১৮ অক্টোবর, ১৯২৮ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের গুজরাতের আহমেদাবাদে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও রেফারি ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৫০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান ছিলেন। নিজের সেরা দিনগুলোয় দৃষ্টিনন্দন স্ট্রোকের ফুলঝুঁড়ি ছোটাতেন। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুম থেকে ১৯৬১-৬২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বরোদা ও গুজরাতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
গুজরাতের পক্ষে বোলার হিসেবে খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। এক পর্যায়ে অল-রাউন্ডার হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাতে সক্ষম হন। ৪৩টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৩৪ গড়ে ৭৩ উইকেট দখল করেছিলেন। বরোদার পক্ষে খেলার পরপরই তাঁর ব্যাটিংয়ের উত্তরণ ঘটে। গুজরাতের পক্ষে যেখানে ব্যাট হাতে ২৪ গড়ে রান ও বল হাতে ৩০ গড়ে উইকেট পেয়েছিলেন; সেখানে বরোদার পক্ষে ৪৬ গড়ে রান ও ৪৭ গড়ে উইকেট দখল করেছেন। রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় বরোদার পক্ষে বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
১৯৫২ থেকে ১৯৫৩ সময়কালে ভারতের পক্ষে তিনটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে নিজ দেশে আব্দুল কারদারের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১২ ডিসেম্বর, ১৯৫২ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ইডেন গার্ডেন্সের টেস্ট অভিষেক পর্বে আট নম্বর অবস্থানে মাঠে নামেন। ভারতের ৬৮তম টেস্ট ক্রিকেটারের মর্যাদা পান। দলের সর্বশেষ ব্যাটসম্যান গুলাম আহমেদের সহযোগিতা নিয়ে শতক হাঁকান। ভারতের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট অভিষেকে শতক হাঁকানোর গৌরবের অধিকারী হন। এছাড়াও, ভারতের প্রথম বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে শতরানের ইনিংস খেলেন। দলনায়ক লালা অমরনাথের বিদায়ী খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও ভারত দল ২-১ ব্যবধানে তাদের প্রথম টেস্ট সিরিজ বিজয় করে।
এরপর, তিনি আর মাত্র দুই টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। উভয়টিই ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে খেলেছিলেন। তবে, কোনরূপ উপযুক্ত কারণ ছাড়াই দল থেকে চীরতরে বাদ পড়েন। ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে বিজয় হাজারে’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ২৮ মার্চ, ১৯৫৩ তারিখে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ড্র হওয়া ঐ টেস্টের প্রথম ইনিংসে আঘাতের কারণে মাঠে নামেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫* রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিক দল ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
টেস্টগুলোয় ৬০.৩৩ গড়ে তিনি রান সংগ্রহ করেছিলেন। এরফলে, পূর্ণাঙ্গ টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনে ভারতের সর্বোচ্চ টেস্ট গড়ের অধিকারী হন। মিড-ডে’র সাংবাদিক ক্লেটন মারজেলোকে এক স্বাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, ‘কেবলমাত্র হাফ-ভলির বলগুলো বিজয় মার্চেন্ট ও বিজয় হাজারে খেলতেন। যে সকল বোলার আমাকে আক্রমণ করতো তাদেরকে মোকাবেলা করতে অধিক পছন্দ করতাম। ১৯৫২ সালে কলকাতায় আমার প্রথম টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমি তাই করেছি। সিলি মিড-অন ও সিলি মিড-অফ অঞ্চলে ফিল্ডারদের উপস্থিতিতে ইনিংসের শুরুতে মাহমুদ হোসেনের বল থেকে দুইটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আত্মবিশ্বাসী হই।’
অধিনায়কের বিষয়েও তিনি মন্তব্য করে বলেছেন যে, ‘আমার প্রথম টেস্ট লালা অমরনাথের অধিনায়কত্বে অংশগ্রহণ করি। তিনি অত্যন্ত আগ্রাসী ধাঁচের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি আক্রমণাত্মক খেলা ভালোবাসতেন। এর বিপরীতে বিজয় হাজারে অত্যন্ত রক্ষণাত্মক ধাঁচের ছিলেন। সবচেয়ে বাজে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর নেতৃত্বে খেলেছি।’ লিস্ট-এ ক্রিকেটে একটি খেলায় ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন। মৃত্যু পূর্ব-পর্যন্ত ভারতের প্রবীণতম জীবিত টেস্ট ক্রিকেটার ছিলেন। ১৬ মে, ২০১৬ তারিখে গুজরাতের আহমেদাবাদে ৮৭ বছর ২১১ দিন বয়সে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। তাঁর ভ্রাতা যতীন্দ্র প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
