Skip to content

মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন

1 min read

৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৩ তারিখে অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ও অন-সাইডে দৃষ্টিনন্দন কব্জীর মোচড়ে রান সংগ্রহে তৎপরতা চালাতেন। অসাধারণ ফিল্ডিং ও নেতৃত্বের গুণাবলী তাঁর মাঝে বহমান ছিল। ধ্রুপদীশৈলীর অধিকারী ব্যাটসম্যানের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও সমান দক্ষতা প্রদর্শন করেছিলেন। ওডিআই থেকে ১৫৬ ক্যাচ মুঠোয় পুড়েন। অনেকগুলো বছর ভারত দলের অন্যতম অনুপ্রেরণাদায়ক শক্তিরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তবে, পাতানো খেলার কেলেঙ্কারীতে জড়িয়ে পড়ে বেশ দুর্নাম কুড়ান। পরবর্তীকালে অবশ্য এ অভিযোগ থেকে মুক্তি পান।

ইস্পাতের ন্যায় মজবুত প্রকৃতির কব্জী নিয়ে যে-কোন ধরনের বল খেলতে পারতেন। মিড-অন ও ফাইন-লেগ অঞ্চলের যে-কোন নিশানা বরাবর বল ঠেলে দিতেন। লেগ-সাইডে তাঁর খেলার ধরন অনেকাংশেই জহির আব্বাস ও গ্রেগ চ্যাপেলের অনুরূপ ছিল। ছন্দে থাকাকালে যে-কোন ফিল্ডিংকারী দলকে হতভম্ব করে ফেলতে পারতেন। নিজের সেরা দিনে কেউ তাঁকে সহজে আটকাতে পারতো না। পেস ও বাউন্সের বিপক্ষে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন না। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলারদের শিকারে পরিণত হন এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও একই ধারা বিরাজমান ছিল।

৫ ফুট ৮ ইঞ্চি (১.৭৯ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। তাঁর দাদা সর্বপ্রথম ক্রিকেটের প্রতি গভীর আসক্তির কথা টের পান। অল সেন্টস মিশনারী স্কুলের ব্রাদার যোসেফ খেলার প্রতি তাঁর সুগভীর ভালোবাসার কথা তুলে ধরেন। কিশোর আজহারউদ্দীন অল সেন্টসের পক্ষে সিম বোলার হিসেবে বলে সুইং আনতে পারতেন। তবে, হায়দ্রাবাদ স্কুলসের পক্ষে তৃতীয় সিমারের পাশাপাশি খুব দ্রুত নিজেকে তিন নম্বর অবস্থানে ব্যাট হাতে নামতে থাকেন।

১৯৮১-৮২ মৌসুম থেকে ১৯৯৯-২০০০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে হায়দ্রাবাদ ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। নিজ রাজ্য দল হায়দ্রাবাদের পক্ষে ১৮ বছর বয়সে ১৯৮১-৮২ মৌসুমের রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে পেশাদারী পর্যায়ে খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনা ঘটান। খুব সহজেই দলের ক্রান্তিকালে নিজেকে মেলে ধরতেন ও নিয়মিত সদস্যে পরিণত করেন। বয়সের পরিপক্কতাকে এড়িয়ে তাঁর ব্যাটিংয়ে অভিজ্ঞতার ছাঁচ নিয়ে আসেন। প্রথম মৌসুমে মাত্র একটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলে ক্রিকেট বিশ্বে নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হন। তবে, পরবর্তী দুই মৌসুমে ক্রমাগত সুন্দর খেলা উপহার দিতে থাকেন। উভয় মৌসুমেই আড়াই সহস্রাধিক রান সংগ্রহ করেছিলেন।

জানুয়ারি, ১৯৮৪ সালে দিলীপ ট্রফি প্রতিযোগিতায় সাউথ জোনের সদস্যরূপে মনোরম দ্বি-শতক হাঁকান ও জাতীয় সংবাদে পরিণত হন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন। ফলশ্রুতিতে, জিম্বাবুয়ে সফরে ভারতের অনূর্ধ্ব-২৫ দলের পক্ষে খেলার সুযোগ পান। তবে, ঐ বছরের অক্টোবরে পাকিস্তানে সংক্ষিপ্ত সফরে তাঁকে ভারত দলে রাখা হয়নি। ঐ মৌসুমের শেষদিকে ডেভিড গাওয়ারের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের বিপক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন।

১৯৮৪ থেকে ২০০০ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৯৯ টেস্ট ও ৩৩৪টি ওডিআইয়ে অংশ নেন। ১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে নিজ দেশে ডেভিড গাওয়ারের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৮৪ তারিখে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। সিরিজে ১-১ ব্যবধানে সমতা থাকা অবস্থায় অনাকাঙ্খিত ঘটনায় কপিল দেব দল থেকে বাদ পড়েন ও সন্দীপ পাতিলের পরিবর্তে তাঁকে যুক্ত করা হয়। দূর্দান্ত খেলে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখেন। নিজস্ব প্রথম খেলায় দারুণ শতক হাঁকান। প্রথম ইনিংসে রবি শাস্ত্রী’র সাথে পঞ্চম উইকেটে ২১৪ রানের জুটি গড়ে ভারতের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন। পরবর্তীতে, ২০০১ সালে রাহুল দ্রাবিড় ও ভিভিএস লক্ষ্মণ তাঁদের ঐ রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন। ঐ টেস্টটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১১০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন।  

পরবর্তী দুই টেস্টেও শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। এরফলে, স্বল্পসংখ্যক ক্রিকেটারদের অন্যতম হিসেবে প্রথম তিন টেস্টে শতক হাঁকানোর রেকর্ডের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। অনবদ্য এ রেকর্ডটি অদ্যাবধি অক্ষত রয়ে গেছে। ১৯৮৫ সালে নিজের স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন।

১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে নিজ দেশে দিলীপ মেন্ডিসের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে কানপুরের গ্রীন পার্কে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১৯৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৮৯ সালে দল থেকে বাদ পড়েন। করাচী টেস্টে রমন লাম্বা আঘাতের কবলে পড়লে তাঁকে শেষবারের মতো সুযোগ দেয়া হয়। চার টেস্ট পরই তাঁকে ভারতের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল। ১৯৮৯ সালে ভারত দলের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হন।

১৯৯০-এর দশকের অধিকাংশ সময়ই তিনি দলকে পরিচালনা করেছিলেন। পরিসংখ্যানগতভাবে ভারতের অন্যতম সফল অধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। তাঁকে ভারতের অন্যতম সেরা অধিনায়ক হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়ে থাকে। এ পর্যায়ে তিনি দলকে ১০৩টি ওডিআই ও ১৪ টেস্টে জয় এনে দেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থাকাকালে অনিল কুম্বলে’র সহায়তা নিয়ে নিজ দেশে সিরিজ বিজয়ে অগ্রসর হয় ভারত দল। পরবর্তীতে অবশ্য টেস্ট জয়ের রেকর্ডটি সৌরভ গাঙ্গুলী’র ২১ টেস্ট জয়ে ম্লান হয়ে পড়ে ও এমএস ধোনি রেকর্ডটি নিজের করে নেন। এ পর্যায়ে নিজ দেশে কোন সিরিজে পরাজয়বরণ করেনি তাঁর দল। তবে, শ্রীলঙ্কা বাদে বাদ-বাকী দেশে পরাজয়ের শিকারে পরিণত হয়। তাসত্ত্বেও, ভারতের অন্যতম সফলতম অধিনায়ক হিসেবে খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করেন।

১৯৮৯-৯০ মৌসুমে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ১৬৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ইয়ান স্মিথের অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্র হলেও স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

২০ জানুয়ারি, ১৯৮৫ তারিখে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। ১৯৮০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধ্বে খ্যাতির তুঙ্গে পৌঁছেন ও স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। অভিষেকের পর থেকে ক্রমাগত রান সংগ্রহ করতে থাকেন।

১৯৯০ সালে ভারতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৬ জুলাই, ১৯৯০ তারিখে লর্ডসে শুরু হওয়া সিরিজের প্রথম টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্মরণীয় ইনিংস খেলেন। সম্ভাব্য ফলো-অনের কবলে পড়তে থাকা ভারতীয় দলের এক প্রান্তে আঁকড়ে থেকে আগ্রাসী ভঙ্গীমায় মাত্র ৮৭ বলে শতক হাঁকান। অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকই তাঁর এ ইনিংসকে সেরা হিসেবে পরিগণিত করেছেন। ইংরেজ বোলারদের রুখে দিয়ে দ্রুতগতিতে ১২১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। ভারতের ব্যাটিং স্তম্ভ ব্যর্থ হলে তিনি মাঠ আঁকড়ে ধরে রাখেন। ফলো-অন থেকে বাঁচলেও ঐদিন ভারত দল পরাজিত হয় ও পাশাপাশি সিরিজ হারায়। দল হারলেও তিনি স্বার্থক ছিলেন।

২৩ আগস্ট, ১৯৯০ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। একমাত্র ইনিংসে ৭৮ রান সংগ্রহ করেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পুরো সিরিজে ৪২৬ রান সংগ্রহ করে গ্রাহাম গুচের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

১৯৯২-৯৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ভারতীয় দলের নেতৃত্বে থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। মার্চ, ১৯৭০ সালের পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটি প্রথম টেস্ট খেলা ছিল। ১৩ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৬ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। প্রবীণ আম্রে’র অসাধারণ শতকে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই মৌসুমে নিজ দেশে গ্রাহাম গুচের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২৯ জানুয়ারি, ১৯৯৩ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। দলনায়কের দায়িত্বে থেকে অসামান্য ব্যাটিং করেন। প্রথম ইনিংসে ১৮২ রান তুলে দলের ভিত গড়েন। স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৯ মার্চ, ১৯৯৪ তারিখে হ্যামিল্টনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৪৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৪০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৬৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। অভিষেকধারী স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের অসাধারণ সাফল্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।

১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে নিজ দেশে লি জার্মনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৮ অক্টোবর, ১৯৯৫ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৮৭ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। ঐ টেস্টে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

তাঁর আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে আরোহণ করে ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখায় অধিনায়ক হিসেবে কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্তের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। প্রসিদ্ধ ক্রিকেট লেখক জন উডকক মন্তব্য করেন যে, ‘ইংরেজদেরকে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের ন্যায় ব্যাটিং করার জন্যে বলা উচিৎ নয়। তাঁদেরকে বরঞ্চ লন্ডন ডার্বিতে ঘোড়দৌড় জয়ের কথা বলাটাই অধিক সমীচিন হবে।’

১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে নিজ দেশে হ্যান্সি ক্রোনিয়ের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ২৭ নভেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত ৬ ও দলীয় সংগ্রহ ৮৭/৩ থাকাকালে আঘাতের কবলে পড়েন। এরপর, দলের সংগ্রহ ১৬১/৭ থাকাকালে পুণরায় মাঠে ফিরে আসেন। ৬১তম ওভারে ল্যান্স ক্লুজনারের বল থেকে উপর্যুপরী পাঁচটি চারের মার মেরেছিলেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। এ পর্যায়ে ৪১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৪৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১০৯ ও ৫২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, গ্যারি কার্স্টেনের জোড়া শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ৩২৯ রানের ব্যবধানে জয়ী হয় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই সফরের ৮ ডিসেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৫ ও ১৬৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিক দল ২৮০ রানে জয় পায় ও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভসহ পুরো সিরিজে ৩৮৮ রান সংগ্রহ করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে ওয়েলিংটনের ব্যাসিন রিজার্ভে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ১০৩* ও ৪৮ রান করে সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, সায়মন ডৌলের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৪ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে যায়।

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে নিজ দেশে হ্যান্সি ক্রোনিয়ে’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২ মার্চ, ২০০০ তারিখে বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৯ ও ১০২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। নিকি বোয়ে’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে খেলায় তাঁর দল ইনিংস ও ৭১ রানে পরাজয়বরণ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ব্যাটসম্যান হিসেবে বিধ্বংসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বেশকিছু দর্শনীয় ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১৯৯০ সালে লর্ডসে ১২১, ১৯৯১-৯২ মৌসুমে অ্যাডিলেড ওভালে ১০৬, ১৯৯২-৯৩ ও ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে ইডেন গার্ডেন্সে ১৮২ ও ১০৯, ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে নিউল্যান্ডসে ১১৫ ও ১৯৯৭ সালে এসএসসিতে অপরাজিত ১০৮ রানের ইনিংস সবিশেষ উল্লেখযোগ্যতার দাবীদার। কেবলমাত্র কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সেই সাত টেস্টে অংশ নিয়ে ১০৭.৫০ গড়ে পাঁচ শতক সহযোগে রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের প্রথম ও শেষ টেস্টে ১০২ রান তুলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৯৯ রান তুলেন। সব মিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ২২ শতক সহযোগে ৪৫.০৩ গড়ে ৬২১৫ রান ও ওডিআইয়ে ৭ শতক সহযোগে ৩৬.৯২ গড়ে ৯৩৭৮ রান পেয়েছেন।

সীমিত-ওভারের খেলায় প্রভূত্ব দেখান। ইনিংসের মাঝামাঝি পর্যায়ে ক্ষীপ্রগতিতে রান সংগ্রহ করে দলকে গতিশীল করতে ভূমিকা রাখতেন। শেষের ওভারগুলোয় দ্বাদশ খেলোয়াড়ের প্রয়োজন পড়তো। ওডিআইয়ে ৯৩৭৮ রান তুলে অবসরগ্রহণকালীন বিশ্বরেকর্ড গড়েন ও দ্রুততম শতক হাঁকান। পরবর্তীতে, অবশ্য অনেক খেলোয়াড়ই ঐ রেকর্ডটি ভেঙ্গে ফেলেছিল। এছাড়াও, ডার্বিশায়ারের পক্ষে সফলতম সময় অতিবাহিত করেছেন। তাঁর বিদ্যুৎগতিতে ফিল্ডিং করার বিষয়টি বেশ দৃষ্টিনন্দন ছিল। স্লিপ অঞ্চলে দণ্ডায়মান থেকে দৃষ্টিনন্দন ক্যাচ তালুবন্দী করতেন। পয়েন্ট কিংবা এক্সট্রা-কভার অঞ্চলে চিতা বাঘের ন্যায় ঝাঁপিয়ে পড়তেন। ওডিআই থেকে ১৫৬ ক্যাচ মুঠোয় পুড়েছেন। মাহেলা জয়াবর্ধনে তাঁর এ রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলার পূর্ব পর্যন্ত সর্বাধিক ছিল। মাঠে শার্টের কলার উঁচিয়ে রাখতেন।

১৯৮৬ সালে অর্জুন পদক ও ১৯৮৭ সালে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত হন। ১৯৯১ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন।

২০০০ সালে ৩৭ বছর বয়সে তিনটি ওডিআইয়ে খেলা গড়াপেটায় যুক্ত থাকার অভিযোগ উত্থাপিত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রনিয়ে জুয়াড়ীদের সাথে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করলে তা আরও ঘণীভূত হয়। অতঃপর, ভারতের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই এ সম্পর্কীয় প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বিসিসিআই কর্তৃক আজীবনের জন্যে ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত হন। এরফলে, পেশাদারী পর্যায়ে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। এরপর, ২০০৬ সালে বিসিসিআই এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এমনকি, ২০০৬ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চলাকালে মুম্বইয়ে অন্যান্য ভারতীয় টেস্ট অধিনায়কের সাথে তাঁকেও সম্মানিত করে। ৮ নভেম্বর, ২০১২ তারিখে অন্ধ্রপ্রদেশের উচ্চ আদালত থেকে অবৈধ ঘোষণা করা হলে তাঁর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তাঁর আত্মজীবনীনির্ভর চলচ্চিত্র টনি ডি’সুজার পরিচালনায় নির্মিত হয়। ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ঐ চলচ্চিত্রে ইমরান হাশমী কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করেন।

অবসর পরবর্তীকালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ তারিখে কংগ্রেস দলে যোগ দেন। পরবর্তীতে, ২০০৯ সালের ভারতের সাধারণ নির্বাচনে পশ্চিমাঞ্চলীয় উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ নির্বাচনী এলাকা থেকে পদপ্রার্থী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিজেপি প্রার্থী কুনবর সরবেশ কুমার সিংকে পঞ্চাশ হাজারের অধিক ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্যরূপে নির্বাচিত হন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। হায়দ্রাবাদের রমণী নওরিনের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। নয় বছর বৈবাহিক জীবনের সমাপ্তি টানেন। ১৯৯৬ সালে মডেল ও অভিনেত্রী সঙ্গীতা বিজলানিকে বিয়ে করেন। চৌদ্দ বছর দাম্পত্য জীবনযাপনের পর ২০১০ সালে তাঁদের মধ্যকার সম্পর্ক বিচ্ছেদে রূপান্তরিত হয়। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় জোলা গাত্তা’র সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে উভয়েই তা অস্বীকার করেন। প্রথম পত্নী নওরিনের এম আসাদুদ্দীন ও আয়াজ নামীয় দুই সন্তান ছিল। তন্মধ্যে, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১ তারিখে ১৯ বছর বয়সে আয়াজ সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।