| |

রাজিন সালেহ

২০ নভেম্বর, ১৯৮৩ তারিখে সিলেটে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ২০০০-এর দশকে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি, বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

সর্বদাই জেলা কিংবা বিভাগীয় দলের ব্যাটিং স্তম্ভ হিসেবে অলোক কাপালী’র স্ট্রোকপ্লের পাশাপাশি নিজেকে সমুজ্জ্বল রাখতে তৎপর ছিলেন। বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় তারকা খেলোয়াড়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম প্রতিভাবান ক্রিকেটার হিসেবে পরিগণিত হয়েছিলেন। ১৯ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গন জড়িয়ে পড়েন। তৎকালীন বাংলাদেশের কোচ ডেভ হোয়াটমোরের অন্যতম স্নেহধন্য ছিলেন। ২০০০ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে দলের দ্বাদশ খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

দৃষ্টিনন্দন স্ট্রোক খেলতে না পারলেও ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর প্রয়োজনীতার কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। সুদৃঢ় ব্যাটিং কৌশল অবলম্বন ও উজ্জ্বীবনী শক্তির অধিকারী হিসেবে দীর্ঘক্ষণ ব্যাট হাতে ক্রিজের এক প্রান্তে আঁকড়ে থাকতে পারতেন। ব্যাটিংকালীন শরীর ঝাঁকিয়ে উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগে নিজের উপস্থিতির কথা জানান দিতেন ও উইকেটের কাছাকাছি এলাকায় সাহসিকতার সাথে ফিল্ডিং করতেন। বেশ দৌঁড়ুতেও পারতেন। খালেদ মাসুদের ন্যায় শেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় শারীরিক সুস্থতার উপযোগীতার কথাও সতীর্থদের কাছে তুলে ধরেছিলেন।

ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে পূর্বাঞ্চল ও সিলেট বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০০০-০১ মৌসুম থেকে ২০১৮ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন সরব রাখেন। প্রথম মৌসুমেই সিলেটের পক্ষে ৫৬ গড়ে রান তুলে প্রথমবারের মতো নিজের উপস্থিতির কথা জানান দেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একাদশের তাঁকে ঠাঁই দেয়া হয়। অস্ট্রেলীয় একাডেমি একাদশের বিপক্ষে ৮১ রানের ইনিংস খেলে অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যমে সাড়া জাগান।

২০০৩ থেকে ২০০৮ সময়কালে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বমোট ২৪ টেস্ট ও ৪৩টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ২০০০ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন। ঐ মুহূর্তকে ঘিরে রাখতে শর্ট-লেগ অঞ্চলে দণ্ডায়মান থেকে শচীন তেন্ডুলকরের ক্যাচ তালুবন্দী করে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখেন।

তবে, টেস্ট ও ওডিআই অভিষেকের জন্যে তাঁকে আরও তিন বছর অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়। ২০০৩-০৪ মৌসুমে খালেদ মাহমুদের অধিনায়কত্বে পাকিস্তান সফরে উভয় স্তরের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। ২০ আগস্ট, ২০০৩ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। টেস্টে মনোমুগ্ধকর অর্ধ-শতরান করেছিলেন। পাঁচ ঘণ্টায় সংগৃহীত ৬০ রানের কল্যাণে বাংলাদেশ দল আরও পাঁচ ঘন্টা সময় খেলায় টিকে থাকে। প্রথম ইনিংসে ২৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে মোহাম্মদ ইউসুফকে কট এন্ড বোল্ডে বিদেয় করেন। পাশাপাশি, তিনটি ক্যাচসহ একটি রান-আউটের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। স্বাগতিক দল ৭ উইকেটে জয়লাভ করে ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। একই সফরের ৯ সেপ্টেম্বর, ২০০৩ তারিখে মুলতানে ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন।

হাবিবুল বাশারের সাথে ১১৯ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট বিজয়ে দলের নেতৃত্বে ছিলেন। এরফলে, ঐ সময়ে দূর্লভ ৩০০ রানের কোটা অতিক্রমে সক্ষম হয় বাংলাদেশ দল। পরের টেস্টে অর্ধ-শতক হাঁকিয়ে খেলাকে ড্রয়ে পরিণত করেন ও দলের সিরিজ বিজয় নিশ্চিতকরণে প্রভূতঃ ভূমিকা পালন করেন। দুই মৌসুম পর নিজ দেশে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দুইটি অর্ধ-শতক হাঁকান।

২০০৪ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। দলের নিয়মিত অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের বৃদ্ধাঙ্গুলীতে আঘাতের কারণে দলকে পরিচালনা করেছিলেন। এরপর থেক দলে আসা-যাবার পালায় ছিলেন। পরবর্তীতে ওডিআই দলে যুক্ত থাকেন। ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে ওডিআইয়ে ১০৮ রানের নিজস্ব একমাত্র শতক হাঁকিয়েছিলেন। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলের সদস্য ছিলেন। কিন্তু, কোন খেলায় তাঁকে খেলানো হয়নি। ১৩ অক্টোবর, ২০০৬ তারিখে জয়পুরে অনুষ্ঠিত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ওডিআইয়ে অংশ নেন।

২০০৪-০৫ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৯ অক্টোবর, ২০০৪ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ২৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ব্যাট হাতে ৪১ ও ০ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ব্র্যান্ডন ম্যাককালামের অসাধারণ ব্যাটিংনৈপুণ্যে সফরকারীরা ইনিংস ও ৯৯ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

এরপর, আরও সাতটি টেস্ট খেলার সুযোগ পান। তন্মধ্যে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অর্ধ-শতকসহ ভারতের বিপক্ষে দূর্দান্ত খেলেন। তবে, টেস্টে কোন শতক হাঁকাতে পারেননি। ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের শুরুরদিক পর্যন্ত টেস্ট অঙ্গনে কিছুটা সরব ছিলেন। টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার পূর্বেকার সাত ইনিংসের কোনটিতেই ২১-এর অধিক রান ডিঙ্গাতে পারেননি।

২০০৮-০৯ মৌসুমে নিজ দেশে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৫ অক্টোবর, ২০০৮ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের একমাত্র ইনিংসে শূন্য রানে বিদেয় নেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

২০০৮ সালের পর থেকে তাঁকে জাতীয় দলে রাখা হয়নি। তাসত্ত্বেও, সিলেটের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। এরপর, ঢাকাভিত্তিক ক্লাব ক্রিকেটে খেলার পাশাপাশি সিলেটে নিজস্ব ক্রিকেট একাডেমি পরিচালনা করছেন। নাসিরুল আলম, রিয়াজুল হক ও সায়েম আলম-ভ্রাতৃত্রয় প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

Similar Posts

  • | |

    রহমত শাহ

    ৬ জুলাই, পাকতিয়া প্রদেশের জুরমত এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে কার্যকর লেগ-ব্রেক ও গুগলি বোলিং করে থাকেন। আফগানিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তরে অংশগ্রহণ করেছেন। আফগানিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২-১৩ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। পাকিস্তানী ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের…

  • | | |

    লেন হাটন

    ২৩ জুন, ১৯১৬ তারিখে ইয়র্কশায়ারের ফালনেক এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ও পেশাদার ক্রিকেটার এবং প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। ধ্রুপদীশৈলীর ব্যাটসম্যান হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। ১৯৩৪ থেকে ১৯৫৫ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর…

  • | | |

    অ্যান্ডি রবার্টস

    ২৯ জানুয়ারি, ১৯৫১ তারিখে অ্যান্টিগুয়ার আর্লিংস ভিলেজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, প্রশাসক ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি নিচেরসারিতে ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিং করতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। সচরাচর তাঁকে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আধুনিক ফাস্ট বোলিংয়ের জনক হিসেবে পরিচিতি ঘটানো হয়ে থাকে। ছন্দোবদ্ধ দীর্ঘ দূরত্ব নিয়ে বোলিং কর্মে…

  • |

    হার্দিক পাণ্ড্য

    ১১ অক্টোবর, ১৯৯৩ তারিখে গুজরাতের চৌরিয়াশি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিংয়ে সবিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৬ ফুট ১ ইঞ্চি (১.৮৫ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। হিমাংশু পাণ্ড্য ও মালিনী পাণ্ড্য দম্পতির সন্তান। জন্মের পর থেকেই দারিদ্র্যতার…

  • | |

    সেলিম মালিক

    ১৬ এপ্রিল, ১৯৬৩ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ মাঝারিসারিতে আক্রমণধর্মী ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে ডানহাতে স্লো-মিডিয়াম কিংবা ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে অংশ নিতেন। পাকিস্তানের অধিনায়কের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। সহজাত প্রকৃতির প্রতিভাবান ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন। বর্ণাঢ্যময় চরিত্রের অধিকারী থেকে ব্যাটকে বেশ উঁচুতে তুলে ধরতেন। অফ-সাইডে স্কয়ার অঞ্চলে খেলতেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।…

  • |

    জসুভাই প্যাটেল

    ২৬ নভেম্বর, ১৯২৪ তারিখে গুজরাতের আহমেদাবাদে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। অফ-স্পিন বোলিং করতেন। তবে, মিহির বসু তাঁকে সিম সহযোগে বোলিং করার কথা উল্লেখ করেছেন। ১৯৪৩-৪৪ মৌসুম থেকে ১৯৬১-৬২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত…