১৮ এপ্রিল, ১৯৫৮ তারিখে বার্বাডোসের ব্রিজটাউনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
এক কথায় ১৯৮০-এর দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনেক অবিস্মরণীয় ফাস্ট বোলারদের মধ্যে সর্বকালের সেরাদের কাতারে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। অগ্নিময় পেস, সুইং, কাট, ভীতিপ্রদ বাউন্সার সহযোগে যে-কোন ব্যাটসম্যানের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিতেন। ডেঞ্জিল ডিকস্টার এজহিল ও এলিয়ানর মার্শাল দম্পতির সন্তান ছিলেন। বার্বাডোসের সেন্ট মাইকেল এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। গ্যারি সোবার্সের ন্যায় তিনিও শৈশবকালে কঠিন পরিবেশে বড় হন। শিশু অবস্থাতেই সড়ক দূর্ঘটনায় পিতা নিহত হন। নদী তীরবর্তী ও মাঠে পিতামহের কাছে ক্রিকেট খেলায় শিখতে থাকেন। শুরুতে ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে থাকলেও পরবর্তীতে বোলিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
কৌণিকভাবে ক্রিজে বোলিং কর্মে অগ্রসরকালীন পায়ের ছন্দময় কারুকাজ অনেকাংশে নৃত্য উপযোগী জুতোর সমতুল্য ছিল। খেলোয়াড়ী জীবনের পুরোটা সময় এ ধাঁচের বোলিংশৈলী বজায় রেখেছিলেন। খুব কমসংখ্যক ক্রিকেট বিশ্লেষকই বোলিং উদ্বোধনে এ ধরনের বোলিংয়ের সমালোচনা করেছিলেন। সহজাত দূরত্ব নিয়ে অর্থোডক্স আউট-সুইং ও ইন-সুইং প্রদানে প্রভূত্বের কায়েম করেছেন। ক্ষীপ্র গতি সহযোগে ডানহাতে বোলিং করে এক্সপ্রেসের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। ফাস্ট বোলারদের গড়নের তুলনায় কিছু কম উচ্চতা নিয়েও বিপজ্জ্বনক বাউন্সার প্রদানে সক্ষম ছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে ধূলোময় পিচে লেগ কাটারে সফলতা পান। বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ, শক্তিমত্তা ও সাহসী চিত্তে বোলিংয়ে অগ্রসর হতেন ও কখন, কিভাবে এগুলোর প্রয়াগ ঘটাবেন তা জানতেন। ৪৬.২২ স্ট্রাইক রেট ছিল। স্ট্রাইক রেট অনুযায়ী প্রতি সাত ওভারে একটি করে উইকেটের সন্ধান পেয়েছিলেন। ২০.৯৫ গড়ে উইকেট পেয়েছেন। এরফলে, নিঃসন্দেহে সকলের শীর্ষে থেকে সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
১৯৮৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং করেন। খেলার শুরুতে ফিল্ডিংকালে বামহাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী ভেঙ্গে যায়। তাসত্ত্বেও এক হাতে ব্যাটিং করেন, বাউন্ডারি হাঁকান ও ল্যারি গোমসকে শতরান পূরণে যথাযথভাবে সহায়তার হাত প্রশস্ত করেছিলেন। এরপর, বামহাতে প্লাস্টার মুড়িয়ে ব্যথা সত্ত্বেও ৭/৫৩ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। চার বছর পর ওল্ড ট্রাফোর্ডের উইকেট স্পিন উপযোগী তৈরি করা হলে তিনি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টান। পিচে বলকে উপরে তোলাসহ সুইং ও কাট সহযোগে আরও আক্রমণাত্মক প্রভাব ফেলেন। এ পর্যায়ে ৭/২২ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।
গতি ও ভীতিদায়ক অবিস্মরণীয় বোলিং আক্রমণ নিয়ে বিংশ শতাব্দীর শেষদিকের সিকি ভাগ বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে একাধিপত্যবাদ বজায় থাকাকালীন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ক্রমাগত নিপুণতা সহকারে অন্য যে-কোন বোলারের তুলনায় নিজেকে অনেক দিক দিয়ে এগিয়ে রেখেছিলেন। পেশাদারী পর্যায়ে খেলায় অংশগ্রহণসহ দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ চিত্তে নিজেকে প্রকাশ করতে সচেষ্ট ছিলেন। এছাড়াও, পেস বোলারদের মধ্যে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন। অল-রাউন্ডারের গুণাবলী নিয়ে কেবলমাত্র বিশ্বসেরা ক্রিকেট তারকা গ্যারি সোবার্সের চেয়ে কিছুটা পিছিয়েছিলেন। ব্যাটসম্যানদের কাছে ভীতিদায়ক হলেও সতীর্থদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে ক্রিকেট বিশ্ব শোকাহত হলেও সতীর্থ পেশাদার ক্রিকেটাররা ভীষণ মর্মাহত হয়েছিলেন।
১৯৭৭-৭৮ মৌসুম থেকে ১৯৯৫-৯৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে বার্বাডোস, ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ার ও দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে নাটালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯ বছর বয়সে বার্বাডোসের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেন। এর পরপরই অস্ট্রেলীয় ধনকুবের ক্যারি প্যাকারের ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব সিরিজের ক্রিকেটে নিয়মিত তারকা খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণে ধাক্কার কবলে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। ১৯৭০-এর দশকের শেষদিকে আলভিন কালীচরণের নেতৃত্বে দূর্বলতর দল নিয়ে ভারত গমনার্থে যাবার জন্যে মনোনীত হন। তবে, ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। ইংরেজ পরিবেশে তাঁর বোলিংয়ের ধরন খাঁপ খায় ও ইংরেজ ব্যাটসম্যানদেরকে ব্যতিব্যস্ত রাখতেন।
১৯৭৮ থেকে ১৯৯২ সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ৮১ টেস্ট ও ১৩৬টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে দলের সাথে ভারত গমন করেন। ২০ বছর বয়সে ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭৮ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে তাঁর বর্ণাঢ্যময় টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনা ঘটান। তবে, ঐ স্তরের ক্রিকেটে তাৎক্ষণিক সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। কিন্তু, অ্যান্ডি রবার্টসের পরিবর্তে হ্যাম্পশায়ার দলে যুক্ত হয়ে আশাতীত ভালোমানের খেলা উপহারে সচেষ্ট হন। ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের কারণে বেশ কিছুটা সময় ক্লাবে খেলতে পারেননি। তবে, ঐ বিশ্বকাপে পূর্ণাঙ্গ শক্তিধর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে খেলার সুযোগ পাননি। এ পর্যায়ে, জোয়েল গার্নার ও কলিন ক্রফ্টের একাধিপত্যের কারণে তাঁকে বেশ নিষ্প্রভ দেখাচ্ছিল। কাউন্টি ক্রিকেটেও হিমশিম খাওয়া দলে নিজেকে পূর্ণ শক্তি নিয়ে মেলে ধরতে পারছিলেন না।
তাসত্ত্বেও ১৯৮০ সালের ইংল্যান্ড সফরে টেস্ট দলে নিজের স্থান নিশ্চিত করেছিলেন। ম্যানচেস্টার টেস্টে ৭/২৪ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে স্বাগতিকদেরকে গুটিয়ে দিতে স্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। এ সফরের ২৮ মে, ১৯৮০ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন। ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি (১.৮০ মিটার) উচ্চতা নিয়ে শারীরিক গঠন থাকা সত্ত্বেও সহজাত ভারসাম্য ও গতি নিয়ে নিজেকে চিত্রিত করেছিলেন ‘ম্যাকো’ ডাকনামে পরিচিত ম্যালকম মার্শাল। ১৯৮২ সালে হ্যাম্পশায়ারের পক্ষে আরও ভালো খেলা উপহার দেন। ১৩৪ উইকেট লাভ করেন। সংখ্যার দিক দিয়ে গত ৩২ বছরে কাউন্টি ক্রিকেটে অপর কেউ স্পর্শ করতে পারেননি। শুধুমাত্র নিজ গুণে নিজেকে সেরার মর্যাদায় নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। এছাড়াও অন্য যে-কোন বোলারের তুলনায় চ্যাম্পিয়নশীপে অধিক ওভার বোলিং করেছিলেন।
পরবর্তী মার্চ মাসে পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে খেলেন। এ পর্যায়ে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো প্রভাব ফেলতে শুরু করেন ও ৫/৩৭ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। ১৯৮৩ সালে ওভালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার সেমি-ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআইয়েও গতির ঝড় তুলে শীর্ষে ছিলেন। প্রথম পরিবর্তিত বোলার হওয়া সত্ত্বেও এ সময়ে ফাস্ট বোলারদের মুকুট নিজ মাথায় পুড়েন।
ব্যাটসম্যানেরাও একমত পোষণ করেন যে, অন্য যে-কোন বোলারের তুলনায় তাঁর বল মোকাবেলা করা বেশ দুরূহ ছিল। সাধারণমানের দৈহিক উচ্চতা থাকা সত্ত্বেও ব্যতিক্রমধর্মী বাউন্স করতে পারতেন। আউট-সুইঙ্গারও উল্লেখযোগ্যভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল। নিখুঁত বোলিং থেকে কখনো কিছুটা দূর দিয়ে বোলিং করলেও ঘাবড়ে যেতেন না।
১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে নিজের সেরা সময়ে থাকলেও বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় ভারতের বিপক্ষে পরাজিত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। এরপর ছয় টেস্টে অংশ নিয়ে ৩৩ উইকেট পান ও দলকে ৩-০ ব্যবধানে বিজয়ে করতে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন। চার মাসেরও কম সময়ের মধ্যে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে ছড়ি ঘুরান। ব্রিজটাউনে ৫/৪২ নিয়ে ৯৭ রানে গুটিয়ে দেন ও কিংস্টনে ৫/৫১ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন।
কিন্তু, জুলাই, ১৯৮৪ সালে হেডিংলিতে নিজের সেরা বিস্ময়কর ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। প্রথম দিনে বামহাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ভেঙ্গে ফেলার পর মাঠের বাইরে চলে যান। প্রথম ইনিংসে নবম উইকেটের পতন ঘটলে সাজঘর থেকে মাঠে নেমে ল্যারি গোমসের শতক পূরণে এক হাতে ব্যাটিং করেন।
হাতের নিচের অংশে গোলাপী প্লাস্টারে বোলিং কর্মে অগ্রসর হন ও ৭/৫৩ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। এ পর্যায়ে স্বাভাবিক পেস বোলিংয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন ও উত্তরদিকের প্রবল বাতাসের সহায়তায় বলকে সুইং করানোয় দক্ষতা প্রদর্শন করেন। ব্যথা নিয়েও অসম্ভব গুণাবলীর বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে ইংল্যান্ড দলকে গুটিয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখেন। আঘাত থেকে সুস্থ হবার পর ওভাল টেস্টে ইংল্যান্ড দলকে বাউন্সারে বিপর্যস্ত করে ফেলেন। দশ টেস্টে সপ্তমবার পাঁচ-উইকেট পান। কয়েক মাস পর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত সিরিজেও নিজের খবরদারীত্ব বহাল রাখেন।
ঐ পর্যায়ে নিজের স্বর্ণালী সময়ে অবস্থান করেছিলেন। তাঁর বোলিংয়ের ধরন অনেকাংশেই ইংরেজ পরিবেশের সাথে যুৎসই ছিল। নিয়মিতভাবে ইংরেজ ব্যাটসম্যানদেরকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখতেন। ১৯৮৫-৮৪ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও নিজের পরিচিতি ঘটাতে তৎপর ছিলেন। একদিনের আন্তর্জাতিকে মাইক গ্যাটিংয়ের নাক ভেঙ্গে ফেলেন। ১৯৮৪ সালের সিরিজের শুরুরদিকেও অ্যান্ডি লয়েড তাঁর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন এবং আর কখনো নিজেকে শীর্ষসারির ক্রিকেটারের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেননি। গ্রায়েম ফাওলারের সাথে ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমে অভিষেক টেস্টেই বাউন্সারে হেলমেট থাকা অবস্থায় বল ডানদিকের চোখের নিচে আঘাত হানে। এরফলে, অকালেই তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন শেষ হয়ে যায়। পরবর্তীতে জানা যায় যে, অ্যান্ডি লয়েডের ডান চোখে ৩৫% দৃষ্টি শক্তি কমে যায়। একই মৌসুমে কিংস্টনে নিউজিল্যান্ডীয় ব্যাটসম্যানদের জবুথবু করে ছাড়েন। বিশ্বের কোন আম্পায়ার এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজেও বাউন্সারে তাঁর সীমাবদ্ধতায় প্রশ্ন তুলেননি।
১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে নিজ দেশে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ৪ মে, ১৯৮৫ তারিখে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্ট খেলেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ২/৪৭ ও ৪/৬৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে মাঠে ২৬ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলায় স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভসহ এ সিরিজে ৯০ রান সংগ্রহসহ ২৭ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।
খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুরদিকেই ইন-সুইঙ্গার ও লেগ-কাটারে দক্ষ হয়ে উঠেন। এছাড়াও, টেস্টের ইনিংসগুলোয়ও বেশ কার্যকরীতা প্রকাশ করেছিলেন। সচরাচর আট নম্বরে কিংবা তারও উপরের অবস্থানে ব্যাটিং করতে নামলেও অন্যান্য ফাস্ট বোলারদের ন্যায় নিতান্ত শখ হিসেবে ব্যাট হাতে মাঠে নামতেন না। নিচেরসারির ব্যাটসম্যান ছিলেন। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ৯২ রানের ইনিংস খেলেন। সব মিলিয়ে টেস্টে ১০টি অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছেন। এছাড়াও, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সাতটি শতক হাঁকিয়েছিলেন।
১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৭ নভেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। আরও একবার বল হাতে নিয়ে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রেখেছিলেন। ৫/৩৩ ও ১/১৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ১০ রানে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
একই সফরের ২০ নভেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৪ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৫৭ ও ৩/৩১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক ইমরান খানের অসামান্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও ১-১ ব্যবধানে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। ৩২ রান সংগ্রহসহ ১৬ উইকেট দখল করে ইমরান খানের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।
১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৭ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ১৫ রানে পৌঁছানোকালে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৩০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৫৭ ও ০/৪৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। জন রাইটের অনবদ্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৮৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ১২.৬৫ গড়ে ৩৫ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, ওল্ড ট্রাফোর্ডে এক ঘণ্টায় পাঁচটি উইকেট পান ও ইনিংসে ৭/২২ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে স্বাগতিকদেরকে ৯৩ রানে গুটিয়ে দেন। ঐ সিরিজে খুব কমই বাউন্সার ছুঁড়েছিলেন ও তেমন প্রয়োজন পড়েনি। তবে, ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্ট সম্পর্কে উইজডেনে মন্তব্য করা হয় যে, উইকেটের অপর প্রান্তে উদীয়মান কার্টলি অ্যামব্রোসের উত্থানের কারণেই তাঁর এ ভূমিকা ছিল। ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে পোর্ট অব স্পেনে ভারতের বিপক্ষে আরও একবার তাঁর উপস্থিতির কথা জানান দেন। ঐ টেস্টে ৮৯ রান খরচায় ১১ উইকেট পেয়েছিলেন।
৮ আগস্ট, ১৯৯১ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত নিজস্ব ৮১তম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। পঞ্চম ও সিরিজের সর্বশেষ টেস্টের পূর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ২-১ ব্যবধানে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এগিয়েছিল ও সিরিজ জয়ের জন্যে কেবলমাত্র ড্রয়ের প্রয়োজন ছিল। ১২ আগস্ট, ১৯৯১ তারিখে ভিভ রিচার্ডস, জেফ ডুজন ও ম্যালকম মার্শাল একযোগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু ৫ উইকেটে পরাজয়ের মাধ্যমে তাঁদেরকে বিদেয় নিতে হয়েছিল। দলের শীর্ষ খেলোয়াড়দের অবসরের ফলে সেরা দলের ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়া ও বিরাট শূন্যতা সৃষ্টির নজির গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল।
গ্রাহাম গুচকে বিদেয় করে ৩৭৬তম টেস্ট উইকেট লাভ করে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান রেকর্ড গড়েন ও পরবর্তীতে ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে কোর্টনি ওয়ালস রেকর্ডটি নিজের করে নেন। তবে, কমপক্ষে ২০০ টেস্ট উইকেট লাভ অন্য যে-কোন বোলারের তুলনায় ২০.৯৪ গড়ে উইকেট লাভের বিষয়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। পেস, সুইং, সিম ও অত্যন্ত বিপজ্জ্বনক বাউন্সারের সংমিশ্রণে এ সাফল্য পেয়েছেন। খুব কমসংখ্যক ব্যাটসম্যানই তাঁর বল মোকাবেলায় সিদ্ধহস্তের অধিকারী ছিলেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর পরবর্তী দুই মৌসুম হ্যাম্পশায়ারের পক্ষে খেলা চলমান রাখেন। এ পর্যায়ে ১৯৯২ সালের বেনসন এন্ড হেজেস প্রতিযোগিতার শিরোপা জয় করে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। ১৯৯৬ সালে ঐ ক্লাবের কোচ হিসেবে যোগ দেন। একই বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচের দায়িত্ব পান। তবে, ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েন। বসন্তকালে মলাশয়ের ক্যান্সারের চিকিৎসা করান। ইংল্যান্ডে কেমোথেরাপিতে সুস্থ হতে না পেরে বার্বাডোসে চলে আসেন। মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ পূর্বে দীর্ঘদিনের বান্ধবী কোনি রবার্টা আর্লকে বিয়ে করেন। এ দম্পতির মালি মার্শাল নামীয় পুত্র সন্তান রয়েছে। ৪ নভেম্বর, ১৯৯৯ তারিখে মাত্র ৪১ বছর ২০০ দিন বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অকালমৃত্যু ঘটে ও পুরো ক্রিকেট বিশ্ব শোকাহত হয়ে পড়ে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে শবযানবাহক হিসেবে পাঁচ জন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়ক ছিলেন।
আগ্রহ সহকারে খেলায় অংশ নিতেন। পরীক্ষিত সৈনিক ছিলেন ও প্রতিপক্ষের কাছে সমীহের পাত্রে পরিণত হন। হ্যাম্পশায়ারের দলীয় সঙ্গী রবিন স্মিথ মন্তব্য করেন যে, ব্যাটসম্যানের ধরন অনুযায়ী বোলিং করে এ সফলতা পেয়েছিলেন। নিষ্প্রাণ পিচেও সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। খেলোয়াড়ী জীবন শেষে সতীর্থ সকল পেশাদার ক্রিকেটারের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখেন ও সকলের শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত হন। ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে তৎকালীন নিষিদ্ধঘোষিত দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদ্রোহী দলের সাথে যাননি। তবে, ১৯৯০-এর দশকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে নাটাল দলের পক্ষে কোচের দায়িত্ব পালনসহ খেলেছিলেন। ২৮ নভেম্বর, ২০০১ তারিখে দ্য হ্যাম্পশায়ার রোজ বোলের প্রবেশ পথে রয় মার্শাল ও ম্যালকম মার্শালের স্মরণে নতুন সড়ক চিহ্ন দেয়া হয়।