| | | |

জন অ্যাম্বুরি

২০ আগস্ট, ১৯৫২ তারিখে লন্ডনের পেকহাম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। দলে মূলতঃ বোলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হতেন। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

‘এম্বার্স’, ‘আর্নি’ কিংবা ‘নাকল’ ডাকনামে পরিচিত জন এম্বুরি ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। পেকহাম ম্যানর সেকেন্ডারি স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। সারে দলের পক্ষে খেলার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এরপর মিডলসেক্সে যুক্ত হন। দ্বিতীয় একাদশে দারুণ খেলার সুবাদে খুব দ্রুত চুক্তিবদ্ধ হন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে মিডলসেক্স ও নর্দাম্পটনশায়ার এবং দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বার্কশায়ারের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রেখেছেন। ১৯৭৩ সাল থেকে মিডলসেক্সের পক্ষে খেলতে থাকেন।

সাকলাইন মুশতাকমুত্তিয়া মুরালিধরনের আবির্ভাবের পূর্বে অফ-স্পিনার হিসেবে বেশ সাড়া জাগিয়েছিলেন। সন্দেহাতীতভাবে এ ধরনের বোলিংয়ে অন্যতম সেরার মর্যাদা পেয়েছেন। সারেতে কাকার স্বল্পকালীন অবস্থানের কল্যাণের কারণেই কিশোর অবস্থা থেকে ক্রিকেটের সাথে নিজেকে আষ্ট্রেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখেন। শুরুতে মিডিয়াম-পেসার হিসেবে খেলতেন। কিন্তু, পেকহাম ম্যানর স্কুলের কোচ মাইক গান্টনের পরামর্শক্রমে অফ-ব্রেক বোলার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করতে সচেষ্ট হন। এরপর থেকে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অফ-স্পিনারের মর্যাদা পেয়েছেন। একমাত্র ইংরেজ খেলোয়াড় হিসেবে দুইবার বিদ্রোহী দলের সাথে তৎকালীন নিষিদ্ধঘোষিত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। এরফলে তাঁকে বেশ মাশুল গুণতে হয় ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিরূপ প্রভাব ফেলে।

১৯৭৮ থেকে ১৯৯৫ সময়কালে সতেরো বছরব্যাপী খেলোয়াড়ী জীবনে ইংল্যান্ডের পক্ষে ৬৪ টেস্ট ও ৬১টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। তন্মধ্যে, টেস্টগুলো থেকে ১৪৭ উইকেট দখল করেছিলেন। এছাড়াও, দশটি অর্ধ-শতক সহযোগে ১৭১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১৯৭৮ সালে নিজ দেশে মার্ক বার্জেসের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৪ আগস্ট, ১৯৭৮ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ২/৩৯ ও ০/১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নেয়ার সুযোগ পেলে ২ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, জিওফ হাওয়ার্থের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তা ও প্রাণান্তঃকর প্রয়াস চালানো সত্ত্বেও সফরকারীরা ৭ উইকেটে পরাভূত হলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

১৯৮১-৮২ মৌসুমে কিথ ফ্লেচারের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে কলম্বোর পিএসএসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ০/৫৫ ও ৬/৩৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংয়ের কল্যাণে সফরকারীরা ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে সিডনিতে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ৭/৭৮ লাভ করেছিলেন।

১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে মাইক গ্যাটিংয়ের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। পুরো সিরিজে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৭ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ৭০ ও অপরাজিত ৭৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। তবে, আব্দুল কাদিরের অল-রাউন্ড ক্রীড়ানৈপুণ্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। ২০৭ রান সংগ্রহসহ ৭ উইকেট দখল করে আব্দুল কাদিরের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

১৯৮৮ সালে শক্তিধর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাইক গ্যাটিংয়ের পরিবর্তে অধিনায়কের দায়িত্ব পেলেও দুই টেস্টে ইংল্যান্ড দল পরাজয়বরণ করে।

১৯৯৫ সালে নিজ দেশে রিচি রিচার্ডসনের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৭ জুলাই, ১৯৯৫ তারিখে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০/৩৩ ও ০/৪৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ডোমিনিক কর্কের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয় পেলে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ২-২ ব্যবধানে সমতা চলে আসে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। নর্দান্টস ও মিডলসেক্সের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ঘরোয়া আসরে উল্লেখযোগ্য সফলতার সাথে নিজেকে যুক্ত করতে না পারলেও গ্রেগ চ্যাপেলের ভারত দলের কোচের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়ার পর তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি রাজী হননি। ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে আহমেদাবাদ রকেটস দলের কোচ ছিলেন।

Similar Posts

  • | | |

    আলী বাখের

    ২৪ মে, ১৯৪২ তারিখে ট্রান্সভালের জোহানেসবার্গে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাশাপাশি, দলের প্রয়োজনে মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণের দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হতেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন কারণে নিজেকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। প্রায় পাঁচ দশক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে হৃৎপিণ্ডতুল্য ভূমিকার…

  • |

    জিমি সিনক্লেয়ার

    ১৬ অক্টোবর, ১৮৭৬ তারিখে কেপ প্রভিন্সের সুয়েলেন্ডাম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী ছিলেন। উঁচু থেকে বলে বৈচিত্র্যমূখী পেস বোলিং করতেন। দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করে তুলতে অন্যতম পথিকৃতের ভূমিকায়…

  • | | | |

    আব্দুল কাদির

    ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৫ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। তাসত্ত্বেও, দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে নিয়েও যথেষ্ট ভূমিকা রেখে গেছেন। পাশাপাশি, পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের কিংবদন্তীতুল্য স্পিন যাদুকর। অগণিত ব্যাটসম্যানের রহস্যের পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। সর্বোপরি, ১৯৮০-এর দশকে লেগ-স্পিনের বর্ণাঢ্যময়…

  • | |

    অ্যান্ডি ওয়ালার

    ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৯ তারিখে সলসবারিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। জিম্বাবুয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘বান্ডু’ ডাকনামে পরিচিতি পান। দীর্ঘদেহী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। ক্রমাগত আঘাত ও তামাক চাষে জড়িত থাকায় খেলোয়াড়ী জীবন উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জনপ্রিয় ছিলেন ও বিনোদনধর্মী…

  • |

    ডগলাস কার

    ১৭ মার্চ, ১৮৭২ তারিখে কেন্টের ক্রানব্রুক এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯০০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। বার্নার্ড বোসানকুয়েতকে যদি ‘গুগলির রূপকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, তাহলে তাঁকে ‘বাস্তবায়ক’ হিসেবে পরিগণিত করা হবে। সাটন ভ্যালেন্সের পর অক্সফোর্ডের…

  • |

    ম্যাথু নিকোলসন

    ২ অক্টোবর, ১৯৭৪ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের সেন্ট লিওনার্ডস এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারির কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ১৯৯০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ‘নিকো’ ডাকনামে ভূষিত ম্যাথু নিকোলসন ১.৯৭ মিটার উচ্চতার অধিকারী। নিউ সাউথ ওয়েলসে খেলা শিখতে শুরু করেন। বিদ্যালয়ের তারকা খেলোয়াড়…