Skip to content

সাকিব আল হাসান

1 min read

২৪ মার্চ, ১৯৮৭ তারিখে যশোরের মাগুড়ায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। দলে মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে ভূমিকা রাখছেন। বামহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে দক্ষতার পরিচয় রাখছেন। বাংলাদেশ দলের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

খন্দকার মাসরুর রেজা ও শিরিন রেজা দম্পতির সন্তান তিনি। ২০০৫ সাল থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে খুলনা বিভাগ ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ওরচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স, জ্যামাইকা তল্লাজ, বার্বাডোস ট্রাইডেন্টস, ব্রাম্পটন উল্ভস, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, জেমকন খুলনা, পেশাওয়ার জালমি, করাচী কিংস, কলকাতা নাইট রাইডার্স ও সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের পক্ষে খেলেছেন। ১ জানুয়ারি, ২০০৫ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বিসিবি একাদশের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ীয় একাদশের বিপক্ষে খেলার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভাবনায় বাংলাদেশের ক্রিকেট পরিমণ্ডল যখন হাবুডুবু খাচ্ছিল তখনই উদীয়মান ও উজ্জ্বল নক্ষত্ররূপে আবির্ভুত হয়েছেন। এরপর থেকে পরবর্তী দুই দশক ধরে নিজেকে সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে পরিচিতি ঘটান। মাঠে ও মাঠের বাইরে পেশাদারী খেলোয়াড়ের নতুন মাত্রা আনেন যা সতীর্থ ও তরুণদের জন্যে উল্লেখযোগ্য মাইলফলকরূপে চিত্রিত হয়ে আছে। বোলার হিসেবে নিখুঁততা, ধারাবাহিকতা ও চাতুর্য্যতার পরিচয় দিয়েছেন; অপরদিকে, ব্যাটিংয়ে আগ্রাসী ও স্ট্রোকের ফুলঝুড়ির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে – চমৎকার, ফুরফুরে মেজাজে, আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে শীর্ষ দলগুলোর বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরেছেন অকপটচিত্তে।

ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডার হিসেবে সন্দেহাতীতভাবে নিজের পরিচিতি ঘটিয়েছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ইতিহাসে সর্বকালের সেরা তারকা ক্রিকেটারের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছেন। ক্রিকেটের সকল স্তরে অসাধারণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় হিসেবে চিত্রিত করেছেন। অনেকগুলো বছর আইসিসি র‍্যাঙ্কিং প্রথায় সেরা অল-রাউন্ডারের মর্যাদায় আসীন হন ও অনেক সেরা খেলোয়াড়ের তুলনায় নিজেকে এগিয়ে রেখেছেন।

সেরা অল-রাউন্ডার হিসেবে বাংলাদেশ দলের নিত্য অনুসঙ্গীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ দলে ধারাবাহিক ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে যুক্ত হবার পূর্বে প্রায় সকলেই হঠাৎ আলোর ঝলকানীর ন্যায় সাড়া জাগিয়েছিলেন, আবার ঠিক তেমনি নিভে গেছেন আচমকা; নিজেকে এ বৃত্তের বাইরে রেখে রাজমুকুট পরিধান করে আছেন স্ব-মহিমায়। দেশের সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় হিসেবে এ মর্যাদার আসনে যেতে তাঁকে কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার আশ্রয় নিতে হয়েছে।

নিজ শহর মাগুরার পাড়ার ক্রিকেটে খেলাকালীন সকলের নজরে পড়েন। সরকারী ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজ দক্ষতা প্রদর্শনে তৎপর হন। ইংল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কা দলের অংশগ্রহণে ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতায় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। ৮৬ বল মোকাবেলান্তে শতরানের মূল্যবান ইনিংস খেলেন। এরপর, বল হাতে তিন উইকেট লাভে শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ে দারুণ ভূমিকা পালন করেন। এরফলে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেলার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ দলের সদস্য হন।

২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০০৬-০৭ মৌসুমে দলের সাথে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। ৬ আগস্ট, ২০০৬ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে বর্ণাঢ্যময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সূত্রপাত ঘটান। ওডিআইয়ে অভিষেককালীন মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলেছিলেন। কিন্তু, পরবর্তীকালে ব্যাটিংয়ের দিকেও মনোনিবেশ ঘটিয়ে ঈর্ষণীয় সফলতা পান। তবে, ২০০৮ সালে বোলিং প্রতিভার পুণর্জাগরণ ঘটান। নিজ দেশে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৭/৩৭ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে কিউইদের ব্যাটিংয়ে ধ্বস নামান। এরপর, দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাভাবিক ব্যাটিং করে ৭১ রান সংগ্রহ করেন। নিজের ব্যাট হাতে দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। প্রকৃতপক্ষে, দলের অবিসংবাদিত অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় আসীন হন।

একই মৌসুমে নিজ দেশে ফিরতি সফরে জিম্বাবুয়ের মুখোমুখি হন। ২৮ নভেম্বর, ২০০৬ তারিখে খুলনায় অনুষ্ঠিত প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত টি২০আইয়ে অংশ নেন। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পূর্বে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় সিরিজে কানাডার বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম ওডিআই শতক হাঁকান। ভারতের বিপক্ষে মনোরম অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলার পর দশ ওভারে ৪৪ রানের মিতব্যয়ী বোলিং করেন। কোন উইকেট লাভ করতে না পারলেও বাংলাদেশ দল বড় ধরনের জয়লাভে সক্ষমতা দেখায়। ধারাবাহিক ক্রীড়াশৈলী অব্যাহত রাখেন।

একই বছর নিজ দেশে রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বাধীন ভারতের মুখোমুখি হন। ১৮ মে, ২০০৭ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। বল হাতে ০/২৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে প্রথম ইনিংসে ২৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।

২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪/৩৪ লাভ করেন। পরবর্তীতে, আফতাব আহমেদের (৬২*) ও মোহাম্মদের আশরাফুলের (৬১) কল্যাণে দল দুই ওভার বাকী থাকতেই ৬ উইকেটে জয় তুলে নেয়। ঐ বছরের শেষদিকে পাকিস্তানের বিপক্ষে আরও একটি শতরানের ইনিংস খেলেন।

২০০৭-০৮ মৌসুমে মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ১২ জানুয়ারি, ২০০৮ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৫ ও ৪১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ২/৪৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩৭ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।

ওডিআইয়ের ন্যায় টেস্ট আঙ্গিনায়ও একই ধাঁচের ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনে এগিয়ে আসেন। ২০০৮-০৯ মৌসুমে নিজ দেশে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৭ অক্টোবর, ২০০৮ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। বড় ধরনের সফলতা পান ও বেশ কয়েকবার ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে এজে রেডমন্ডকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ২/৪৪। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে ৭/৩৬ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে সেরা সাফল্যের উপমা স্থাপন করেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ২/৭৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। দ্বিতীয় ইনিংসে অর্ধ-শতরানের ইনিংসে খেলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১৭ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড় করান। তবে, অন্যান্য বোলারের সহায়তা না পাবার ফলে সফরকারীরা খেলায় জয় পায়। ব্যাট হাতে নিয়ে ৫ ও ৭১ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর বীরোচিত অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও স্বাগতিকরা ৩ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

ধারাবাহিক ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ আইসিসি কর্তৃক বিশ্বের ১ নম্বর অল-রাউন্ডারের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। ২০০৯ সালে দলের সহঃঅধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। এক পর্যায়ে মোহাম্মদ আশরাফুলের পরিবর্তে অধিনায়কত্ব লাভ করেন ও সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন। গ্রেনাডায় দূর্বলতর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। নিজের সেরা খেলা প্রদর্শনসহ ও উজ্জ্বীবনী শক্তি সহযোগে দলকে নিয়ে পূর্ণোদ্দ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এলোমেলো হয়ে পড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে পাঁচ-উইকেট দখল করেন। আট উইকেট লাভের পাশাপাশি ২১৫ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নামে তাঁর দল। চতুর্থ ইনিংসে ৯৬ রানের অপরাজিত দায়িত্বশীল ইনিংস উপহার দেন। ঐ সিরিজে বাংলাদেশ দল ৩-০ ব্যবধানে বিজয়ী হয়। এরফলে, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ বিজয়ে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন। একই বছরে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন।

২০০৯-১০ মৌসুমে বাংলাদেশী দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়ক হিসেবে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত নিজস্ব চতুর্থ টেস্টে কয়েকবার ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৬ রানে পৌঁছানোকালে পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতকের সন্ধান পান। খেলায় তিনি ৮৭ ও ১০০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/৮৯ ও ০/৪৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, মার্টিন গাপটিলের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১২১ রানে পরাজিত হয়েছিল। এ অবদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত দক্ষতা ও ক্রমাগত চাপ মোকাবেলায় স্বীয় সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। ২০০৮ সালে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ৭/৩৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ইনিংসে সাত বা ততোধিক উইকেট লাভের ক্ষেত্রে বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে নিজেকে দ্বিতীয় ঘটনায় জড়িয়ে রাখেন।

ওরচেস্টারশায়ারের পক্ষে খেলে আরও সফল হন। এক মৌসুমে ৩৫ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, মিডলসেক্সের বিপক্ষে ৭/৩২ বোলিং বিশ্লেষণ গড়ে কাউন্টি দলটিকে চ্যাম্পিয়নশীপের প্রথম বিভাগে উত্তরণে সবিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এর পাশাপাশি, ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ধবল ধোলাইকালীন দলের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক ও সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

মাশরাফি বিন মর্তুজা’র আঘাতের কারণে অধিনায়কের দায়িত্ব পান। তবে, অধিনায়ক হিসেবে দলকে কখনোবা উঁচুতে, আবার কখনোবা নিচুতে নিয়ে যান। কিন্তু, খেলোয়াড় হিসেবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজেকে উজার করে সবটুকু বিলিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন। ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে সড়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তবে, আবারও মাশরাফি বিন মর্তুজা’র আঘাতপ্রাপ্তির ফলে নিজ দেশে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দিতে হয়। ৪-০ ব্যবধানে বাংলাদেশের বিজয়ে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন। পরের বছর জিম্বাবুয়ে সফরে বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট ও পাঁচটি ওডিআইয়ে অধিনায়কের দায়িত্ব ছিলেন। ঐ টেস্টে স্বাগতিকরা ১৩৬ রানে জয় পায়। এছাড়াও, ৩-২ ব্যবধানে ওডিআইয়ে সিরিজ খোঁয়ায় বাংলাদেশ দল। ফলশ্রুতিতে, তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কোপানলে পড়েন।

২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাংলাদেশ জয় পেলেও দলটি প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ে। অনেক দর্শক, সমর্থকদের কাছ থেকে অভিযুক্ত হন। সকল সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে ২০১১ সালের আইপিএলের আসরে খেলার সিদ্ধান্ত নেন। ইন্ডিয়ান টি২০ লীগে বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত দল কলকাতার পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। পরের মৌসুমেও ঐ দলটিতে খেলেন। ২০১৪ সালের সপ্তম আসরে পুণরায় অন্তর্ভুক্ত হন।

ছন্দপতন ঘটলেও খুব দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে খেলার জগতে ফিরে আনেন। ওডিআইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬১ রানে গুটিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন। একই টেস্টে শতক ও পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। এরপর ঐ বছরের শেষদিকে এ ঘটনার পুণরাবৃত্তি ঘটান। ২০১১ সালে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরের পূর্বে অধিনায়কত্ব থেকে বাদ পড়েন। তাসত্ত্বেও আবারও দলের অমূল্য সম্পদ হিসেবে উপস্থাপনায় সচেষ্ট হন। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ওডিআই ও টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হন। টেস্টে বোলিংয়ের পাশাপাশি ১৬৮ রান তুলেন। ওডিআইয়ে দুই ইনিংসে ৭৯ রান সংগ্রহ করেন। তবে, উভয় সিরিজেই বাংলাদেশ দল পরাজিত হয়েছিল। বছরের শেষদিকে ডিসেম্বর, ২০১১ সালে নিজ দেশে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন। দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে শতরান হাঁকানোসহ ইনিংসে পাঁচ-উইকেট পান। সিরিজ শেষে আইসিসি প্রণীত টেস্ট অল-রাউন্ডারের র‍্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বর স্থানের মর্যাদা পান।

ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ টি২০ প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আসরে খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলসের ‘প্রতীকি খেলোয়াড়’ হিসেবে মনোনীত করে। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে দলকে ঐ প্রতিযোগিতার সেমি-ফাইনালে নিয়ে যান ও ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের কাছে পরাজিত হয় তাঁর দল। ১০ খেলায় অংশ নিয়ে ২৮০ রান ও ১৫ উইকেট দখল করেন। দলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীতে পরিণত হন ও পরবর্তীতে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কারপ্রাপ্ত হন।

২০১২ সালের এশিয়া কাপে তিনটি অর্ধ-শতক সহযোগে ২৩৭ রান ও ছয়টি উইকেট দখল করেন। প্রথমবারের মতো ঐ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় বাংলাদেশ দল অংশ নেয় ও পাকিস্তানের কাছে দুই রানে পরাজিত হয়। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের মাধ্যমে প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট পুরস্কার লাভের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়াটসনের কাছ থেকে ওডিআইয়ে বিশ্বের ১ নম্বর অল-রাউন্ডারের মর্যাদা নিজের অনুকূলে নিয়ে আসেন। ঐ বছরের শেষদিকে ২০১২ সালের আইপিএল আসরে কলকাতার ১৮ খেলার আটটিতে অংশ নেন। দুইবার ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান ও আইপিএলে দলটি প্রথমবারের মতো শিরোপা জয় করে।

২০১২ সালে নিজ দেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় বাংলাদেশী খেলোয়াড় হিসেবে টেস্টে ১০০ উইকেট শিকারীর মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। এরপর তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হন। এছাড়াও, দ্রুততার সাথে ১০০ উইকেট ও ১০০০ রান সংগ্রহের মাধ্যমে অল-রাউন্ডারের কৃতিত্বের অধিকারী হন। এ অর্জনের জন্যে মাত্র ২৮ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। তবে, উরুর আঘাতের কারণে ওডিআই ও টি২০আই সিরিজে অংশ নিতে পারেননি।

২০১৩ সালের বিপিএলে খেলোয়াড়দের নিলামে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স $৩৬৫,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয়। এরফলে, প্রতিযোগিতায় সর্বাপেক্ষা দামী খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান। দলের শিরোপা বিজয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন। ১২ খেলায় অংশ নিয়ে ৩২৯ রান ও ১৫ উইকেট দখল করে উপর্যুপরী দ্বিতীয়বার ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার লাভ করেন। লিচেস্টারশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবে টি২০ খেলায় অংশ নিতে দ্বিতীয় বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ২০১৩ সালের ক্যারিবীয় প্রিমিয়ার লীগের আসরে বার্বাডোস ট্রাইডেন্টসের পক্ষে অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলেন। ত্রিনিদাদ ও টোবাগো স্টিলের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেরা টি২০ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। নির্ধারিত চার ওভারে ৬/৬ বোলিং পরিসংখ্যানের নজির গড়েন।

২০১৩-১৪ মৌসুমে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৯ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ১৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১৯ ও ৫০* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, ২/৮৯ ও ০/১৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সোহাগ গাজী’র অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। ২০১৪ সালে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের শোচনীয় ফলাফল করে। এমনকি নিচুমানের হংকং দলের কাছে নাকানিচুবানি খায়। ক্রিকেট সমর্থকদের আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়নে দুই বছরের জন্যে নিজ দেশে দলের না খেলার বিষয়ে মন্তব্য করেন। এছাড়াও, প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের অভাব ও দেশে ক্রিকেট অবকাঠামো সংস্কারের কথা তুলে ধরেন।

নভেম্বর, ২০১৪ সালে অ্যালেন ডেভিডসন, ইয়ান বোথামইমরান খানের অর্জনের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে মাত্র চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে একই টেস্টে শতরানের পাশাপাশি দশ উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। খুলনায় সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৪৩ রান সংগ্রহসহ ৫/৮০ ও ৫/৪৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে এ তালিকায় স্বীয় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।

এরপর, ওডিআই সিরিজেও বেশ ভালো করেন। অবশেষে ডিসেম্বর, ২০১৪ সালে বিসিবি অনাপত্তি সনদ প্রদানের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এরফলে, বিদেশের মাটিতে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পথ সুগম হয়। একই মাসে বিগ ব্যাশ লীগের দল মেলবোর্ন রেনেগ্যাডেসের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন।

নিজের অল-রাউন্ড ক্রিকেটশৈলী অব্যাহত রাখেন এবং দলের সর্বাপেক্ষা নির্ভরযোগ্য ও প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়ে পরিণত করেন। সকল স্তরের ক্রিকেটেই বাংলাদেশ দলে অবদান রাখেন ও খুব কম সময়ই মনক্ষুণ্ন ছিলেন। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বর্ণালী সময়ে প্রধান সদস্যের মর্যাদা পান। এ সময়ে দলটি নিজ দেশে পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের ন্যায় দলের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজে জয় পায়।

২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় সফলতা লাভের পর বাংলাদেশ দলে ৫০-ওভারের খেলায় চমৎকার ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন। নিজ দেশে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওডিআই সিরিজে উপর্যুপরী বিজয়ে মূল্যবান ভূমিকা রাখেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেও ২০১৬ সালে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব টি২০আইয়ে ভালো খেলতে পারেননি; এমনকি সুপার-টেন পর্বে কোন বিজয় পায়নি বাংলাদেশ দল। বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে এক রানের নাটকীয় পরাজয়সহ ২০১২ সালের এশিয়া কাপের চূড়ান্ত খেলায় দুই রানের পীড়াদায়ক পরাজয়ের দৃশ্য অবলোকনের সাথেও নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন।

২০১৬-১৭ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যালাস্টেয়ার কুকের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ব্যাট হাতে তেমন সফলতার স্বাক্ষর রাখতে না পারলেও অভিষেক ঘটা মেহেদী হাসান মিরাজকে যোগ্য সঙ্গ দেন। দুই খেলায় অংশ নিয়ে ১২ উইকেট দখল করেন। বাংলাদেশ দল ১০৮ রানে জয় পেয়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতা আনয়ণে সমর্থ হয়। এছাড়াও, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন।

নিউজিল্যান্ড সফরে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২১৭ রানের ইনিংস খেলেন। এ পর্যায়ে মুশফিকুর রহিমের সাথে ৩৫৯ রানের জুটি গড়েন। তবে, পরের ইনিংসে শূন্য রানে বিদেয় নেন ও বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটে। প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ রানের দলীয় সংগ্রহ দাঁড় করানো স্বত্ত্বেও বাংলাদেশ দল পরাজিত হয়।

ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র টেস্টে অংশ নেয়ার পর শ্রীলঙ্কা সফরে চমৎকার খেলেন। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক শততম টেস্ট খেলায় নিজস্ব পঞ্চম শতক হাঁকান। এ ইনিংসের কল্যাণে বাংলাদেশ দল স্মরণীয় জয় পায় ও সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতা আনে। ১৬২ রান সংগ্রহের পাশাপাশি ৯ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন। ক্ষুদ্রতর সংস্করণের খেলায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অল-রাউন্ডারের গুণাবলী নিয়ে অগ্রসর হন ও টি২০আই সিরিজে বাংলাদেশ দল ১-১ ব্যবধানে সমতা আনে। ২০-এভারের খেলা থেকে মাশরাফি বিন মর্তুজা অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড টি২০আইয়ে অধিনায়ক হিসেবে তাঁকে যুক্ত করে। ৪৭ খেলার ২২টিতে বাংলাদেশ দল জয় পায়। এমনকি, ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটেও ইংল্যান্ড দলের পরাজয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে তামিম ইকবালমুশফিকুর রহিমের পর তৃতীয় বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে দ্বি-শতরানের ইনিংস খেলেন। ক্রিকেটে দীর্ঘতর সংস্করণের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী অনেকগুলো টি২০ লীগে খেলেন। ২০১৮ সালের ইন্ডিয়ান টি২০ লীগে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টিতে পড়েন।

অনেকগুলো রেকর্ডের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। শহীদ আফ্রিদি’র ২৯৪টি ওডিআইয়ের বিপরীতে ২০১৯ সালে দ্রুততম ২০২টি ওডিআইয়ে ২৫০ উইকেট ও ৬০০০ রান লাভের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভ করেন। এছাড়াও, তামিম ইকবালের পর ওডিআইয়ে দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ৬০০০ রান সংগ্রহকারী।

ওডিআইয়ে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ২০০০ রান ও ১০০ উইকেট লাভের ন্যায় ‘ডাবল’ অর্জনের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। এছাড়াও, প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে পাঁচটি শতক হাঁকান। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনি পাঁচ নম্বর অবস্থানে ব্যাটিং করতে নামেন।

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে সর্বাপেক্ষা বৃহৎ অর্জন ছিল ২০১৯ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বীরোচিত অংশগ্রহণ। বিশ্বকাপের ইতিহাসের একটি আসরে ছয় শতাধিক রান সংগ্রহসহ দশ উইকেট দখল করেন। এছাড়াও, যুবরাজ সিংয়ের পর বিশ্বকাপের একটি খেলায় অর্ধ-শতরানের পাশাপাশি পাঁচ-উইকেট লাভের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। তবে, এ প্রতিযোগিতার পরপরই দুর্নীতির বিষয়ে অবগত না করানোর খেসারতস্বরূপ আইসিসি এক বছরের জন্যে ক্রিকেটে তাঁর অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে।

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ তারিখে আইপিএলে অংশগ্রহণের কারণে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে অনুপস্থিতির বিষয়টি বিসিবি অনুমোদন করে।

২০২২ সালে নিজ দেশে দিমুথ করুণারত্নে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২৩ মে, ২০২২ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ০ ও ৫৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/৯৬ ও ০/৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি রান-আউটের সাথে নিজেকে জড়ান। তবে, অসিত ফার্নান্দো’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।

২০২৩-২৪ মৌসুমে নিজ দেশে ধনঞ্জয় ডি সিলভা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কা দলের মুখোমুখি হন। নাজমুল হোসেন শান্ত’র অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ দলের সদস্যরূপে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত টেস্টে ৩/১১০ ও ১/৩৯ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১৫ ও ৩৬ রান সংগ্রহ করেন। ঐ টেস্টে ১৯২ রানে পরাজিত হওয়াসহ ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায় তাঁর দল। তবে, এ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সাফল্য অর্জন করেন। ৩১ রানে পৌঁছানো অবস্থায় টেস্টে ৪৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে পঞ্চম উইকেটে লিটন দাসের সাথে ৫১ রানের জুটি গড়েন।

২০১৩ সালে উইজডেন ইন্ডিয়া কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। হাবিবুল বাশার সতীর্থ খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে সর্বকালের সেরা বাংলাদেশী টেস্ট একাদশ গঠন করেন। তন্মধ্যে, তাঁকেও এ তালিকায় ঠাঁই দিয়েছেন। টেস্টের ঊনিশজন শীর্ষ অল-রাউন্ডারের অন্যতম হিসেবে ২০০ উইকেট ও ৩০০০ রানের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। বাংলাদেশী-মার্কিন নাগরিক উম্মে আহমেদ শিশির নাম্নী এক তরুণীকে বিয়ে করেন। গ্রীনকার্ডধারী হবার সুবাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এ দম্পতির আলায়না হাসান অব্রে নাম্নী কন্যা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।