Skip to content

সেলিম দুরানি

1 min read

১১ ডিসেম্বর, ১৯৩৪ তারিখে আফগানিস্তানের কাবুলে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, কার্যকর স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

কাবুলে জন্মগ্রহণ করলেও ভারতে শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। ক্রিকেট বিশ্বে তিনি ‘প্রিন্স সেলিম’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আফগানিস্তানী পাঠান হিসেবে চমৎকার চেহারার লম্বাটে গড়নের অধিকারী ছিলেন। মাঠ ও মাঠের বাইরে নিজেকে মাতিয়ে রাখতেন। ব্যাট কিংবা বল হাতে নিয়ে খেলায় জয় করায়ত্ত্ব করতে পারতেন। তজ্জন্যে অবশ্য তাঁকে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে থাকতে হতো। চলচ্চিত্র অভিনেতার ন্যায় তাঁর চেহারা ছিল। ‘চরিত্র’ নামীয় চলচ্চিত্রে পারভিন ববি’র বিপরীতে নায়ক হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিলেন।

১৯৬০-এর দশকের শুরুরদিকে একগুচ্ছ তরুণ ভারতীয় ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তাঁদেরকে মাঠে দেখে দর্শকদের নয়ন জুড়াতো। বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে আফগানিস্তানের অংশগ্রহণের অনেক পূর্বে তিনিই কাবুলে জন্মগ্রহণকারী একমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ১৯৩৭ সালে তাঁর পিতা আব্দুল আজিজ ভারতে চলে আসেন ও দুইটি অনানুষ্ঠানিক টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। তবে, ভারত বিভাজনের পর তাঁর পিতা পাকিস্তানে চলে গেলেও রাজস্থানে মাতাকে নিয়ে বসবাস করতে থাকেন।

তাঁর পিতার খেলার প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল। ডানহাতি ব্যাটসম্যান হলেও পিতা তাঁকে বামহাতে ব্যাট ধরাতে চেয়েছিলেন। তারকা ক্রিকেটার বিনু মানকড়ের সাহচর্য্যে তরুণ হিসেবে বামহাতি অর্থোডক্স স্পিন বোলিংয়ের কিছু কৌশল আয়ত্ত্বে আনেন। কোন এক খেলায় উদয়পুরের মহারাজা তাঁর ব্যাটিংয়ে মজে যান। খেলাকালীন বিনু মানকড় তাঁকে রাজস্থানে যাবার প্রস্তাবনা দিলে তিনি সানন্দে রাজী হন।

১৯৫৩-৫৪ মৌসুম থেকে ১৯৭৭-৭৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে গুজরাত, রাজস্থান ও সৌরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৫৩ সালে ১৮ বছর বয়সে সৌরাষ্ট্রের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ও ঐ খেলায় শতক হাঁকান। তবে, পরবর্তীকালে অধিকাংশ প্রথম-শ্রেণীর খেলাই রাজস্থান ও গুজরাতের পক্ষে খেলেছেন। রাজস্থানে থাকাকালীন তাঁর দূর্দান্ত খেলা দুঙ্গারপুরের রাজ সিংয়ের নজর কাড়ে।

১৯৬০ থেকে ১৯৭৩ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ২৯ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। টেস্টগুলো থেকে ১২০২ রান ও ৭৫ উইকেট দখল করেছিলেন। ১৯৫৯-৬০ মৌসুমে নিজ দেশে অজি দলের মুখোমুখি হন। ১ জানুয়ারি, ১৯৬০ তারিখের নববর্ষের দিনে বোম্বের ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। বুধি কুন্দরনের সাথে একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় তাঁর। রিচি বেনো’র নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছিলেন। কানপুরে পূর্বেকার টেস্টে জসু প্যাটেলের অনবদ্য ভূমিকায় ভারত দল বিস্ময়কর জয় পায়। তবে, এ টেস্ট শুরুর পূর্বে জসু প্যাটেল আঘাতের কবলে পড়লে তিনি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। দশ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৮ রান তুলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র এক ওভার বোলিং করে ১৯ রান খরচ করে ফেলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে এগুতে থাকে।

এক বছর পর বোম্বের বিপক্ষে রঞ্জী ট্রফির চূড়ান্ত খেলায় ৮/৯৯ পান। সৌভাগ্যবশতঃ পরের বছর ভারত সফরে আসা টেড ডেক্সটারের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের বিপক্ষে খেলার জন্যে তাঁকে মনোনীত করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। বোম্বেতে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে ৭১ রান তুলেন। দীর্ঘক্ষণ ধরে ক্রিজে থাকা দলীয় সঙ্গী চান্দু বোর্দে’র ৬৯ রান সংগ্রহকালে ৫ম উইকেট জুটিতে তাঁরা ১৪২ রান সংগ্রহ করেন।

কলকাতায় অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে তিনি আট উইকেট দখল করেন ও প্রথম ইনিংসে ৪৩ রান তুলেছিলেন। এটিই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের দ্বিতীয় টেস্ট বিজয় ছিল। মাদ্রাজের কর্পোরেশন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত পরের টেস্টে ১০ উইকেট লাভ করেন। এ টেস্টেও ভারত দল জয় পেয়েছিল। ফলশ্রুতিতে, তিনি ভারতের প্রথম টেস্ট সিরিজ বিজয়ের প্রধান পরিচালনা শক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। বীর হিসেবে ঘরে ঘরে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে।

১৯৭২-৭৩ মৌসুমে নিজ দেশে টনি লুইসের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩ তারিখে বোম্বের বিএসে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৭৩ ও ৩৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/২১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে স্বাগতিক দল জয়লাভ করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হন।

সুনীল গাভাস্কার তাঁর ‘সানি ডেজ’ শীর্ষক গ্রন্থে তাঁকে ভারতীয় ক্রিকেটে খেয়ালীপণা প্রতিভা হিসেবে চিত্রিত করেন। প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে ১৯৬১ সালে অর্জুন পদকে ভূষিত হয়েছিলেন। ২০১১ সালে কর্নেল সিকে নায়ড়ু আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৮ সালে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত ভারত-আফগানিস্তানের মধ্যকার উদ্বোধনী টেস্টে আফগান বংশোদ্ভূত হবার সুবাদে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ২ এপ্রিল, ২০২৩ তারিখে গুজরাতের জামনগরে ৮৮ বছর ১১২ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।