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রত্যেকটি টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অর্ধ-শতরান হাঁকিয়েছিলেন। তন্মধ্যে, তিনটি বিদেশের মাটিতে করেন। কিন্তু, কোন শতরানের সন্ধান পাননি।
২০০২-০৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে খালেদ মাসুদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১৮ অক্টোবর, ২০০২ তারিখে ইস্ট লন্ডনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪০ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৬৮ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ১৮ ও ৭১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। গ্রায়েম স্মিথের অনবদ্য দ্বি-শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ১০৭ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
নিজের সহজাত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারেননি। ওডিআইয়েও এর ব্যতিক্রম ছিল না। খেলায় দূর্বল ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করা সত্ত্বেও ২০০৩ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। এ প্রতিযোগিতার পূর্বেকার ছয় খেলা থেকে মাত্র ১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, চারবার শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। এরপর অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট ও ওডিআই সিরিজে অংশ নেন। ৩ আগস্ট, ২০০৩ তারিখে কেয়ার্নসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দলের বিপক্ষে নিজের সর্বশেষ একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নিয়েছিলেন। এরপূর্বে ১৮ জুলাই, ২০০৩ তারিখে ডারউইনে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ টেস্ট খেলেন। খালেদ মাহমুদের অধিনায়কত্বে সিরিজের প্রথম টেস্টে ০ ও ৩৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ টেস্টে তাঁর দল ইনিংস ও ১৩২ রানে পরাভূত হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে উপেক্ষিত হবার পর আরও চার মৌসুম ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশ নেন। নিউজিল্যান্ডে প্রথম-শ্রেণীর মর্যাদাবিহীন হক কাপে খেলেন। এরপর, স্ব-পরিবারে নিউজিল্যান্ডে অভিবাসিত হন। সেখানে হ্যাভলক নর্থ ক্লাবের পক্ষে খেলোয়াড়-কোচ হিসেবে যুক্ত হন। হাবিবুল বাশার সতীর্থ খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে সর্বকালের সেরা বাংলাদেশী টেস্ট একাদশ গঠন করেন। তন্মধ্যে, তাঁকেও এ তালিকায় ঠাঁই দিয়েছেন।
