শাদাব খান
৪ অক্টোবর, ১৯৯৮ তারিখে মিয়ানওয়ালিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। দলে মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকা অবলম্বন করছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী। পাকিস্তানের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
বলকে বেশ বিপজ্জ্বনকভাবে বাঁক খাওয়ানোয় পারদর্শী। লেগ স্পিন বোলিংয়ের পাশাপাশি গুগলিতেও পারদর্শী। অন্যান্য লেগ স্পিনারের তুলনায় যথাসম্ভব নিখুঁততা প্রদর্শনসহ রান খরচে বেশ মিতব্যয়ীভাব বজায় রাখেন। স্ট্যাম্প বরাবর বিস্তৃত কৌণিক অবস্থান নিয়ে বোলিং করার ফলে ব্যাটসম্যানকে পুণরায় দৃষ্টি আনয়ণে বাধ্য করতেন।
২০১৬-১৭ মৌসুমের পিএসএলে নিজের পরিচিতি ঘটাতে সচেষ্ট হন। চমৎকার মিতব্যয়ী বোলিংয়ের পাশাপাশি উইকেট লাভে দক্ষতা প্রদর্শন করে চলছেন। ফলশ্রুতিতে, ভবিষ্যতে পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনায় এনে তাঁকে নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। এছাড়াও, নিচেরসারির কার্যকরী ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবেও ভূমিকা রাখছেন। শারীরিক সুস্থতা বজায় রেখে পয়েন্ট অঞ্চলেও দূর্দান্ত ফিল্ডার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
শেন ওয়ার্নকে পছন্দের ক্রিকেটারদের তালিকায় শীর্ষ স্থানে রেখেছেন। ১২ বছর বয়সে রাওয়ালপিন্ডি চলে আসেন। স্বীয় বিদ্যালয় দলে খেলতেন। লাহোরভিত্তিক ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেকে ঝালাই করতে সচেষ্ট হন। এ পর্যায়ে বিখ্যাত ক্রিকেটার আব্দুল কাদির ও মুশতাক আহমেদের ন্যায় বোলারদের সান্নিধ্যে আসেন।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর উত্থান ঘটেছে। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের দলে খেলেও স্বীয় সক্ষমতার পরিচয় দেন। ২০১৫-১৬ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে ৪/৩৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে সংশ্লিষ্ট সকলের মনোযোগ কাড়েন। ২০১৬ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের সদস্যরূপে খেলেন। এ প্রতিযোগিতায় দলের অন্যতম তারকা খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। পাকিস্তানের পক্ষে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হন। ৬ খেলা থেকে ১৯ গড়ে ১১ উইকেট দখল করেছিলেন। চূড়ান্ত খেলায় মারকুটে ব্যাটিং করে স্বীয় সক্ষমতার কথা জানান দেন। এ পর্যায়ে তিনি বড়দের কোন খেলা হিসেবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট, লিস্ট এ ক্রিকেট কিংবা টি২০ ক্রিকেটে অংশ নেননি।
২০১৬ সাল থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি ও সুই নর্দার্ন গ্যাস পাইপলাইন্স লিমিটেডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, ব্রিসবেন হিট, ঢাকা প্লাটুন, এডমন্টন রয়্যালস, গায়ানা আমাজন ওয়ারিয়র্স, ইসলামাবাদ ইউনাইটেড, খুলনা টাইগার্স ও ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের পক্ষে খেলেছেন। ১০ জুলাই, ২০১৬ তারিখে ওরচেস্টারে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান ‘এ’ বনাম শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনা ঘটান।
ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে রাওয়ালপিন্ডি দলের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে নিজের পরিচিতি ঘটাতে তেমন সময় লাগেনি। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতেই তাৎক্ষণিক সফলতা পান। জুলাই, ২০১৬ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। এক পর্যায়ে পাকিস্তানের ‘এ’ দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। নিজস্ব চতুর্থ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় জিম্বাবুয়ের ‘এ’ দলের বিপক্ষে নয় উইকেট দখলসহ চমৎকার শতক হাঁকান। পাশাপাশি পিএসএলের খেলোয়াড়দের খসড়া তালিকায় তাঁর নাম চলে আসে।
পিএসএলের বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত দল ইসলামাবাদ ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচরীভূত হয়। তরুণ খেলোয়াড়কে প্রস্তাবনা দিলে তিনি সানন্দে গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে ক্লাবটির পক্ষে সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। খেলায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখায় পূর্বতন চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের সদস্যরূপে পিএসএলের দ্বিতীয় আসরেও রাখা হয়। ১৯.১১ গড়ে ৮ খেলা থেকে ৯ উইকেট দখল করেছিলেন। ঐ প্রতিযোগিতায় দূর্দান্ত খেলে ওয়াসিম আকরাম ও মিসবাহ-উল-হকের ন্যায় তারকা ক্রিকেটারদের মন জয় করতে সক্ষম হন।
২০১৭ সাল থেকে পাকিস্তানের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০১৭ সালের গ্রীষ্মে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ গমনার্থে পাকিস্তানের সীমিত-ওভারের দলে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দ্রুততার সাথে তাঁর উত্থান ঘটে। মার্চ, ২০১৭ সালে প্রথম দুইটি টি২০আই থেকে ২১ রান খরচায় সাত উইকেট দখল করেন। ২৬ মার্চ, ২০১৭ তারিখে ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত প্রথম খেলায় ৪-০-৭-৩ বোলিং বিশ্লেষণ করে অভিষেকে সেরা মিতব্যয়ী বোলিং করার গৌরব অর্জন করেন। দ্বিতীয় খেলায় ৪/১৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়েছিলেন। উভয় খেলাতেই তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভের অধিকারী হন। ঐ সিরিজে ওভারপ্রতি ৪.৭৩ গড়ে ও উইকেটপ্রতি ৭.৫০ গড়ে দশ উইকেট দখল করেন। এছাড়াও, ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন। ওডিআই থেকে ২৯.৮০ গড়ে ৫ উইকেট দখল করেন। প্রথম দশটি টি২০আই থেকে তিনবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ মনোনীত হয়েছিলেন।
অনিন্দ্যসুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ এর পরপরই টেস্ট সিরিজ খেলার উদ্দেশ্যে তাঁকে পাকিস্তান দলে যুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ৩০ এপ্রিল, ২০১৭ তারিখে ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ঐ খেলায় তিনি মাত্র এক উইকেট পেয়েছিলেন। ১/৯০ ও ০/৫৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ১৬ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের অসাধারণ বোলিংয়ের সুবাদে স্বাগতিকরা ১০৬ রানের দাপুটে জয় তুলে নেয় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সমতায় ফেরে।
২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা বিজয়ী পাকিস্তান দলের সদস্য ছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজস্ব দ্বিতীয় বছরেই ওডিআইয়ে পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ও টি২০ আন্তর্জাতিকে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীতে পরিণত হন। ব্যাটসম্যান হিসেবে তেমন সুবিধে করতে না পারলেও পাকিস্তানের প্রধান ফিল্ডার হিসেবে নিজেকে চিত্রিত করেছেন। ২০২০ সালে আজহার আলী’র নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ৫ আগস্ট, ২০২০ তারিখে ম্যানচেস্টারে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। তবে, ক্রিস উকসের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।