২০ মার্চ, ১৯৫১ তারিখে পাঞ্জাবের অমৃতসরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও কোচ। অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
১৯৬৮-৬৯ মৌসুম থেকে ১৯৯১ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে দিল্লি ও পাঞ্জাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে কয়েক মৌসুম দূর্দান্ত খেলার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালে ইংল্যান্ড গমনার্থে ভারত দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৭৪ থেকে ১৯৮৭ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৩৯ টেস্ট ও ৬৭টি ওডিআইয়ে অংশ নেন। ১৯৭৪ সালে অজিত ওয়াড়েকরের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৬ জুন, ১৯৭৪ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ব্রিজেশ প্যাটেলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ওল্ড ট্রাফোর্ডে তাঁর টেস্ট অভিষেক পর্বটি তেমন সুবিধের হয়নি। দুই উইকেট লাভের পাশাপাশি মাত্র ৯ রান তুলতে পেরেছিলেন। ঐ টেস্টে ভারত দল ১১৩ রানে পরাজিত হয়েছিল ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। লর্ডসে অনুষ্ঠিত পরের টেস্টে উইকেট শূন্য অবস্থায় মাঠ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ঐ টেস্টে সফরকারীরা ইনিংস ও ২৮৫ রানের শোচনীয় পরাজয়বরণ করেন।
একই সফরের ১৩ জুলাই, ১৯৭৪ তারিখে লিডসে ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে তাঁকে দলে খেলানো না হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার জন্যে ভারত দলের সাথে যুক্ত রাখা হয়। ১৯৭৪ সালের শীতকালে নিজ দেশে ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ইডেন গার্ডেন্সে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১০ বাউন্ডারিতে ৪৮ রানের মনোজ্ঞ ইনিংস উপহার দেন। এরপর, ৪/২২ নিয়ে দলকে ৮৫ রানের জয় এনে দেন।
শীর্ষমানসম্পন্ন অল-রাউন্ডার হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। কৌণিকভাবে বোলিংকর্মে অগ্রসর হতেন। মিডিয়াম-পেস বোলিংয়ের পাশাপাশি নিচেরসারির দারুণ ব্যাটসম্যানরূপে আবির্ভূত হতেন। নিজের স্বর্ণালী দিনগুলোয় অসাধারণ ফিল্ডারের ভূমিকায় অল-রাউন্ডার ছিলেন। বয়সের ভারে ন্যূহ থাকা অবস্থাতেও নিজের ক্ষিপ্রতা ধরে রেখেছিলেন। তবে, ঘরোয়া আসরের দূর্দান্ত অল-রাউন্ডারের ভূমিকা টেস্ট ক্রিকেটে প্রবাহিত রাখতে পারেননি।
ব্যাট হাতে নিয়ে কমপক্ষে একবার ভারতের নিশ্চিত পরাজয় থেকে রক্ষা করেন। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে নিজ দেশে জহির আব্বাসের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৩ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ৭৪ রানের বীরত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। দলের সংগ্রহ ৮৫/৬ থাকা অবস্থায় রজার বিনি’র সাথে ১৫৫ রানের জুটি দাঁড় করান। করাচীতে ইমরান খানের অনবদ্য ভূমিকায় ভারতীয় দল দিশেহারা হলেও রোমাঞ্চপূর্ণ অর্ধ-শতরানের ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। দিলীপ বেঙ্গসরকারের সাথে জুটি গড়ে দলকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেন। ৭৪ ও ৩/৭২ লাভ করে বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলাটিকে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যান ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। ঐ টেস্টে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
বল হাতে নিয়ে দারুণ ভূমিকার স্বাক্ষর রেখেছেন। বোম্বেতে সফরকারী ইংরেজদের বিপক্ষে দলকে জয় এনে দেন। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার প্রথম আসরে প্রথম বল করেছিলেন। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় শিরোপা বিজয়ী ভারত দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। চূড়ান্ত খেলায় সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ভিভ রিচার্ডসের উইকেটসহ তিন উইকেট পান। খেলায় তাঁর বোলিং পরিসংখ্যান ছিল ১২ ওভারে ৩/৩১।
১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৪ জানুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০/১৪ ও ০/০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ২৭ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে কেজে ওয়াডসওয়ার্থকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৪/২২। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। খেলায় তিনি ৫/১৩৪ লাভ করেন। এছাড়াও, ৫ ও ৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
যথেষ্ট বয়েস হওয়া স্বত্ত্বেও নিজের সেরা দিনগুলোয় দূর্দান্ত ফিল্ডার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করতেন। ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে চমৎকার অল-রাউন্ডার হিসেবে উপস্থাপন করলেও টেস্ট ক্রিকেটে একই ধারায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি।
১৯৮৬ সালে কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৯ জুন, ১৯৮৬ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠতি স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ২০ ও ২২ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/১৮ ও ০/৩০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, দিলীপ বেঙ্গসরকারের অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যের কারণে সফরকারীরা ২৭৯ রানে জয় পায় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
ঐ বছর হায়দ্রাবাদে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার সিরিজের তৃতীয় ওডিআই প্রচণ্ড ঝড়ের কারণে খেলাটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়। তবে, গ্রেগ রিচি ৫৩ বল থেকে ৭৫ রান তুলেছিলেন। তন্মধ্যে, তাঁর শেষ ওভার থেকে ২২ রান আদায় করে নেন।
তবে, টেস্ট ক্রিকেটে এর সম্পূর্ণ বৈপরীত্য চিত্র তুলে ধরেছেন। ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি এবং বল হাতে পর্যাপ্ত পেস কিংবা সুইং আনয়ণের বিষয়ে কোনটিতেই সাফল্য পাননি। তবে, তাঁর চেষ্টারও কোন ত্রুটি ছিল না। উত্থান-পতনে ভরা টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনে ৪০ গড়ে ৭১ উইকেট ও ২২ গড়ে ১০৪২ রান তুলেছেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৪২.৮৭ গড়ে ১০২০৪ রান তুলেছেন ও ২৫.৫০ গড়ে ৬২৫ উইকেট দখল করেছেন।
খেলোয়াড়ী জীবন শেষে কোচ হিসেবে যুক্ত হন ও ভারতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যরূপে অংশ নেন। ভারত ‘এ’ দলের প্রশিক্ষক হন। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর, ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে ভারত দলের কোচ হিসেবে নিযুক্তি পান। সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬ থেকে সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন। ২০০০-০১ মৌসুমে ভারত দলের নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য হন। এছাড়াও, ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে দিল্লি জায়ান্টসের কোচের দায়িত্ব পালন করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। কুনাল লাল নামীয় সন্তানের জনক।
