|

আমির ইলাহী

১ সেপ্টেম্বর, ১৯০৮ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা লেগ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন।

দুইটি অপ্রত্যাশিত বিষয়ের সাথে নিজের নামকে স্মরণীয় করে রেখে গেছেন। মাত্র বারোজন ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে দুইটি ভিন্ন দেশের পক্ষে খেলেছেন। বিশজন বয়োজ্যেষ্ঠ ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। গুল মোহাম্মদআব্দুল হাফিজ কারদারকে সাথে নিয়ে তিনজন টেস্ট ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৩৪-৩৫ মৌসুম থেকে ১৯৫৩-৫৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে বাহাওয়ালপুর, বরোদরা, মুসলিম, নর্দার্ন ইন্ডিয়া ও সাউদার্ন পাঞ্জাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২৬ বছর বয়সে বেশ বয়েস নিয়ে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। এরপর থেকে প্রায় দুই দশক প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ১৯৩৭-৩৮ মৌসুমে খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করে ১৯ গড়ে ১৯৪ উইকেট দখল করেছিলেন। শুরুতে মিডিয়াম-পেস বোলার ছিলেন। পরবর্তীতে, লেগ-ব্রেক ও গুগলির দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং পরবর্তীকালে পরিচিতি পান। ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে ক্রমাগত সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। রঞ্জী ট্রফিতে নিয়মিতভাবে উইকেট শিকার করতেন। ২৪.৭২ গড়ে ১৯৩ উইকেট লাভ করেন। এ পর্যায়ে অধিকাংশ উইকেটই বরোদরার সদস্যরূপে পেয়েছিলেন। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় দলের শিরোপা বিজয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা রেখেছিলেন।

এর কিছুদিন পরই পাকিস্তানের নাগরিকত্ব লাভ করেন। ভারত বিভাজনের পর পাকিস্তানে চলে যান। ভারত ও পাকিস্তানের কয়েকটি দলের পক্ষে দীর্ঘদিন খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ২৬-এর কম গড়ে ৫১৩ উইকেট পেয়েছিলেন। উইকেটগুলো লাভের জন্য সিম ও লেগ-ব্রেক উভয় ধরনের বোলিং কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। ১৯৪০-এর দশকের শুরুতে নিষ্প্রাণ উইকেট থাকার ফলে ব্যাট হাতে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি।

১৯৩৬ সালে ইংল্যান্ডে প্রথমবারের মতো ভারত দলের সদস্যরূপে যান। এ সফরে খুব কমই সফল হয়েছিলেন। ৪২.৯৪ গড়ে সতেরো উইকেট দখল করেছিলেন। এগারো বছর পর ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরেও একই ফলাফল করেন। উইকেট পেতে তাঁকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। ৬৫.৮৭ গড়ে ৮ উইকেট পেয়েছিলেন।

১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সময়কালে ছয়টিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ভারতের পক্ষে এক টেস্টে অংশ নেন। ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে লালা অমরনাথের নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ১২ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ তারিখে সিডনিতে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক ঘটে। তবে, ঐ টেস্টে কোন বোলিং করার সুযোগ পাননি। ৪ ও ১৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। বৃষ্টির কারণে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল এবং স্বাগতিক দল পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

এরপর, পাকিস্তানের সদস্যরূপে বাদ-বাকী পাঁচটি টেস্ট খেলেছিলেন। সবগুলোই ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে আব্দুল কারদারের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে ভারত সফরে খেলেছিলেন। এ মৌসুমে টেস্ট মর্যাদাপ্রাপ্ত নতুন দল হিসেবে পাকিস্তান দলের সাথে ভারত গমন করেন।

মাদ্রাজ টেস্টে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে দলের সংগ্রহ ২৪০/৯ থাকা অবস্থায় মাঠে নামেন। জুলফিকার আহমেদের সাথে ১০৪ রানের জুটি গড়েন। ব্যক্তিগত সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে ৪৭ রানের সর্বোচ্চ সংগ্রহ করেছিলেন। প্রথম টেস্টে পাকিস্তান ইনিংস ব্যবধানে পরাভূত হলেও তিনি ৪/১৩৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন। পরবর্তীতে এটিই তাঁর সেরা বোলিং হিসেবে চিত্রিত হয়ে পড়ে ও পরবর্তী আট বছরে পাকিস্তানের পক্ষে অভিষেকে যে-কোন বোলারের সেরা সাফল্য হিসেবে পরিচিতি পায়। পাঁচ টেস্টে অংশ নিয়ে ৩৫ গড়ে সাত উইকেট পেয়েছিলেন।

৪৪ বছর বয়সে ১২ ডিসেম্বর, ১৯৫২ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম টেস্টে অংশ নেন। নিজস্ব শেষ টেস্টে ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এ পর্যায়ে দ্বিতীয় বয়োজ্যেষ্ঠ এশীয় ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এছাড়াও, ১/২৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলেও ২-১ ব্যবধানে তাঁর দল সিরিজ খোঁয়ায়। এ সফরে ৩৮.৭৬ গড়ে তেরো উইকেট দখল করেছিলেন। নিজ দেশের পক্ষে প্রায়শঃই এগারো নম্বর অবস্থানে থেকে মাঠে নামতেন। ব্যাট হাতে নিয়ে চমৎকার মুহূর্ত অতিবাহিত করেন।

২৮ ডিসেম্বর, ১৯৮০ তারিখে সিন্ধু প্রদেশের করাচীতে ৭২ বছর ১১৮ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • | | | |

    এরিক ফ্রিম্যান

    ১৩ জুলাই, ১৯৪৪ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার সেমাফোর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ, প্রশাসক ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে কার্যকর ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ‘ফ্রিটজ’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ১৯৬৪-৬৫ মৌসুম থেকে ১৯৭৩-৭৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর…

  • | |

    মাখায়া এনটিনি

    ৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে কেপ প্রভিন্সের এমডিঙ্গি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘জর্জ’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে তাঁর বোলিংয়ের সক্ষমতা ও অনবদ্য ভঙ্গীমায় নিজের পরিচিতি ঘটান। ১৫ বছর বয়সে…

  • |

    কুলদীপ যাদব

    ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৪ তারিখে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। স্লো লেফট-আর্ম চায়নাম্যান বোলিং করেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে থাকেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১.৬৮ মিটার উচ্চতার অধিকারী। রাম সিং ও ঊষা যাদব দম্পতির সন্তান তিনি। প্রিয়া যাদব নাম্নী জ্যেষ্ঠা ভগ্নী রয়েছে। পিতা ইট ভাটার মালিক।…

  • |

    সেলিম দুরানি

    ১১ ডিসেম্বর, ১৯৩৪ তারিখে আফগানিস্তানের কাবুলে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, কার্যকর স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। কাবুলে জন্মগ্রহণ করলেও ভারতে শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। ক্রিকেট বিশ্বে তিনি ‘প্রিন্স সেলিম’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আফগানিস্তানী পাঠান হিসেবে চমৎকার চেহারার লম্বাটে গড়নের অধিকারী…

  • | |

    কার্লি পেজ

    ৮ মে, ১৯০২ তারিখে ক্যান্টারবারির ক্রাইস্টচার্চের লিটলটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে স্লো বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাশাপাশি, স্লিপ কিংবা গালি অঞ্চলে ফিল্ডিং করতেন। ১৯৩০-এর দশকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় অধিনায়কের মর্যাদা লাভ করেন। খেলাধূলায় বেশ ভালো ফলাফল করেন। ক্রিকেট ও…

  • |

    টিবি কটার

    ৩ ডিসেম্বর, ১৮৮৩ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের ফিলিপ স্ট্রিট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে মারকুটে ব্যাটিং করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ইংরেজ বংশোদ্ভূত জন হেনরি কটার ও স্কটল্যান্ডীয় মার্গারেট হে দম্পতির কনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন। ছয় বছর…