৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫ তারিখে ইংল্যান্ডের ল্যাঙ্কাশায়ারের বার্নলি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। অল-রাউন্ডার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। সচরাচর কভার এলাকায় দণ্ডায়মান থেকে ক্ষীপ্রতার সাথে ফিল্ডিং করতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
ছোটখাটো গড়ন ও দৃঢ় প্রত্যয়ী মনোভাব নিয়ে খেলা অগ্রসর হতেন। সময়ের প্রয়োজনে একান্ত নিষ্ঠার সাথে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। এছাড়াও, কার্যকর অফ-স্পিন বোলিংয়ে ৪০টি টেস্ট উইকেটের সন্ধান পেয়েছেন। এরফলে, দলে অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতেন। বাপ্তিষ্ম গ্রহণের সুবাদে রবিবারে ক্রিকেট খেলতে অনীহা প্রকাশ করেন। তবে, অন্যান্য দিনগুলোয় সদর্পে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরে আসতেন। ১৯৬৪-৬৫ মৌসুম থেকে ১৯৭৪-৭৫ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি ও সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
পরিসংখ্যানগতভাবে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে তেমন উল্লেখযোগ্য খেলা উপহার দিতে পারেননি। তবে, কিউই দলে থেকে ফুরফুরে মেজাজে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তরতর করে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন নিজেকে। তাঁর ফিঙ্গার স্পিন তেমন সমীহের না হলেও বেশ কার্যকর ছিল। অন্যদিকে আগ্রাসী ব্যাটিং রোমাঞ্চপূর্ণ স্ট্রোকপ্লের মাধ্যমে গড়ে উঠেছিল। শৈশবকাল থেকেই জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখতেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেকের পরের বছরই জাতীয় দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা লাভ করেন।
১৯৬৫ থেকে ১৯৭৪ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৩২ টেস্ট ও তিনটিমাত্র ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৫ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হন। টেরি জার্ভিসের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৩/৯০ ও ১/৩২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।
একই সফরের ৫ মার্চ, ১৯৬৫ তারিখে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৩১ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৩১ ও ৪৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৫০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
তবে, ভারত সফরে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ব্যাট হাতে কিছুটা সময় কাটালেও খুব কমই উপযোগী পিচে বল হাতে সফল হয়েছিলেন। তাসত্ত্বেও, প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রাখেন ও দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁর উপর ভরসা করার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৬৫ সালে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। ২৭ মে, ১৯৬৫ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৪৩ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৪ ও ৮১* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৬০ ও ০/৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ৯ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
ঐ সফরে ৫৬.২০ গড়ে রান তুলে ব্যাটিং গড়ে শীর্ষে থাকেন। ছয় ইনিংসের চারটিতেই অর্ধ-শতরানের সন্ধান পান। এরপর থেকেই তিনি দলের প্রধান সদস্যে পরিণত হন। লড়াই করার মানসিকতা তাঁকে বেশ এগিয়ে দেয়।
১৯৬৫-৬৬ মৌসুমে নিজ দেশে প্রথমবারের মতো টেস্টে অংশ নেন। মাইক স্মিথের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের বিপক্ষে খেলেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২৩ ও ৬* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/২৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ১১ মার্চ, ১৯৬৬ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ব্যাট হাতে ২ ও ২৫ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। বল হাতে নিয়ে ৩/৩ ও ০/৩০ লাভ করেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় শেষ হয়।
১৯৭৩ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে বিদায়ী সিরিজে অংশ নেন। ইংরেজ পরিবেশে খেলতেই তিনি অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। ১০০.৬৬ গড়ে রান তুলেন। ট্রেন্ট ব্রিজে ১১৬ রানের ইনিংস খেলে প্রতিপক্ষের ৪৭৯ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় দল ৪৪০ রান তুলে। লর্ডসে ১০৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। এ সফর শেষে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর নেন।
ঐ বছর বেভান কংডনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৭ জুন, ১৯৭৩ তারিখে নটিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৬* ও ১১৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/২৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিকরা ৩৮ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ৫ জুলাই, ১৯৭৩ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৬২ ও ৩ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলায় স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
