নিউজিল্যান্ড দল শুরুতে দুইবার সফলতা পেলেও চ্যাপেল ভ্রাতৃদ্বয় খেলাটিকে নিজেদের করে নেয়। প্রবল বাতাসে আক্রমণ সামলাতে ব্যস্ত হলেও গ্রেগ চ্যাপেল ব্যতিক্রম ছিলেন। এ পর্যায়ে তিনি রে লিন্ডওয়াল বা হ্যারল্ড লারউডের ন্যায় বোলারদেরকেও এক চোট নিতে পারতেন। দৃশ্যতঃ তিনি যে-কোন ধরনের বল মোকাবেলা করছিলেন। পাশাপাশি, ইয়ান চ্যাপেলও তাঁর স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছোটাচ্ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল ও তাঁর ভ্রাতা গ্রেগ চ্যাপেল নিজ দেশে সাম্প্রতিককালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে উভয়েই মাত্র ত্রিশোর্ধ্ব গড়ে রান তুলতে পেরেছিলেন। তবে, নিউজিল্যান্ড সফরের শুরুতে তাঁরা দারুণ ব্যাটিং ছন্দ ফিরে পান। উভয়েই সিরিজের প্রথম টেস্টে শতক হাঁকান। এ পর্যায়ে টেস্টে এটিই যে-কোন ভ্রাতৃদ্বয়ের শতরানের ইনিংস খেলার প্রথম ঘটনা হিসেবে চিত্রিত হয়ে পড়ে। এ ঘটনার পূর্বে কেবলমাত্র একবারই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে যে-কোন ভ্রাতৃদ্বয়ের শতক হাঁকানো ঘটনা ঘটেছিল। ১৮৯৯ সালে ওরচেস্টারশায়ার বনাম হ্যাম্পশায়ারের খেলায় আর. ই. ফস্টার ও ডব্লিউ. এল. ফস্টার ভ্রাতৃদ্বয় শতক হাঁকিয়েছিলেন।
চ্যাপেল ভ্রাতৃদ্বয় ১৯৭২ সালের ওভালে প্রথম ভ্রাতৃদ্বয় হিসেবে টেস্টে দ্বি-শতরানের জুটি গড়েন। ওয়েলিংটন টেস্টে তাঁরা অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় উইকেটে ২৬৪ রান তুলে এ রেকর্ডকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। ইয়ান চ্যাপেল চার ঘণ্টা সতেরো মিনিটে ২০৭ বল ও গ্রেগ চ্যাপেল দুই ঘণ্টা পঁয়ত্রিশ মিনিটে ১৬০ বল মোকাবেলায় তিন অঙ্কের কোটা স্পর্শ করেন। তবে, উইকেট-রক্ষক কেন ওয়াডসওয়ার্থ বেশ দৌঁড়ে এসে ইয়ান চ্যাপেলের (১৪৫) স্মরণীয় ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করার কারণেই কেবল তাঁদের জুটি থেমে যায়।
এক নজরে | |
---|---|
দল | নিউজিল্যান্ড – অস্ট্রেলিয়া |
তারিখ | ১ – ৬ মার্চ, ১৯৭৪, ওয়েলিংটন, ১ম টেস্ট |
টস | অস্ট্রেলিয়া |
স্কোর কার্ড | অস্ট্রেলিয়া: ৫১১/৬ ডি. ও ৪৬০/৮; নিউজিল্যান্ড: ৪৮৪ |
ফলাফল | ড্র |
গ্রেগ চ্যাপেলের ২৪৭* ও ১৩৩ রান সংগ্রহের বিষয়টি চতুর্থ ঘটনা হিসেবে একই টেস্টে শতক ও দ্বি-শতক হাঁকানোর চতুর্থ ঘটনা হিসেবে চিত্রিত হয়ে পড়ে। বাদ-বাকী ঘটনাগুলো গত পাঁচ বছরে ঘটে। কে. ডি. ওয়াল্টার্স, ২৪২ ও ১০৩, অস্ট্রেলিয়া ব ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সিডনি, ১৯৬৮-৬৯; এস. এম. গাভাস্কার, ১২৪ ও ২২০, ভারত ব ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পোর্ট অব স্পেন, ১৯৭০-৭১; এল. জি. রো, ২১৪ ও ১০০*, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব নিউজিল্যান্ড, কিংস্টন, ১৯৭১-৭২।
পরদিন অস্ট্রেলিয়া দল ৫১১/৬ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। গ্রেগ চ্যাপেল ছয় ঘণ্টার অল্প কম সময় নিয়ে ২৪৭ রানে অপরাজিত থাকেন। তাঁর ইনিংসে একটি ছক্কা ও ত্রিশটি চারের মার ছিল। সফরকারীরা ৪৮৫ মিনিট ব্যাটিং করে। কেবলমাত্র ডেল হ্যাডলি প্রতিপক্ষের সমীহের পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। ব্যাটিং উপযোগী পিচে স্বাগতিকরাও সদ্ব্যবহারে অগ্রসর হয়। দ্বিতীয় উইকেটে গ্লেন টার্নার ও জন মরিসন ১০৮ রানের জুটি গড়েন। দিন শেষে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৬১/২।
পূর্বরাত্রে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত ও ঠাণ্ডার কারণে তৃতীয় দিন ১:১৫ ঘটিকার পূর্ব-পর্যন্ত খেলা শুরু করা যায়নি। অধিনায়ক বেভান কংডন ও ব্রায়ান হ্যাস্টিংস নিজেদের মেলে ধরেন। পনেরো মিনিট পূর্বে মন্দালোকের কারণে খেলা শেষ হলেও মাত্র এক উইকেটের পতন ঘটেছিল। কংডন ৪৮ রানে জীবন ফিরে পান। আধিপত্য ধরে রাখার সংগ্রাম হলেও প্রত্যেক ব্যাটসম্যানই কম-বেশী মনোরম স্ট্রোক খেলেন। পৌনে পাঁচ ঘণ্টায় বেভান কংডন (১৩২) তাঁর ষষ্ঠ টেস্ট শতক ২৫২ বল মোকাবেলা করে করেন। চতুর্থ দিনের রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশে প্রায় একই সময় নিয়ে ব্রায়ান হ্যাস্টিংস (১০১) তাঁর শতক হাঁকাতে ২৬৭ বল মোকাবেলা করেন। তাঁদের সংগৃহীত ২২৯ রান ১৯৭২ সালে জর্জটাউনে নিউজিল্যান্ডের চতুর্থ উইকেটের রেকর্ডকে ছাঁপিয়ে যায়। এ পর্যায়ে টেস্টে নিউজিল্যান্ডের যে-কোন উইকেটে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল। এ জুটি ভেঙ্গে গেলে অস্ট্রেলিয়া খেলায় পূর্ণ আধিপত্য নিয়ে নেয়। তাদের শেষ ছয় উইকেটে ৮৬ রান যুক্ত হয়। তন্মধ্যে শেষ উইকেটে হ্যাডলি হাওয়ার্থ (২৯*) ও মারে ওয়েব (১২) ৪৭ রান তুলেছিল। অস্ট্রেলিয়া ২৭ রানে এগিয়ে যায় ও ৮৬/১ তুলে দিন শেষ করে। দলটি চূড়ান্ত দিনে জয়ের কোন চেষ্টাই করেনি। হয়তোবা তারা ভুলেই গিয়েছিল যে পিচটি রানের প্রাচুর্য্যতায় ভরপুর ছিল। ইয়ান রেডপাথ (৯৩) ও ইয়ান চ্যাপেল (১২১) দ্বিতীয় উইকেটে ১৪১ রান তুলে। মধ্যাহ্নবিরতিতে অস্ট্রেলিয়া ২৪০ রানে এগিয়েছিল। ইয়ান চ্যাপেল তাঁর শতক হাঁকাতে তিন ঘণ্টার অল্প বেশী সময় নেন। এ সফরে এটি তাঁর উপর্যুপরী তৃতীয় শতক ছিল। এক ঘণ্টার মধ্যেই অস্ট্রেলিয়া দল তৃতীয় শতকের সন্ধান পায়।
গ্রেগ চ্যাপেল (১৩৩) আবারও খেলাটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন ও অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রেখে দুই ঘণ্টা চব্বিশ মিনিটে শতরানে পৌঁছান। এ পর্যায়ে চ্যাপেল ভ্রাতৃদ্বয় মাত্র ৮৬ রানের জুটি গড়লেও সময় নেন মাত্র চুয়াল্লিশ মিনিট। অস্ট্রেলীয়রা খেলা শেষ হবার আধা ঘণ্টা পূর্ব-পর্যন্ত ব্যাটিং করতে থাকে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সর্বমোট ১৪৫৫ রান সংগ্রহের নতুন রেকর্ড হয়। তন্মধ্যে, চ্যাপেল ভ্রাতৃদ্বয় তিনবার বিদেয় নিয়ে ৬৪৬ রান তুলে। গ্রেগ চ্যাপেলের সর্বাপেক্ষা স্মরণীয় অর্জন ছিল ওয়েলিংটন টেস্টে সর্বাধিক ৩৮০ রান সংগ্রহ করা। তাঁর পূর্বে অ্যান্ড্রু স্যান্ডহাম ১৯২৯-৩০ মৌসুমে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার টেস্টে ৩২৫ ও ৫০ রান সংগ্রহ করেছিলেন।