| |

নরেন তামানে

৪ আগস্ট, ১৯৩১ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

১৯৫১-৫২ মৌসুম থেকে ১৯৬৮-৬৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বোম্বের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকের কাছেই তিনি ভারতের সেরা উইকেট-রক্ষক হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। বিশ্ব মানসম্পন্ন স্পিনারদের বল অবলীলাক্রমে মোকাবেলা করেছেন উইকেটের পিছনে অবস্থান করে। ওয়ালি গ্রাউট তাঁকে ডন টলনের সাথে তুলনায় এনেছিলেন। এমনকি অনেকের ন্যায় ডন ব্র্যাডম্যানও তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ উইকেট-রক্ষকের মর্যাদাদান করেছিলেন। স্ট্যাম্পের পিছনে দূর্দান্ত ভূমিকা রাখতেন। গুলাম আহমেদ, সুভাষ গুপ্তে কিংবা বিনু মানকড়ের বল সুন্দরভাবে সামলাতেন। এছাড়াও, অস্ট্রেলীয়দের আতঙ্ক হিসেবে জসু প্যাটেলের বল যুৎসঁইভাবে গ্লাভসবন্দী করতেন। পাশাপাশি, সুইং বলও দারুণভাবে সামলান।

১৯৫৫ থেকে ১৯৬১ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ২১ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে বিনু মানকড়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে পাকিস্তান গমন করেন। ১ জানুয়ারি, ১৯৫৫ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। পানানমল পাঞ্জাবি’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ ও দুইটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়িয়েছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৫৯ সালে ইংল্যান্ড সফরে সবিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। দ্য হিন্দুর প্রতিনিধি লিখেছিলেন যে, যে-কোন অধিনায়কই তাঁর ন্যায় খেলোয়াড়কে দলে নিতে চাইবেন। তাঁর মাঝে ঝলকানী নেই ঠিকই, তবে তাঁর কৌশল এক কথায় অপূর্ব। পলি উমরিগড় তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, তিনি বোলারদের বল হাতে ধরার ভঙ্গী দেখেই বুঝতে পারতেন। সুভাষ গুপ্তে’র ন্যায় স্পিনারদের দৌঁড়ে বোলিং করা দেখেই বুঝে নিতে যে তিনি কোন ধরনের বোলিং করবেন।

আরও কিছুটা ব্যাটিংয়ে পারদর্শীতা প্রদর্শন করতে পারলে হয়তোবা আরও অধিক টেস্ট খেলার সুযোগ সন্দেহাতীতভাবেই পেতেন। দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও নানা জোশী’র দিকে ধাবিত হয়। এরপর, বুধি কুন্দরনের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের কারণে তাঁর গ্লাভসের অপূর্ব দক্ষতা মার খায়।


কাকতালীয়ভাবে খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুটা ব্যাট হাতে তুলনামূলকভাবে ভালো খেলেন। বাহাওয়ালপুরে নিজস্ব দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। নয় নম্বরে মাঠে নেমে গুলাবরাই রামচাঁদের সাথে ৮২ ও শেষ উইকেটে আরও ৩৬ রান যুক্ত করেছিলেন। তবে, পরবর্তী ১৯ টেস্টে মাত্র সাতোর্ধ্ব গড়ে রান পেয়েছিলেন। তন্মধ্যে, আটটিতেই শূন্য রানের সন্ধান পান।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৮ গড়ে ১৪৫৯ রান পেয়েছেন। তবে, ৯৩ খেলায় অংশ নিলেও মাত্র ৯৬বার ব্যাট হাতে তাঁকে মাঠে নামার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এ পর্যায়ে অবশ্য বোম্বে দলের একাধিপত্য বজায় ছিল। এছাড়াও, এ অবস্থানেই তিনি ব্যাটিং করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।

তদুপরি, স্ট্যাম্পের পিছনে তিনি অধিক সুযোগ পেয়েছেন। দলে অন্তর্ভুক্তির পর থেকে মাধব মন্ত্রীকে কেবলই ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানো হয়। ২৫৩টি ডিসমিসালের মধ্যে ৭৯টি স্ট্যাম্পিং করেছেন। টেস্টে এ সংখ্যাটি ৫১-এর মধ্যে ১৬। ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক সিরিজে ১৯টি ডিসমিসাল ঘটিয়ে ভারতীয় রেকর্ড গড়েন যা অদ্যাবধি অক্ষত রয়েছে। পরবর্তীতে সৈয়দ কিরমানি তাঁর এ রেকর্ডে যুক্ত হলেও ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজ থেকে পেয়েছেন।

এক পর্যায়ে ফারুক ইঞ্জিনিয়ার উইকেট-রক্ষণের জন্যে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। এর পূর্বে কোন ভারতীয় উইকেট-রক্ষকই তাঁর অংশগ্রহণকৃত ২১ টেস্টের অধিক খেলতে পারেননি। প্রবীর সেন ও নানা জোশী’র সাথে তিনিও সৈয়দ কিরমানি’র পূর্ববর্তী যুগে সেরা উইকেট-রক্ষকের মর্যাদা পেয়েছেন।

প্রবীর সেন টেস্ট দলে থাকাকালে রঞ্জী ট্রফিতে বোম্বে দলের ব্যাটসম্যান হিসেবে মাধব মন্ত্রীকে যোগ্য সঙ্গ দিতেন। প্রবীর সেন ও নানা জোশী’র ন্যায় তিনি মানসম্মত স্পিনারদের বল উইকেটের পিছনে থেকে সামলে নিতেন। ৫১টি টেস্ট ডিসমিসালে ৩৫টি ক্যাচ ও ১৬টি স্ট্যাম্পিং করেছেন। তন্মধ্যে, সুভাষ গুপ্তে’র বল থেকে ৯ ক্যাচ ও ৯ স্ট্যাম্পিং এবং বিনু মানকড় ও গুলাম আহমেদ – উভয়ের বল থেকে সম্মিলিতভাবে ৮ ক্যাচ ও ৪ স্ট্যাম্পিং করেছিলেন। সংখ্যার দিক দিয়ে ফারুক ইঞ্জিনিয়ারের পূর্বে ভারতের যে-কোন উইকেট-রক্ষকদের মধ্যে সর্বাধিক ছিল। এ সময়ে প্রবীর সেন ২০ ক্যাচ ও ১১ স্ট্যাম্পিং এবং নানা জোশী ১৮ ক্যাচ ও ৯ স্ট্যাম্পিং করেছিলেন।

১৯৬০-৬১ মৌসুমে নিজ দেশে ফজল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানীয় দলের মুখোমুখি হন। ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৬০ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। শূন্য রানে বিদেয় নেন ও একটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ০-০ ব্যবধানে অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ১৯৮০-এর দশকে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর, ১৯৯০-এর দশকের সূচনালগ্নে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি হন।

১৯ মার্চ, ২০০২ তারিখে ৭০ বছর ২২৭ দিন বয়সে মুম্বইয়ের ক্লিনিকে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • | | |

    গ্রেগ ক্যাম্পবেল

    ১০ মার্চ, ১৯৬৪ তারিখে তাসমানিয়ার লঞ্চেস্টন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর উত্থান পর্ব বেশ দর্শনীয় ছিল। তবে, আঘাতের কারণে খেলোয়াড়ী জীবন স্বল্প স্থায়ী হয়ে পড়ে। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুম থেকে ১৯৯১-৯২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর…

  • | |

    মিক মলোন

    ৯ অক্টোবর, ১৯৫০ তারিখে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার স্কারবোরা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। লিকলিকে গড়নের অধিকারী। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুম থেকে ১৯৮১-৮২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ও…

  • | |

    ঋষিকেশ কানিতকর

    ১৪ নভেম্বর, ১৯৭৪ তারিখে মহারাষ্ট্রের পুনেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ক্রীড়াপ্রেমী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হেমন্ত কানিতকর ভারত ও মহারাষ্ট্রের পক্ষে খেলেছেন। ভ্রাতা আদিত্য গল্ফ এবং বৌমা ও শ্যালিকা রাধিকা তুলপুলে টেনিস খেলোয়াড়…

  • | |

    স্টিভ এলোয়ার্দি

    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৫ তারিখে রোডেশিয়ার বুলাওয়েতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। শৈশবকালে পরিবারের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যান। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে ট্রান্সভাল স্কুলসের পক্ষে খেলেন। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুম থেকে ২০০৩ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন।…

  • |

    ইমরুল কায়েস

    ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭ তারিখে মেহেরপুরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। বামহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ের পাশাপাশি মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণ কর্মে অগ্রসর হতেন। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি (১.৭০ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ইমরুল কায়েস দলীয়সঙ্গীদের কাছে ‘সাগর’ ডাকনামেই অধিক পরিচিত। শৈশবে ফুটবল খেলতেন। তবে, ক্রিকেটের…

  • |

    ভরত রেড্ডি

    ১২ নভেম্বর, ১৯৫৪ তারিখে তামিলনাড়ুর মাদ্রাজে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৩-৭৪ মৌসুম থেকে ১৯৮৪-৮৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে তামিলনাড়ুর প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৭৩ সালে ইংল্যান্ড সফরে ভারতের বিদ্যালয় দলের নেতৃত্বে থেকে বেশ সফলতার…