৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে হ্যামিল্টনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলে থাকেন। বামহাতি ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
৬ ফুট (১.৮২ মিটার) উচ্চতার অধিকারী তিনি। বিখ্যাত কিউই তারকা বোলার ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে দল নির্বাচকমণ্ডলী ২২ বছর বয়সী মিচেল স্যান্টনারকে খুঁজে পায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই নিউজিল্যান্ড দলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হন।
২০১১-১২ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টস এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ার ও ওরচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বার্বাডোস ট্রাইডেন্টস ও চেন্নাই সুপার কিংসের পক্ষে খেলেছেন। ২০ নভেম্বর, ২০১১ তারিখে ডুনেডিনে নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টসের সদস্যরূপে ওতাগোর বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো খেলতেন নামেন।
২০১৬-১৭ মৌসুমে ওরচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টসের পক্ষে ১৯টি লিস্ট-এ খেলায় অংশ নেয়ার পর দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁর মাঝে প্রতিশ্রুতিশীলতার সন্ধান পায় ও দ্রুত তাঁকে জাতীয় দলে যুক্ত করে। ২০১৯ সালের আইপিএল নিলামে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বাধীন চেন্নাই সুপার কিংসে ৫০ লক্ষ রূপীর বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ করে। এ পর্যায়ে ৪ খেলায় অংশ নিয়ে মাত্র ৪ উইকেট পেয়েছিলেন।
২০১৫ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ঐ বছর দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৯ জুন, ২০১৫ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনে প্রবেশ করেন। এরপর, ২৩ জুন, ২০১৫ তারিখে ম্যানচেস্টারে একই দলের বিপক্ষে ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন।
২০১৫-১৬ মৌসুমে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৭ নভেম্বর, ২০১৫ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের এটিই প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট ছিল। প্রথম ইনিংসে ৪৬ বল থেকে ৩১ রান তুলেন। ৫৪ রান খরচায় জশ হজলউডের উইকেট পান। এরপর, দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৫ রান তুলে নাথান লায়নের বলের স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন। ১/৮ লাভ করেন। জশ হজলউডের চমৎকার বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
২০১৬-১৭ মৌসুমে প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ভারত সফরে যান। ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৪৫ রান অতিক্রম করেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ৩২ ও ৭১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ভারতের প্রথম ইনিংসে আরজি শর্মা’র উইকেট লাভ করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা সাফল্য ছিল ২/১৬। খেলায় তিনি ৩/৯৪ ও ২/৭৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। রবীন্দ্র জাদেজা’র অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১৯৭ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
নভেম্বর, ২০১৯ সালে বে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম টেস্ট শতকের সন্ধান পান। এ পর্যায়ে বিজে ওয়াটলিংয়ের সাথে সপ্তম উইকেটে ২৬১ রান তুলে নিউজিল্যান্ডীয় রেকর্ড গড়েন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেট লাভ করেন। এরফলে, মার্চ, ২০১৮ সালের পর নিজ দেশে ১১ ইনিংসে সিমারদের সংগৃহীত ১০১ উইকেটের পর প্রথম স্পিনার হিসেবে উইকেট লাভ করেন।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় নিউজিল্যান্ড দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। এ প্রতিযোগিতায় ১০ খেলায় অংশ নিয়ে ৬ উইকেটসহ ৭২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর দল রানার্স-আপ হয়েছিল। ৩ মার্চ, ২০২১ তারিখে আইসিসি টি২০আই বোলিং র্যাঙ্কিংয়ে ৭ নম্বর অবস্থানে পৌঁছেন।
২০২৩-২৪ মৌসুমে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে টিম সাউদি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে বাংলাদেশ সফরে যান। ৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে মিরপুরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৩/৫৩। খেলায় তিনি ৩/৬৫ ও ৩/৫১ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১ ও ৩৫* রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। গ্লেন ফিলিপসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে ৪ উইকেটে জয় পেলে সফরকারীরা সিরিজে সমতা আনতে সক্ষম হয়।
একই মৌসুমে নিজ দেশে নীল ব্রান্ডের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখে মাউন্ট মুঙ্গানুইয়ে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধন পান। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে টিএল মোরেকি’র তৃতীয় উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা বোলিং ছিল ৩/৫১। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৩/৩৪ ও ৩/৫৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে সফরকারীরা ২৮১ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
২০২৪-২৫ মৌসুমে নিজ দেশে বেন স্টোকসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন ও ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৫৯ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৭৬ ও ৪৯ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/৭ ও ৪/৮৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৪২৩ রানের বিরাট ব্যবধানে জয়লাভ করলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২৫ সালে কিউই দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ৭ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাটিং করার সুযোগ না পেলেও ০/৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ডেভন কনওয়ে’র অসাধারণ শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৩৫৯ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
