১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৬ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনসহ ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
১৯৮৪-৮৫ মৌসুম থেকে ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে নন্দেস্ক্রিপ্টস ক্রিকেট ক্লাব ও সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯৮৫ থেকে ১৯৯৬ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ৪১ টেস্ট ও ১৪৭টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে দিলীপ মেন্ডিসের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে পাকিস্তান গমন করেন। ৭ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ১৭ ও ১২ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। তবে, অরবিন্দ ডি সিলভা’র অসাধারণ শতক সত্ত্বেও স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। একই সফরের ৩ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে হায়দ্রাবাদের সিন্ধুতে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন।
১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে নিজ দেশে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২২ মার্চ, ১৯৮৬ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৩৯ ও ১১৬* রান সংগ্রহ করেছিলেন। নিজস্ব প্রথম শতরানের ইনিংসটি ৪৯৫ মিনিটে ১৪টি চারের মারে সম্পন্ন হয়েছিল। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র সাথে তৃতীয় উইকেটে ২৪০* রানের নিরবচ্ছিন্ন জুটি গড়ে শ্রীলঙ্কার পক্ষে যে-কোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন। তাঁর অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে ১-১ ব্যবধানে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯০-৯১ মৌসুমে চণ্ডীগড়ে দলের ৮২ রানের মধ্যে তাঁর অবদান ছিল ৫২ রানের অপরাজিত ইনিংস।
একই মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অংশ নেন। ১১৯ ও ১০২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/৩৬ ও ০/১২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। অ্যান্ড্রু জোন্স ও ইয়ান স্মিথের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯ আগস্ট, ১৯৯২ তারিখে শ্রীলঙ্কার তিনজন খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে একই দিনে শতক হাঁকান। ফলশ্রুতিতে, কলম্বোর সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে সফররত অজি দলের বিপক্ষে ৫৪৭/৮ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা ১২৭ ও অভিষেকধারী রমেশ কালুবিতরানা ১৩২ রানের অপরাজিত ইনিংসের সাথে তিনি করেছিলেন ১৩৭ রান। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং ধ্বস নামে ও তাঁদের শেষ আট উইকেটের পতন ঘটে মাত্র ৩৭ রানে। এরফলে, সফরকারীরা ১৬ রানের নাটকীয় জয় পায়।
১৯৯৩ সালে নিজ দেশে কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৫ আগস্ট, ১৯৯৩ তারিখে মোরাতুয়ায় অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২৬ ও ২৭ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, দলীয় অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ১৮ মার্চ, ১৯৯৫ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ২৮ ও ১২৭ রান সংগ্রহ করেন। তবে, চামিণ্ডা ভাসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কা দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত খেলায় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ খেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে দলীয় সঙ্গীদের অবদান ছিল ১৪৪ অথচ নিজে করেছিলেন ১৪৩ রান। এছাড়াও, প্রথম ইনিংসে ২৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি, খেলায় একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, গ্লেন ম্যাকগ্রা’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
অরবিন্দ ডি সিলভা’র সহযোগিতা নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে টপকে ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলের শিরোপা বিজয়ে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। ব্যক্তিগতভাবে আরও একটি অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছিলেন।
১৯৯৬ সালে নিজ দেশে অ্যালিস্টেয়ার ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। একবার ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ৮৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, হাসান তিলকরত্নে’র অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলায় স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়েছিল।
কৌশলগতভাবে তিন নম্বর অবস্থানের উপযোগিতা তুলে ধরেন। এগারো বছর ধরে শ্রীলঙ্কার প্রধান ব্যাটিং চালিকশক্তি ছিলেন। প্রায় একাকী বিশ্ব সেরা দলগুলোর বিপক্ষে ক্রমাগত প্রতিরক্ষাব্যূহ গড়ে তুলে সমীহের পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন।
কিশোর অবস্থাতে উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। কিন্তু, বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ে অংশ নেয়ার পর অনুশীলনীতে যোগ দিতে নিজ দেশে ফিরতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ পর্যায়ে মেলবোর্নভিত্তিক ক্লাব ক্রিকেটের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। বর্তমানে সেখানেই তিনি বসবাস করছেন। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রশাসনে জড়িয়ে পড়েন। শ্রীলঙ্কা দলের ক্রিকেট ব্যবস্থাপক হিসেবে মনোনীত হন। জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীতে যুক্ত হন। পদত্যাগ করার পর ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ তারিখে পুণরায় তাঁকে নিযুক্ত করা হয়। ১ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে নাইজেরিয়া দলের প্রধান কোচ হিসেবে মনোনীত হন।
