২ অক্টোবর, ১৯৯৬ তারিখে হারারের হাইফিল্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামেন। জিম্বাবুয়ের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
দীর্ঘ ৬ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। সহজাত পেস ও বাউন্স সহযোগে বোলিং কর্মে অগ্রসর হন এবং মরনে মরকেলের চেয়েও নিজেকে এগিয়েছিলেন। ২০১০-এর দশকে জিম্বাবুয়ের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলিং প্রতিভারূপে বিবেচিত হয়ে আসছেন। ২১ বছর বয়সে ঘণ্টায় ১৩৫ থেকে ১৪০ কিলোমিটার গতিবেগে বোলিং করতে সক্ষমতা দেখিয়েছেন। জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া ক্রিকেট অঙ্গনে ইতোমধ্যে দ্রুততম বোলার হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছেন। প্রায়শঃই দক্ষিণ আফ্রিকান কাগিসো রাবাদা’র বোলিং ভঙ্গীমার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
জিম্বাবুয়ে একাডেমি দলের সদস্য ছিলেন। ২০১৭ সালে টাটেন্ডা তাইবু’র পরিচালনায় দলটির সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। জিম্বাবুয়ের অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে, এ সফরে নিজস্ব দক্ষতার বহিঃপ্রকাশের সুযোগ পান। ডার্বিশায়ার দ্বিতীয় একাদশের বিপক্ষে ৩১ বলে ৩৬ রান সংগ্রহ ও ১৬ ওভারে ৩/৪১ বোলিং শৈলী প্রদর্শন করেন। এরফলে, জিম্বাবুয়ে ফিরে বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত রাইজিং স্টার্সের সদস্যরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেকের পথ সুগম হয়। খুব দ্রুত নিজের অবস্থার পরিবর্তনে সচেষ্ট হন।
২০১৭-১৮ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ৪ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে কেউইকেউইয়ে অনুষ্ঠিত মিড ওয়েস্ট রাইনোস বনাম রাইজিং স্টার্সের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। মাত্র পাঁচটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণের পর তৎকালীন কোচ হিথ স্ট্রিকের পরিচালনায় টেস্ট দলে খেলার জন্যে খসড়া তালিকায় যুক্ত হন।
২০১৭ সাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০১৭-১৮ মৌসুমে গ্রায়েম ক্রিমারের নেতৃত্বে জিম্বাবুয়ে দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ তারিখে পোর্ট এলিজাবেথে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চারদিনের ঐতিহাসিক গোলাপী-বলের একমাত্র টেস্টে অংশ নেয়ার সুযোগ পান। রায়ান বার্লের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ফলো-অনের কবলে পড়লে দুইবার ব্যাটিং করতে হয় ও দুইদিনের মধ্যেই খেলার ফলাফল চলে আসে। অভিজ্ঞতা না থাকায় পিচ থেকে কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। তবে, বলকে বেশ ঘুরাতে পেরেছিলেন ও বাউন্স করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। ঐ টেস্টে তাঁর দল ইনিংস ও ১২০ রানে পরাভূত হয়েছিল।
১৫ জানুয়ারি, ২০১৮ তারিখে ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ওডিআই অভিষেক ঘটে। একাধারে চারটি নো-বল ছুঁড়েন। ফলে, হিথ স্ট্রিকসহ দলীয় ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিগোচরীভূত হন। এরপর, জিম্বাবুয়ের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলাররূপে চিত্রিত হতে থাকেন। জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য থেকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাছাইপর্বে খেলেন ও ২০১৮ সালে বিভিন্ন টি২০ সফরে অংশ নেন। এরপর, ২০১৯ সালকে ঘিরে কোলপ্যাক চুক্তির আওতায় নর্দাম্পটনশায়ার সিসিসি’র পক্ষে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। বড় ধরনের প্রস্তাবনার পাশাপাশি আর্থিক নিরাপত্তা ও অসাধারণ পেশাদারী পরিবেশে যুক্ত হন।
এপ্রিল, ২০১৯ সালে গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১২৩ রান সংগ্রহকারী মারনাস লাবুশেনকে বিদেয় করে কাউন্টি ক্রিকেটে নিজস্ব প্রথম উইকেটের সন্ধান পান। রয়্যাল লন্ডন ৫০-ওভার প্রতিযোগিতায় সাদা-বলের ক্রিকেটে সবে দ্যুতি ছড়ানোকালে আঘাত পান। এরফলে, ঐ মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে অধিকাংশ টি২০ খেলায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। পুরোপুরি সুস্থ হবার পর ২০২০ সালের জন্যে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তবে, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক অতিমারীর কারণে ব্যহত হয়।
কোলপ্যাক চুক্তির শেষ পর্যায়ে এসে সিদ্ধান্ত পাল্টান ও ২০২০ সাল শেষে জিম্বাবুয়ে দলে ফিরে যান। সরাসরি জিম্বাবুয়ে দলের সাথে যুক্ত হন। অক্টোবর, ২০২০ সালে ওডিআই ও টি২০আই সিরিজ খেলতে পাকিস্তান গমন করেন। রাওয়ালপিন্ডিতে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে দূর্দান্ত খেলেন। ছয় খেলায় অংশ নিয়ে ১৩ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, সিরিজের তৃতীয় ওডিআইয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। নির্ধারিত দশ ওভারে ৪/৫৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। খেলাটি সুপার ওভারে গড়ায় ও জিম্বাবুয়ে জয়লাভ করে সিরিজে ২-২ ব্যবধানে সমতায় আসে।
২০২১ সালে মমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন বংলাদেশ দলের মুখোমুখি হন। ৭ জুলাই, ২০২১ তারিখে হারারেতে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ৪/৯৪ ও ০/২৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ২ ও ৩০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ২২০ রানে জয়লাভ করে।
২০২৪-২৫ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যান্ডি বালবির্নি’র নেতৃত্বাধীন আইরিশ দলের মুখোমুখি হন। ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে বুলাওয়ের কুইন্স স্পোর্টস ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৩০ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৪৭ ও ১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, আয়ারল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে সিএ ইয়ংকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বতন সেরা ছিল ৬/৯৫। ৭/৫৮ লাভ করেন। এটিই তাঁর ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ ও দ্বিতীয়বারের মতো ইনিংসে পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ১/৭০ পান। এ পর্যায়ে ২২.১৭ গড়ে ৪১ উইকেট দখল করেন। তবে, অ্যান্ডি ম্যাকব্রায়ানের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৬৩ রানে পরাজিত হয়।
২০২৫ সালে ক্রেগ আরভিনের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের সদস্যরূপে বাংলাদেশ গমন করেন। ২০ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে সিলেটে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে অগ্রসর হন। খেলায় তিনি ৩/৫০ ও ৬/৭২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ১৭ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর দূর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ৩ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
একই বছর প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ বছর ক্রেগ আরভিনের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। খেলায় তিনি ১২ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/১৪৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। শোয়েব বশীরের অনবদ্য কৃতিত্বে সফরকারীরা চারদিনের টেস্টটি তিনদিনেই পরাজয়বরণ করে। ইনিংস ও ৪৫ রানে জয়লাভ করে ইংল্যান্ড দল। এরফলে, ইংল্যান্ড দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ টেস্টের চারটিতে জয়লাভ করে ও একটি ড্র হয়।
