২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৩ তারিখে অ্যান্টিগুয়ার সুইটস ভিলেজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
ক্রিকেটের পাশাপাশি বাস্কেটবল খেলায় দক্ষ ছিলেন। যুবক অবস্থায় বাস্কেটবল খেলতেন ও এ ক্রীড়ায় খেলোয়াড়ী জীবনে প্রবেশ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গমন করেন। সমুদ্র সৈকতে টেনিস-বল ক্রিকেট খেলতেন। বিদ্যালয় জীবনে খেললেও দীর্ঘ সময়ের কারণে এ খেলা থেকে দূরে সড়ে যান। এক পর্যায়ে অবশ্য ক্রিকেটের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তুলনামূলকভাবে বেশ দেরীতে ২২ বছর বয়সের পর প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
৬ ফুট ৭ ইঞ্চির দীর্ঘকায় গড়নের অধিকারী তিনি। ‘লিটলবার্ড’ ডাকনামে ভূষিত কার্টলি অ্যামব্রোস স্বীয় উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে অগণিত রেকর্ড ভঙ্গ করেন ও সর্বকালের অন্যতম শীর্ষ উইকেট শিকারীতে পরিণত হন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা খেলোয়াড়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছেন। বিশ্বের যে-কোন ব্যাটসম্যানের সমীহের পাত্রে পরিণত হয়েছেন।
১৭ বছর বয়সে বিদ্যালয় ত্যাগ করে শিক্ষানবীশ কাঠমিস্ত্রী হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুম থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে লিওয়ার্ড আইল্যান্ড ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নর্দাম্পটনশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯৮৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ৯৮ টেস্ট ও ১৭৬টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে নিজ দেশে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১২ মার্চ, ১৯৮৮ তারিখে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। একই সফরের ২ এপ্রিল, ১৯৮৮ তারিখে জর্জটাউনে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ২৫* ও ১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/১০৮ ও ০/১৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের অসাধারণ অল-রাউন্ড কৃতিত্বে সফরকারীরা ৯ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৮৮ সালে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২১ জুলাই, ১৯৮৮ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডে বিপক্ষে খেলেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৪/৫৮ ও ৩/৪০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
১৯৯১ সালে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ৬ জুন, ১৯৯১ তারিখে লিডসের হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ০ ও ১৪ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ফিলিপ ডিফ্রিটাসের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৪৯ ও ৬/৫২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক গ্রাহাম গুচের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ৮ আগস্ট, ১৯৯১ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৩/৮৩ ও ০/৪৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, উভয় ইনিংসে শূন্য রান সংগ্রহ করে যথাক্রমে ফিল টাফনেল ও ফিলিপ ডিফ্রিটাসের বলে বিদেয় নেন। রবিন স্মিথের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে জয় পেলে সিরিজটি ২-২ ব্যবধানে শেষ করতে সক্ষম হয়। এ সিরিজে ৩৭ রান ও ২৮ উইকেট লাভ করে গ্রাহাম গুচের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯২ সালে নিজ দেশে কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৮ এপ্রিল, ১৯৯২ তারিখে বার্বাডোসের ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। খেলায় তিনি ২/৪৭ ও ৬/৩৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৬* ও ৬ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অনবদ্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৫২ রানে জয়লাভ করে। অ্যান্ড্রু হাডসনের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে রিচি রিচার্ডসনের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ২৩ জানুয়ারি, ১৯৯৩ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৬/৭৪ ও ৪/৪৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ০ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১ রানে পরাভূত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ব্রায়ান লারা’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। স্মর্তব্য যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ – দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার এটিই প্রথম টেস্ট ছিল। ২৬ নভেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ২/৬৩ ও ২/৪২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ০ ও ০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। শন পোলকের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৪ উইকেটে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
২০০০ সালে জিমি অ্যাডামসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ৩১ আগস্ট, ২০০০ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩/৬৮ ও ৪/৭৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৫ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মাইক অ্যাথার্টনের চমৎকার ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১৫৮ রানে পরাভূত হলে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। এ সিরিজে ২৩ রান সংগ্রহসহ ৩৪ উইকেট দখল করে ড্যারেন গফের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলার পর ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। টেস্টগুলো থেকে ২১-এর কম গড়ে ৪০৫ উইকেট পেয়েছিলেন। ওডিআইগুলো থেকে ২৪.১২ গড়ে ২২৫ উইকেট পেয়েছেন। এ পর্যায়ে ওভারপ্রতি ৩.৪৮ গড়ে রান খরচ করেছেন।
পরিসংখ্যানগতভাবে খেলোয়াড়ী জীবনের অধিকাংশ সময়ই তিনি ক্রিকেটের সেরা বোলারদের অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। বিশ্বব্যাপী বিশাল দেহ নিয়ে ক্ষুরধার পেস ও রক্তচক্ষু নিয়ে ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে প্রবলবিক্রমে নিজেকে উপস্থাপিত করেছিলেন। তবে, মাঠ ও মাঠের বাইরে খুব কমই কথাবার্তা বলতেন। প্রচলিত রয়েছে যে, ১৯৯১ সালে জনৈক সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাৎকার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে, ‘টাইম টু টক’ শীর্ষক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের ভূমিকাংশ রিচি বেনো ও স্টিভ ওয়াহ’র মাধ্যমে লিখে প্রকাশ করেছিলেন। ‘রেগে ব্যান্ড বিগ ব্যাড ড্রিড এন্ড দ্য বল্ডহেডের’ বাস গিটারবাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯২ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। ২০১১ সালে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অতঃপর, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে অ্যান্টিগুয়ার নর্থ স্ট্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম ওডিআইয়ে অ্যান্ডি রবার্টসের নেতৃত্বে রিচি রিচার্ডসনকে সাথে নিয়ে কুচকাওয়াজে অংশ নেন। খেলা চলাকালীন নাইটহুড পদবী লাভ করেন। ৬ জানুয়ারি, ২০২১ তারিখে ইংল্যান্ডে ফাস্ট-বোলিং কোচের দায়িত্ব পালনে আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
