৩ জুলাই, ১৯৫১ তারিখে ক্রাইস্টচার্চের সেন্ট অ্যালবান্স এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেট তারকা ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট ও ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন।
৬ ফুট ১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী তিনি। ক্রাইস্টচার্চ বয়েজ হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৭১-৭২ মৌসুম থেকে ১৯৯০ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি, ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ার ও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে তাসমানিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৮১ সালে নটিংহ্যামশায়ারের পক্ষে এক মৌসুমে শত উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তিন বছর পর আবারও এ সাফল্যের পুণরাবৃত্তি ঘটান। ঐ মৌসুমে ব্যাট হাতে নিয়ে সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করে ‘ডাবল’ লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে খেলার সংখ্যা কমানোর পর মাত্র দুইজন খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী হন।
সাবেক নিউজিল্যান্ডীয় অধিনায়ক ওয়াল্টার হ্যাডলি’র পাঁচ পুত্রের অন্যতম ছিলেন। শৈশবকালেই ক্রিকেটের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৭১-৭২ মৌসুমে ক্যান্টারবারির পক্ষে অভিষেক ঘটে। ৩ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে ব্যারি হ্যাডলি’র সাথে দলে একত্রে খেলেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের ঐ অভিষেক খেলাটিতে ৩/৫৭ ও ১/২৬ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। নিজস্ব প্রথম বল থেকেই বাউন্ডারি দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় উইকেটটি ব্যারি হ্যাডলি’র তালুবন্দীতে পরিণত হয়। ১৬ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে নিজস্ব তৃতীয় সপ্তাহের তৃতীয় খেলায় সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টসের কেন ওয়াডসওয়ার্থকে এলবিডব্লিউ, ব্লেয়ার ফার্লংকে বোল্ড ও জন হাওয়েলকে বোল্ড করে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো হ্যাট্রিকের সন্ধান পান। এরফলে দল নয় উইকেটে জয় পায়।
নতুন বল হাতে নিয়ে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ডেল হ্যাডলি’র সাথে কার্যকরী জুটি গড়েন। ঐ সময়ে দূরন্ত গতিপণার সাথে দীর্ঘ চুলের বেশ সমন্বয় ঘটেছিল। সেরা ব্যাটসম্যানদের কাছে সমীহের পাত্রে পরিণত হন। প্রায় সকল ধরনের পিচে পেস, বাউন্স ও বলে গতিবেগ আনয়ণে অপূর্ব সমন্বয় সাধন করতে পারতেন। ১৯৭৯-৮০ মৌসুমে তাসমানিয়ার পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।
ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা সিম বোলার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। সিম বোলারদের শৈল্পিকসত্ত্বার প্রভু হিসেবে পরিচিতি পান। খেলোয়াড়ী জীবন শুরুর পর থেকে নিউজিল্যান্ডের ফাস্ট বোলিংয়ে নতুন মাত্রা এনে দেন। এককথায় নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটারের সম্মাননা পেয়েছেন। ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলারের মর্যাদা লাভ করেছেন। সুনিয়ন্ত্রিত পন্থায় ও বুদ্ধিমত্তা সহযোগে বিধ্বংসী বোলার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। প্রশ্নাতীত দক্ষতায় মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৮৬ টেস্ট ও ১১৫টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ৪০০ টেস্ট উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। টেস্টের ঊনিশজন শীর্ষ অল-রাউন্ডারের অন্যতম হিসেবে ২০০ উইকেট ও ৩০০০ রানের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী।
১৯৭২-৭৩ মৌসুমে নিজ দেশে ইন্তিখাব আলমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। জন পার্কারের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। তাঁর প্রথম বল থেকে সাদিক মোহাম্মদ চার রান সংগ্রহ করেন। ২/৮৪ ও ০/২৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৪৯ মিনিটে ৪৬ রান সংগ্রহ করে অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। পাশাপাশি একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। বৃষ্টির কারণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।
তবে, পরের দুই টেস্টে সহোদর ডেলের কাছে স্থানচ্যূত হন ও পরবর্তী তিন বছর এভাবে আসা-যাবার পালায় অবস্থান করেন। একই সফরের ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন।
১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে বেভান কংডনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৩ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ০/১০৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৯ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দল ইনিংস ও ২৫ রানের ব্যবধানে জয় তুলে নিলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
এরপর, একই সফরের ৫ জানুয়ারি, ১৯৭৪ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে ইয়ান ডেভিসের উইকেট লাভ করে টেস্টে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ২/৮৪ বোলিংকে ছাঁপিয়ে যান। ৪/৩৩ ও ২/১৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ১৭ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে নিজ দেশে বিষেন বেদী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। দলে চতুর্থ সিমার যুক্ত হলেও ১১ উইকেট তুলে নেন। তিনি নিজেই প্রত্যাশা করেননি যে সিরিজের তৃতীয় টেস্টের প্রথম একাদশে যুক্ত হবেন। টেস্টের প্রথম সকালে স্পিনার হ্যাডলি হাওয়ার্থকে দলের বাইরে রেখে চতুর্থ সিমার হিসেবে তাঁকে দলে যুক্ত করা হয়। ঐ টেস্টে ৫৮ রান খরচায় ১১ উইকেট লাভ করেন। এটি যে-কোন নিউজিল্যান্ডীয় বোলারের টেস্ট রেকর্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ইএএস প্রসন্নের উইকেট লাভ করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা সাফল্য ছিল ৪/৩৩। এ পর্যায়ে প্রথমবারের মতো পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। খেলায় তিনি ৪/৩৫ ও ৭/৩৫ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে দলের একমাত্র ইনিংসে ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ইনিংস ও ৩৩ রানে জয় পেলে স্বাগতিকরা সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ করতে সক্ষম হয়েছিল।
১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে জন পার্কারের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সাথে পাকিস্তান গমন করেন। ৩০ অক্টোবর, ১৯৭৬ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৪/১৩৮ ও ০/৭৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ৮৭ ও ৩০* রানের ইনিংস খেলেন। তন্মধ্যে, প্রথম ইনিংসে সপ্তম উইকেটে ওয়ারেন লিসের (১৫২) সাথে ১৮৬ রানের জুটি গড়ে নতুন নিউজিল্যান্ডীয় রেকর্ড গড়েন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, জাভেদ মিয়াঁদাদের দ্বি-শতরানের বদৌলতে করাচীতে পাকিস্তান দল ৫৬৫ রান সংগ্রহ করে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিক দল তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে।
একই মৌসুমে গ্লেন টার্নারের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে ভারত সফরে যান। ১৮ নভেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হন। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে এম অমরনাথের দ্বিতীয় উইকেট লাভ করে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১/১২১ ও ২/৫৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ০ ও ১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা এগিয়ে যায়।
১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রেগ চ্যাপেলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৭ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত ৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৪৪ ও ৮১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ২/১৪৭ ও ০/১১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা প্রায় দুইদিন বাকী থাকতেই ১০ উইকেটে জয় তুলে নিলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
সব মিলিয়ে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন তিনটি অংশে বিভক্ত ছিল। ‘প্রথম পাঁচ বছরে ছন্দহীন অবস্থায় খেলেন এবং তিনদিন কিভাবে কাটাবেন ও চার কিংবা পাঁচদিন একাকী কিভাবে খেলবেন’ – তাতেই ব্যস্ত ছিলেন। গ্লেন টার্নারের ভাষ্য মতে, ১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে নিজেকে ‘বয়সের চেয়ে এগিয়ে নিয়ে আসেন’। শেষ দশকে রেকর্ডসংখ্যক ৪৩১ উইকেট পেয়েছেন মূলতঃ প্রত্যেক সুযোগ ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে।
১৯৮০-এর দশকে বিশ্বের সেরা চারজন অল-রাউন্ডারের অন্যতম ছিলেন। ১৯৭৩ সালের পর থেকে অনেকগুলো বছর কিউই বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দেন। আঘাতের কবলে পড়তে থাকেন ও পেসের মাত্রা কমিয়ে দেন। তাসত্ত্বেও বলে নিখুঁততা এনে বেশ বাঁক খাওয়াতেন। তাঁর আউট-সুইঙ্গারগুলো স্ট্যাম্পের কাছে দিয়ে যেতো ও প্রায়শঃই বল মোকাবেলা করা দুষ্কর হয়ে পড়তো। ৪৩১টি টেস্ট উইকেট নিয়ে তালিকার শীর্ষে নিয়ে যান ও কপিল দেব তা টপকে যাবার পূর্ব পর্যন্ত বিশ্বরেকর্ডরূপে গণ্য হতো। এ উইকেটগুলো লাভের জন্য ২২-এর অল্প অধিক গড়ে রান খরচ করতে হয়েছিল। অদ্যাবধি নিউজিল্যান্ডের শীর্ষ উইকেট শিকারী হিসেবে নিজেকে চিত্রিত করেছেন।
বোলিংয়ের পাশাপাশি নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমেও বেশ সফল হয়েছিলেন। টেস্টে দুইটি শতক ও পনেরোটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলে তিন হাজারের অধিক রান সংগ্রহ করেছেন। এরফলে, ১৯৮০-এর দশকে পাকিস্তানের ইমরান খান, ভারতের কপিল দেব ও ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথামের ন্যায় বিশ্বের সেরা অল-রাউন্ডারদের কাতারে নিজেকে নিয়ে যান।
ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮ সালে ওয়েলিংটনে প্রথমবারের মতো সেরা খেলা উপহার দেন। অভিষেকের পাঁচ বছর পর খেলায় দশ উইকেট লাভ করেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/২৬ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করিয়েছিলেন। এরফলে, ইংল্যান্ড দল প্রথমবারের মতো কিউইদের কাছে পরাজয়ের স্বাদ আস্বাদন করে। তবে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের সেরা মুহূর্ত উদযাপন করেছিলেন। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে ব্রিসবেনে সিরিজের প্রথম টেস্টে ১৫ উইকেট দখল করেন। অদ্যাবধি ট্রান্স-তাসমান প্রতিপক্ষের কাছে অন্যতম সর্বাধিক আলোচিত ঘটনারূপে আখ্যায়িত হয়ে আসছে। তন্মধ্যে, অজিদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ ৯/৫২ দাঁড় করান। জিওফ লসনের উইকেটটি অভিষেকধারী ভন ব্রাউন লাভ করলেও রিচার্ড হ্যাডলি’র বলে বব হল্যান্ডের ক্যাচটি ভন ব্রাউন তালুবন্দীকরণের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শেষ করেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/৭১ লাভ করেন। নিউজিল্যান্ডের একমাত্র ইনিংসেও ব্যাট হাতে সফলতা লাভ করেন। ৫৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ টেস্টে তাঁর দল ইনিংস ও ৪১ রানে জয়লাভ করে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৭৯-৮০ মৌসুমে নিজ দেশে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল ঐ টেস্টে ১২টি এলবিডব্লিউ’র সিদ্ধান্ত হয়। তন্মধ্যে, তিনি সাতটি এলবিডব্লিউ’র মাধ্যমে উইকেট লাভ করেন। খেলায় তিনি ৫/৩৪ ও ৬/৬৮ লাভ করেন। এ খেলায় তিনি ১১৭ উইকেট দখল করে নতুন নিউজিল্যান্ডীয় রেকর্ড গড়েন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৫১ ও ১৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এরফলে, জিওফ রাবোন ও বেভান কংডনের পর তৃতীয় নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটার হিসেবে একই টেস্টে দুইবার পাঁচ-উইকেট লাভসহ অর্ধ-শতক লাভ করার কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। স্বাগতিকরা ১ উইকেটে নাটকীয়ভাবে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। প্রথম ইনিংসে ৮৮ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে নিজস্ব প্রথম টেস্ট শতক হাঁকান। এছাড়াও, ৮৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১০৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি, ৩/৫৮ ও ০/৬৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ‘কলিন ক্রফ্ট ও আম্পায়ার ফ্রেড গুডলের টেস্ট’ নামে পরিচিতি পাওয়া তিক্ততাপূর্ণ খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা পিছিয়ে পড়ে।
১৯৮০-৮১ মৌসুমে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৮০ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় উপস্থাপন করেছিলেন। খেলায় তিনি ৩/৮৯ ও ৬/৫৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৯ ও ৫* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অনবদ্য বোলিংশৈলী প্রদর্শন স্বত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারসহ এ সিরিজে ৯৮ রান সংগ্রহসহ ১৯ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।
১৯৮১-৮২ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রেগ চ্যাপেলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ১৯ মার্চ, ১৯৮২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৪০ ও ০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৬/১০০ ও ১/১০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। এ সিরিজে ৯২ রান সংগ্রহসহ ১৪ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮৩ সালে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়ানৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ১১ আগস্ট, ১৯৮৩ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ০ ও ৩০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/৯৩ ও ৩/৪২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ডেভিড গাওয়ারের অসামান্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় স্বাগতিকরা ১২৭ রানে জয় পেলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ২৫ আগস্ট, ১৯৮৩ তারিখে নটিংহামে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে এনজি কাউয়ান্সের চতুর্থ উইকেট লাভ করে ২০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১/৯৮ ও ৪/৮৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, ৩ ও ৯২* রান সংগ্রহ করেছিলেন। নিক কুকের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়ানৈপুণ্যের কল্যাণে সফরকারীরা ১৬৫ রানে জয় পেলে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। এ সিরিজে ৩০১ রান সংগ্রহসহ ২১ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।
১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হয়েছিলেন। ২৪ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে কলম্বোর সিসিসিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। বল হাতে নিয়ে ৫/৭৩ ও ৫/১৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একমাত্র ইনিংসে সোমাচন্দ্র ডি সিলভা’র বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। ইনিংস ও ৬১ রানে জয় পেলে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। এ সিরিজে ৭৫ রান সংগ্রহসহ ২৩ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে নিজ দেশে জাভেদ মিয়াঁদাদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৫ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে মোহসিন খানের প্রথম উইকেট লাভ করেন। এরফলে, নিউজিল্যান্ডের প্রথম বোলার হিসেবে টেস্টে ২৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৬/৫১ ও ২/৫৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১৮ ও ১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ওয়াসিম আকরামের দূর্দান্ত বোলিংশৈলী স্বত্ত্বেও স্বাগতিকরা ২ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট খেলেন। জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ২৯ মার্চ, ১৯৮৫ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরফলে, টেস্টে ২০০০ রান ও ২৫০ উইকেট লাভের ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী হন। খেলায় তিনি ১৮ ও ৩৯* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/৮২ ও ০/৫৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে জেরেমি কোনি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ৮ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন ও ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে সিজে ম্যাকডারমটকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৭/২৩। খেলায় তিনি ৯/৫২ ও ৬/৭১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ৫৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অনবদ্য অল-রাউন্ড সাফল্যে সফরকারীরা ইনিংস ও ৪১ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
এরপর, ২২ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫ ও ২৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/৬৫ ও ২/৫৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। জন ব্রেসওয়েলের প্রাণান্তঃকর অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও স্বাগতিকরা ৪ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ৩০ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে ওয়াকায় অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৫/৬৫ ও ৬/৯০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ২৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয় পেলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
একই মৌসুমে নিজ দেশে ফিরতি সফরে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬ তারিখে ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক অ্যালান বর্ডারকে বিদেয় করে ৩০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৩/১১৬ লাভ করেন। এছাড়াও, খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৭২* রান সংগ্রহ করেন। এ পর্যায়ে দলীয় অধিনায়ক জেরেমি কোনি’র (১০১*) সাথে সপ্তম উইকেটে ১৩২ রানের নিরবচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। বল হাতে নিয়ে তিনি ৭/১১৬ ও ২/৪৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ব্রুস রিডের বলে শূন্য রানে বিদেয় নিয়েছিলেন। তবে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের জোড়া শতক সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৮৬ সালে জেরেমি কোনি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে তৃতীয়বারের মতো ইংল্যান্ড গমন করেন। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। ২৪ জুলাই, ১৯৮৬ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৬/৮০ ও ১/৭৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, গ্রাহাম গুচের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ২১ আগস্ট, ১৯৮৬ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৯২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, জন রাইটের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে পরাজয়বরণ করে। এ সিরিজে ৯৩ রান সংগ্রহসহ ১৯ উইকেট দখল করে ডেভিড গাওয়ারের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে নিজ দেশে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১২ মার্চ, ১৯৮৭ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে রিচি রিচার্ডসনের দ্বিতীয় উইকেট লাভ করে ৩৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৬/৫০ ও ৩/১০১ লাভ করেন। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২৫* রান সংগ্রহ করেছিলেন। ইয়ান চ্যাটফিল্ডের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। তাঁদের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ করতে সমর্থ হয়।
একই মৌসুমে জেফ ক্রো’র অধিনায়কত্বে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ১৬ এপ্রিল, ১৯৮৭ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের প্রথম টেস্টে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখেন। স্বাগতিক দলের প্রথম ইনিংসে রুমেশ রত্নায়েকের উইকেট নিয়ে ডেনিস লিলি’র ৩৫৫ টেস্ট উইকেটের সাথে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে যুক্ত হন। একই টেস্টে ৪০৬ মিনিটের অধিক সময় ক্রিজে অবস্থান করে ২৪০ বল মোকাবেলা করে ১৫১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। ১৪টি চার ও ২টি ছক্কা সহযোগে গঠিত এ ইনিংসটিই পরবর্তীতে তাঁর সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসে পরিণত হয়। এ পর্যায়ে দলীয় অধিনায়ক জেফ ক্রো’র (১২০*) সাথে ষষ্ঠ উইকেটে ২৪৬ রানের নিরবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। ঐ টেস্টটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।
১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে জন রাইটের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সাথে ভারত সফরে যান। ১২ নভেম্বর, ১৯৮৮ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম দিনে নিজস্ব ত্রয়োদশ বলে ইতিহাসের অংশ হয়ে যান। অরুণ লালকে ব্যাটের প্রান্ত স্পর্শ করে তৃতীয় স্লিপে আসা নিচু ক্যাচ তালুবন্দী করলে ইয়ান বোথামের ৩৭৩ উইকেট লাভ করে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে দলের সংগ্রহ ১৪৫/৬ থাকাকালীন অসুস্থতার কারণে মাঠের বাইরে চলে যান। এ পর্যায়ে তিনি ১ রান তুলেছিলেন। এরপর, দলের সংগ্রহ ১৮৩/৯ থাকাকালে পুণরায় মাঠে নামেন। খেলায় তিনি ৫ ও ১৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/৬৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ১৭২ রানে জয় পেলে স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৮৯-৯০ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১৫ মার্চ, ১৯৯০ তারিখে ওয়েলিংটনে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ১৮ সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/৩৯ ও ২/৭০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, দলীয় অধিনায়ক জন রাইটের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে জয় পায়।
বিস্ময়সূচক স্ট্রাইক রেটে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শের জন্যে তাঁকে মাত্র ৭৯ টেস্টে অংশ নিতে হয়। ১৯৯০ সালেও সেরা ছন্দে অবস্থান করেছিলেন। ঐ বছর জন রাইটের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ৫ জুলাই, ১৯৯০ তারিখে বার্মিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৫৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। তন্মধ্যে, ডেভন ম্যালকমের শেষ উইকেটটি তাঁর শেষ বল ছিল। প্রথম ইনিংসে ৩/৯৭ লাভ করেছিলেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ৮ ও ১৩ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ডেভন ম্যালকমের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১১৪ রানে পরাজিত হলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। ১০৭ রান ও ১৬ উইকেট নিয়ে মাইক অ্যাথার্টনের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন। অনেকটা ঈশ্বরপ্রেরিত ফাস্ট বোলার হিসেবে খেলায় দলের জয়লাভে ভূমিকা রাখতেন। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত ছিলেন। সহোদর – ডেল হ্যাডলি ও ব্যারি হ্যাডলি এবং স্ত্রী কারেন হ্যাডলি নিউজিল্যান্ডের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৭৮ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত মহিলাদের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর কারেন হ্যাডলি নিউজিল্যান্ডের পক্ষে একমাত্র ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। তবে, তাঁরা স্যার রিচার্ড হ্যাডলি’র ন্যায় সুখ্যাতি লাভ করেননি। পরবর্তীতে, এ দম্পতির বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। তাঁদের দুই সন্তান ছিল। ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা দুইটি পরিবার-চ্যাপেল পরিবারের সাথে হ্যাডলি পরিবারের সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এ দুটি পরিবারের সম্মানার্থে নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া সিরিজটি চ্যাপেল-হ্যাডলি সিরিজ নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে।
খুব স্বল্পসংখ্যক ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে দল থেকে চলে আসার পরও সৌভাগ্য নিয়ে জীবন অতিবাহিত করে চলেছেন। ৩৯ বছর বয়সে ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে, ২০০০ সালে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করেন। অবসর গ্রহণের পরপরই ১৯৯০ সালে ক্রিকেটে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নাইট উপাধীতে ভূষিত হন। ইংল্যান্ড সফরে প্রথম ও দ্বিতীয় টেস্টের মাঝামাঝি সময়ে তাঁকে এ সম্মাননা দেয়া হয়। নিউজিল্যান্ডের প্রথম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে খেলোয়াড়ী জীবনেই এ সম্মাননা লাভের অধিকারী হন। ১৯৯২ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেন। ৩ এপ্রিল, ২০০৯ তারিখে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ড বনাম ভারতের মধ্যকার টেস্ট চলাকালীন আনুষ্ঠানিকভাবে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই বছর নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। এছাড়াও, অবসর গ্রহণের পর নৈশভোজন পরবর্তী বক্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।