২৯ জানুয়ারি, ১৯৫১ তারিখে অ্যান্টিগুয়ার আর্লিংস ভিলেজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, প্রশাসক ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি নিচেরসারিতে ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিং করতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। সচরাচর তাঁকে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আধুনিক ফাস্ট বোলিংয়ের জনক হিসেবে পরিচিতি ঘটানো হয়ে থাকে।
ছন্দোবদ্ধ দীর্ঘ দূরত্ব নিয়ে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। প্রয়োজনে পেস পরিবর্তন করে বাউন্সারে ব্যাটসম্যানকে খেলার বাইরে নিয়ে যেতেন। দ্বিতীয় বাউন্সার প্রথমটির ন্যায় একই জায়গায় ফেললেও আরও গতিশীল পেসে পরিণত করতেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে কম্বাইন্ড আইল্যান্ডস ও লিওয়ার্ড আইল্যান্ডস, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলস এবং ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ার ও লিচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৬৯-৭০ মৌসুম থেকে ১৯৮৪ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন।
১৯৭৪ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ৪৭ টেস্ট ও ৫৬টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে নিজ দেশে মাইক ডেনিসের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২৩ বছর বয়সে ৬ মার্চ, ১৯৭৪ তারিখে বার্বাডোসের ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এরফলে, অ্যান্টিগুয়ার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিনিধিত্ব করার গৌরব অর্জন করেন। খেলায় তিনি ১/৭৫ ও ২/৪৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাট হাতে নিয়ে ৯* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলেও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
৭ জুন, ১৯৭৫ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে চার পেসার নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দূর্দন্ড প্রতাপশালী দলের অন্যতম প্রধান সদস্য ছিলেন। গতিতে নিজেকে শীর্ষে নিয়ে যান ও নিজের সময়কালে অন্যতম ভয়ঙ্কর বোলারে পরিণত করেন।
১৯৭৫ সালে ভারত সফরে নিজের স্বর্ণালী সময়ে ছিলেন। নিজস্ব ১৯তম টেস্টে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। অদ্যাবধি এ কৃতিত্বটি বহাল তবিয়তে টিকে আছে। ১৯৭৫ সালে পার্থে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৫৯.৫ কিলোমিটার গতিবেগে নিজের দ্রুতগতির বোলিং করেছিলেন। টেস্টগুলো থেকে ২৫.৬১ গড়ে ২০২ উইকেট দখল করেছিলেন। দুই ইনিংসে সাত উইকেট এবং দুইবার খেলায় দশ উইকেট পেয়েছিলেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিচেরসারিতে বেশ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনটি অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছেন। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ খেলেন। ডেরিক মারেকে সাথে নিয়ে ষাটোর্ধ্ব ইনিংসের জুটি দাঁড় করিয়ে নাটকীয়ভাবে দলকে জয় এনে দেন। ঐ প্রতিযোগিতায় তাঁর দল শিরোপা জয় করেছিল। ১৯৭৯ সালের শিরোপা বিজয়ের সাথে নিজেকে জড়িয়েছিলেন।
১৯৭৬ সালে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৮ জুলাই, ১৯৭৬ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩/২২ ও ৬/৩৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ৬ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলায় সফরকারীরা ৪২৫ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৭৯-৮০ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৭* রানে সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৮২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, কলিন ক্রফ্ট ও আম্পায়ার ফ্রেড গুডলের টেস্ট নামে পরিচিতি পাওয়া তিক্ততাপূর্ণ খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা পিছিয়ে পড়ে।
আঘাতের পাশাপাশি উদীয়মান ফাস্ট বোলারদের আবির্ভাবে ১৯৮৩ সালে খেলার জগৎ থেকে সড়ে দাঁড়ান। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৮৩ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের ষষ্ঠ ও চূড়ান্ত টেস্ট খেলেন। খেলায় তিনি ১/৮১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে শূন্য রানে অপরাজিত ছিলেন। সুনীল গাভাস্কারের মনোরম দ্বি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
একই সফরের ৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৩ তারিখে জামশেদপুরে সর্বশেষ ওডিআইয়ে অংশ নেন। সব মিলিয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে ৮৮৯ উইকেট দখল করেছিলেন। পেস কমালেও শেষদিকে এসেও বলকে ঘুরাতে পারতেন। ইমরান খান তাঁর বলে টেস্টে নিজের বোল্ড হবার কথা তুলে ধরেছেন।
১৯৭৫ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ২০০৯ সালে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমের উদ্বোধনী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নাইটহুড পদবী লাভ করেন। অতঃপর, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে নর্থ স্ট্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম ওডিআইয়ে রিচি রিচার্ডসন ও কার্টলি অ্যামব্রোসকে নিয়ে কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দেন। ক্রিকেট পিচ প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণে প্রশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। ১৯৯০-এর দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
