১৪ অক্টোবর, ১৯৮১ তারিখে দিল্লিতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার, কোচ ও রাজনীতিবিদ। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
৫ ফুট ৬ ইঞ্চি (১.৬৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। দীপক গম্ভীর ও সীমা গম্ভীর দম্পতির সন্তান ছিলেন। একতা গম্ভীর নাম্নী বোন রয়েছে। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুম থেকে ২০১৮-১৯ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে দিল্লি ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, দিল্লি ডেয়ারডেভিলস ও কলকাতা নাইট রাইডার্সের পক্ষে খেলেছেন।
টেস্ট ক্রিকেটে বীরেন্দ্র শেহবাগের সাথে অন্যতম সফল উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন। ভারতের সেরা উদ্বোধনী জুটি হিসেবে তাঁরা চিত্রিত হন। ৮৭ ইনিংসে তাঁরা ৪,৪১২ রান তুলেন। এছাড়াও, ৪৯টি ওডিআইয়ে এ জুটি দুই সহস্রাধিক রান তুলে। টি২০আইয়ে ভারতের পক্ষে যে-কোন উইকেট তাঁরা অধিক রান সংগ্রহ করেছেন। শচীন তেন্ডুলকরের সাথে খেলে ওডিআইয়ে ভারতের সেরা ছিলেন ও তিন নম্বর অবস্থানে খেলতেন। টি২০আইয়েও বেশ সফল ছিলেন। ২৭.৪১ গড়ে রান পেয়েছেন ও কিছু সময় ভারতের সর্বাধিক রান সংগ্রাহকের মর্যাদা পান। এছাড়াও, আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০১২ ও ২০১৪ সালে দলের শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রাখেন।
২০০৩ থেকে ২০১৬ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৫৮ টেস্ট, ১৪৭টি ওডিআই ও ৩৭টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ২০০৩ সালে দলের সাথে বাংলাদেশ গমন করেন। ১১ এপ্রিল, ২০০৩ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে পাঁচ সহস্রাধিক রান তোলার পর ২০০৪ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ বার্তা পান। ২০০৪-০৫ মৌসুমে নিজ দেশে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ৩ নভেম্বর, ২০০৪ তারিখে মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। দিনেশ কার্তিকের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। মোটেই সুবিধে করতে পারেননি। খেলায় তিনি ৩ ও ১ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তবে, মুরালী কার্তিকের অসামান্য বোলিং নৈপুণ্যে ঐ টেস্টে স্বাগতিক দল ১৩ রানে জয় পেলেও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ২-১ ব্যবধানে জয়ী হয়।
২০০৭ সালে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে তাঁকে উপেক্ষিত করার বিষয়টি বেশ প্রভাব ফেলেন। বিশ্ব টি২০ ক্রিকেটে নিজেকে বেশ জোড়ালোভাবে মেলে ধরেন। এছাড়াও, লাল-বলের ক্রিকেটের বিষয়েও সচেতন ছিলেন। ২০০৭-০৮ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফিতে দিল্লির প্রতিনিধিত্ব করেন। মাত্র পাঁচ খেলা থেকে ৯১ গড়ে ৭৩০ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।
২০০৮-০৯ মৌসুমে এমএস ধোনি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৮ মার্চ, ২০০৯ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৭২ ও ৩০* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, শচীন তেন্ডুলকরের অসামান্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় সফরকারীরা ১০ উইকেটে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্তির পর নিজেকে ঢেলে দিতে সোচ্চার হন। এক পর্যায়ে ১১ টেস্টে ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে একটি অর্ধ-শতকের সন্ধান পেয়েছেন। তন্মধ্যে, ৫ টেস্টের প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে একটি শতক হাঁকিয়েছিলেন। এছাড়াও, এমএস ধোনি’র অনুপস্থিতিতে ভারত দলকে ছয়বার নেতৃত্ব দিয়ে সবকটিতেই দলকে জয় এনে দেয়ার কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর।
২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় ৯৭ রান তুলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন। বীরেন্দ্র শেহবাগ ও শচীন তেন্ডুলকর দ্রুত বিদেয় নিলে তিনি দলের হাল ধরেন। তবে, এমএস ধোনি’র সাফল্যে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন।
ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় দলের শোচনীয় ফলাফলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে পড়ে। দল নির্বাচকমণ্ডলীর উপেক্ষার পাত্রে পরিণত হন ও দলের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হন। ২০১২-১৩ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তাঁকে রাখা হয়নি। ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে বিকল্প উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট দলে ঠাঁই দেয়া হয়েছিল। এরপর থেকেই জাতীয় দলের বাইরে রয়েছেন।
২০১৬-১৭ মৌসুমে নিজ দেশে কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৮ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে ইন্দোরে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ২.৫ ওভারে ১১/০ অবস্থায় কাঁধের আঘাতের কারণে ব্যক্তিগত ৬ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হন। এরপর, দলের সংগ্রহ ৩৪/১ থাকাকালে পুণরায় মাঠে ফিরে আসেন। খেলায় তিনি ২৯ ও ৫০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩২১ রানে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
একই মৌসুমে নিজ দেশে অ্যালেস্টার কুকের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ৯ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখে রাজকোটে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ২৯ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মঈন আলী’র অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কারণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় এগুতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
খেলোয়াড়ী জীবনের এক পর্যায়ে তাঁকে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের প্রধান চালিকাশক্তিরূপে বিবেচনায় আনা হয়েছিল। ২০০৭ সালে বিশ্ব টি২০ ও ২০১১ সালে বিশ্বকাপের শিরোপা বিজয়ী ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। খেলা থেকে চলে আসার পূর্ব-পর্যন্ত শক্তিশালী ব্যাটিং অবস্থানের নিত্য অনুসঙ্গ ছিলেন। ক্ষুদ্রতর সংস্করণের খেলায় সফল হবার পাশাপাশি ২০০৯ সালে নেপিয়ারে ৬৪৩ মিনিটের ম্যারাথন ইনিংস খেলে টেস্ট ক্রিকেটে অন্যতম সেরা খেলা প্রদর্শন করেছিলেন।
দূর্ভাগ্যজনকভাবে ২০১১ সালের বিশ্বকাপের শিরোপা বিজয়ের পর ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় ভারত দলের বিপর্যয়কর ফলাফলের পাশাপাশি তাঁকে সকল ক্ষেত্রে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছিল। এভাবেই অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল ও প্রতিভাবান ভারতীয় ব্যাটসম্যানকে বিদেয় নিতে হয়। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ধারাভাষ্যকর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ইমরান খান, অর্জুনা রানাতুঙ্গা ও মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের ন্যায় তিনিও রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়েন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিজেপিতে যোগ দেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। নাতাশা জৈন নাম্নী এক রমণীর সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।
