| | |

সিকে নায়ড়ু

৩১ অক্টোবর, ১৮৯৫ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর অফ-ব্রেক বোলিংশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হতেন। ১৯৩০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। পাশাপাশি, দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯১৬-১৭ মৌসুম থেকে ১৯৬৩-৬৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে অন্ধ্র, সেন্ট্রাল ইন্ডিয়া, সেন্ট্রাল প্রভিন্সেস ও বেরার, হিন্দু, হোলকার, হায়দ্রাবাদ, রাজপুতানা ও ইউনাইটেড প্রভিন্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

অত্যন্ত নিখুঁততার সাথে বলে আঘাত করতেন ও বেশ দূরে ফেলতেন। সন্দেহাতীতভাবে আর্থার জিলিগানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের বিপক্ষে নিজের সেরা ইনিংসটি খেলেছেন। ১৯২৬-২৭ মৌসুমে ঝড়োগতিতে ১৫৩ রান তুলেন। ১০০ মিনিটে ১৩টি চার ও ১১টি ছক্কার মার ছিল। আনন্দজী দোসা হিসেব কষে দেখিয়েছেন যে, ৪৯ শটে এ রান তুলেছেন। সম্ভবতঃ এটিই যে-কোন ভারতীয় ক্রিকেটারের একটিমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস ছিল। এ ইনিংসের বদৌলতে ভারতীয় ক্রিকেট পুরোপুরি বদলে যায়। এ ইনিংসের কল্যাণেই ভারত দল টেস্ট মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। এছাড়াও, আর্থার জিলিগানের প্রত্যক্ষ প্রভাবে ১৯২৯ সালে ভারত দল আইসিসির পূর্ণাঙ্গ সদস্যের মর্যাদা পায় ও ১৯৩২ সালে ভারত দল তাদের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেয়।

খুব সহজেই ভারতের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী প্রথম অসাধারণ ক্রিকেটারের মর্যাদা পেয়েছেন। হোলকার সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হিসেবে আত্মবিশ্বাসী মনোভাব ও স্পার্টান দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে মাঠ ও মাঠের বাইরে ভূমিকা রেখেছেন। সংস্কৃতি চর্চায় নিজেকে দলীয় সঙ্গীদের কাছ থেকে পৃথক রেখেছেন। তবে, হোলকারের সদস্য ডেনিস কম্পটনকে মদ্যপানের অনুমতি দিয়েছিলেন।

১৯৩২ থেকে ১৯৩৬ সময়কালে ভারতের পক্ষে সাতটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৩২ সালে দলের নেতৃত্বে থেকে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৫ জুন, ১৯৩২ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে দলের অন্য সকলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৩৬ বছর বয়সী সিকে নায়ড়ুকে দলের প্রথম অধিনায়কের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া হয়। টেস্টের প্রথম সকালে স্বাগতিক ইংল্যান্ড এক পর্যায়ে ১৯/৩ করে। খেলায় তাঁর দল ১৫৮ রানে পরাজিত হয়েছিল। ২/৪০ ও ০/২১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান এবং একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৪০ ও ১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এ সফরে রান সংগ্রহে শীর্ষস্থান অধিকার করেন।

এ সফরে ৪০ গড়ে ১৬১৮ রান ও ২৬ গড়ে ৬৫ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। তন্মধ্যে, একটি শট স্কয়ার বাউন্ডারি এলাকার ওপর দিয়ে যায়। কেবলমাত্র মোহাম্মদ নিসারঅমর সিং তাঁর তুলনায় অধিক উইকেটের সন্ধান পান। ফিল্ডার হিসেবে অন্য যে-কারোর চেয়ে অধিক ক্যাচ তালুবন্দী করেন। সুশৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের অধিকারী থেকে ফিল্ডিংয়ে দারুণ দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন।

টেস্টে সব মিলিয়ে ৩৬ ঊর্ধ্ব বয়স নিয়ে ২৫ গড়ে ৩৫০ রান ও মিডিয়াম-পেস বোলিংয়ে ৪৩ গড়ে ৯ উইকেট পেয়েছিলেন। তবে, ভিজ্জি’র উপস্থিতির কারণে ১৯৩৬ সালের সফরে দলের নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হন। ১৫ আগস্ট, ১৯৩৬ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১/৮২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ৫ ও ৮১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ টেস্টে ইংল্যান্ড দল ৯ উইকেটে জয় পায় ও ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

৩৬ গড়ে প্রায় বারো হাজার রান এবং সিম ও অফ-ব্রেকের সংমিশ্রণে ২৯ গড়ে ৪১১ উইকেট দখল করেছিলেন। স্মর্তব্য যে, ৬৮ বছর বয়সেও ক্রিকেট খেলায় অংশ নিতেন। প্রায় ৫০ বছরব্যাপী প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সরব ছিলেন। ৭০ বছর বয়সে খেলা থেকে দূরে সড়ে যান। এ সময়ে ৩৬ গড়ে ১১৮২৫ রান ও ২৯ গড়ে ৪১১ উইকেট দখল করেছিলেন। এছাড়াও, দূর্দান্ত ফিল্ডার হিসেবে সুনাম কুড়ান। নয় মৌসুমে হোলকার দলের নেতৃত্বে থেকে আটবার চূড়ান্ত খেলায় নিয়ে যান। তন্মধ্যে, চারবার তাঁর দল শিরোপা জয় করে।

পরবর্তীকালে দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি হন। এ সময়ে কিংবদন্তীতূল্য অল-রাউন্ডার বিনু মানকড়ের বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। সফরে তাঁকে রাখা হয়নি। ফলশ্রুতিতে, ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে হ্যাসলিংডনের সাথে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে বিবাদমান অবস্থা ছিল। উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানের মধ্যকার খেলায় এলবিডব্লিউর আবেদন অগ্রাহ্য হলে বিমারসহ সকল ধরনের বোলিং করে ৬১ বছর বয়সী সিকে নায়ড়ুকে বিদেয় করেন।

১৯৩৩ সালে তাঁকে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মর্যাদা দেয়া হয়। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১৯৫৫ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণ পদক লাভ করেন। সিসিআই ব্যাঙ্কুয়েট হল তাঁর নামানুসরণে রাখা হয়। নাগপুরের একটি রাস্তার নামকরণ হয় ও ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কর্তৃক আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পান। তাঁর ভ্রাতা সিএস নায়ড়ু ভারতের পক্ষে টেস্টে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, তাঁর অপর ভ্রাতাদ্বয় – সিএল নায়ড়ু ও সিআর নায়ড়ু প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছেন। সিএন ও প্রকাশ নায়ড়ু নামীয় সন্তানদ্বয়, নাতি বিজয় এবং ভ্রাতৃষ্পুত্র ডিডি গোবিন্দরাজ ও ডি ইন্দার রাজও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের সাথে যুক্ত ছিলেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি হকি ও ফুটবলে দক্ষ ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ৭২ বছর ১৪ দিন বয়সে ১৪ নভেম্বর, ১৯৬৭ তারিখে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে তাঁর দেহাবসান ঘটে। মৃত্যু পরবর্তীকালে ভারতে অধিনায়কত্ব ও আজীবন সম্মাননা হিসেবে সিকে নায়ড়ু পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। এছাড়াও, ভারতের অনূর্ধ্ব-২৩ প্রতিযোগিতাও তাঁর নামানুসরণে রাখা হয়েছে।

Similar Posts

  • | | |

    ডাডলি নোর্স

    ১২ নভেম্বর, ১৯১০ তারিখে নাটালের ডারবানে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, লেখক ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, ডানহাতে বোলিং করতে পারতেন। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাসূলভ স্ট্রোকপ্লে মারতেন। ১৯৩১-৩২ মৌসুম থেকে ১৯৫২-৫৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান…

  • |

    আলফ্রেড মার

    ২৮ মার্চ, ১৮৬২ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের পিরমন্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ১৮৮০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৮৮২-৮৩ মৌসুম থেকে ১৮৯০-৯১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী…

  • | |

    জন রিডম্যান

    ৯ অক্টোবর, ১৮৬৫ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার গিলবার্টন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৮৯০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ‘ডিনি’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। দর্শনীয় ব্যাটসম্যান না হলেও কার্যকর ভূমিকা পালন করতেন। পরিবর্তিত বোলার হিসেবে ব্যবহৃত হতেন। প্রকৃতমানসম্পন্ন ফিল্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ…

  • | |

    মোহাম্মদ হাফিজ

    ১৭ অক্টোবর, ১৯৮০ তারিখে পাঞ্জাবের সারগোদায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং কর্মে অগ্রসর হন। পাকিস্তান দলের পক্ষে সকল স্তরের ক্রিকেটে অংশ নেয়াসহ অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। সচরাচর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কৌশলগতভাবে প্রয়োজনমাফিক রক্ষণাত্মক ঢংয়েও অগ্রসর হয়ে থাকেন। পাকিস্তান দলের অন্যতম অনুসঙ্গ তিনি। বেশ কয়েকবার বোলিং…

  • | |

    শিখর ধবন

    ৫ ডিসেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে দিল্লিতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। বামহাতে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করে থাকেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৪-০৫ মৌসুম থেকে ২০১৯-২০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন।…

  • |

    ব্রেট লি

    ৮ নভেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের ওলংগং এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। ‘বিং’ ডাকনামে ভূষিত ব্রেট লি ৬ ফুট ২ ইঞ্চি (১.৮৭ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। সন্দেহাতীতভাবে অন্যতম গতিসম্পন্ন বোলার হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। ১৯৯৪-৯৫…