Skip to content

২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৩১ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

‘ট্যাট’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। ভীতিহীন অবস্থায় হুক এবং কাট মারতেন ও বেশ দক্ষতার পরিচয় দেন। বোম্বে স্কুল থেকে আগত অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। ফুরফুরে মেজাজে থাকা অবস্থায় তাঁর খেলার ধরন বেশ দর্শনীয় ছিল। পাশাপাশি, মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণ কর্মে অগ্রসর হতেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ছয়টি স্ট্যাম্পিং করেছিলেন। ১৯৪৯-৫০ মৌসুম থেকে ১৯৭২-৭৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে অন্ধ্র, বাংলা, মহারাষ্ট্র, বোম্বে ও উত্তরপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বোম্বের মাঝারিসারির সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে চিত্রিত করেছিলেন। অসম্ভব সাহস ও প্রতিভা স্বাক্ষরের বিপরীতে দীর্ঘদিন সাধারণমানের ক্রীড়ানৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখেছেন।

১৯৫২ থেকে ১৯৬৫ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৫৫ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫১-৫২ মৌসুমে নিজ দেশে নাইজেল হাওয়ার্ডের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৫১ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। রমেশ দিবেচা ও সুভাষ গুপ্তে’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৪৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

রোহন কানহাইয়ের ২৫৬ রানের উপর ভর করে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ৬১৪ রান তুলে। ওয়েস হলরয় গিলক্রিস্টের তোপে স্বাগতিক ভারত দল প্রথম ইনিংসে মাত্র ১২৪ রানে গুটিয়ে যায়। ফলো-অনের কবলে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসেও একই পরিণতি হলেও তিনি অনঢ় ছিলেন। দলের সংগ্রহ ১৭/৪ হয়। শোচনীয় পরাজয়ের দিকে অগ্রসর হলেও কলকাতার দর্শককূল পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে তাঁর রুখে দাঁড়ানো ব্যাটিংশৈলীতে বেশ মজে যায়। ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ঐ টেস্টে তাঁর দল ইনিংস ও ৩৩৬ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাভূত হয়েছিল।

তবে, রেকর্ড বহিতে অন্য কথা লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। ঐ সিরিজে তিনি মাত্র ২৪.৬৭ গড়ে ১৪৮ রান তুলতে সমর্থ হয়েছিলেন। ইডেন গার্ডেন্সে এটিই তাঁর একমাত্র অর্ধ-শতক ছিল।

১৯৫৯ সালে ভারত দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। নিজস্ব দ্বিতীয় সিরিজে অংশ নেন। সিরিজের প্রথম টেস্টে ফ্রেড ট্রুম্যান, অ্যালেক বেডসার ও জিম লেকারের ন্যায় তারকা বোলারদের রুখে দিয়ে ১৩৩ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস উপহার দেন। এ পর্যায়ে অধিনায়ক বিজয় হাজারে’র সাথে ২২২ রানের জুটি গড়ে প্রথম ইনিংসে দলের বিপর্যয় রোধ করেন। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে ফ্রেড ট্রুম্যানের বলে শূন্য রানে বিদেয় নিলে ভারত দলের সংগ্রহ ০/৪ হয়।

এরপর, পরবর্তী ১৮ ইনিংসের কোনটিতেই আর অর্ধ-শতরানের সন্ধান পাননি। বেশ সাহসের পরিচয় দিয়ে এ বাঁধা অতিক্রম করেন। কিংস্টনে ১১৮ রান তুলেন। পঙ্কজ রায়ের সাথে ২৩৭ রানের জুটি গড়েন ও আল্ফ ভ্যালেন্টাইনের বোলিং মোকাবেলা করে দলে পরাজয় এড়াতে অবর্ণনীয় ভূমিকা রাখেন।

দুইটি সিরিজ দারুণ খেলেন। ১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই শতক সহযোগে ৭৭.২০ গড়ে ৩৮৬ রান তুলেন। ১৯৬১-৬২ মৌসুমে ইংল্যান্ড দল ভারত সফরে আসে। পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৮৩.৭১ গড়ে ৫৮৬ রান তুলেন। এ পর্যায়ে দিল্লি টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। তবে, তাঁর এ শতকটি ছয় বছর পূর্বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার পর তাঁর প্রথম শতক ছিল।

দূর্ভাগ্যবশতঃ তিনি তাঁর স্বর্ণালী সময় ফেলে আসেন। তাসত্ত্বেও তাঁর পায়ের কারুকাজ ঠিকই বহমান থাকে ও তাঁর খেলার মান প্রশ্নাতীত ছিল। খেলার মান বেশ নিচেরদিকে চলে যেতে থাকে। শুরুর দিনগুলোর ন্যায় কভার অঞ্চলে দূর্দান্ত ফিল্ডিং করতেন। প্রায়শঃই বিকল্প উইকেট-রক্ষক হিসেবে অংশ নিতে থাকেন। কিন্তু বয়সের ভারে ন্যূহ হয়ে পড়েন ও মাঠের গুরুত্বহীন জায়গায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়।

১৯৬১-৬২ মৌসুমে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে ভারতের শোচনীয় ব্যর্থতায় নিজেকেও শামিল করেন। ১০ ইনিংস থেকে মাত্র ১৬৭ রান তুলতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাসত্ত্বেও দলের সর্বাপেক্ষা কুশলী ব্যাটসম্যান হিসেবে যুক্ত ছিলেন। পরের তিন বছরে কয়েকটি স্মরণীয় ইনিংস খেলেন। ১৯৬৪ সালে মাদ্রাজ টেস্টে বুধি কুন্দরনের ১৯২ রান সংগ্রহের পাশাপাশি ১০৮ রান তুলে নিজের প্রাণান্তকর চেষ্টা চালান। ঐ বছরের শেষ দিকে ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫৯ ও ৩৯ রান তুলে ভারতের দুই উইকেটের স্বল্প ব্যবধানের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

কয়েক মাস পর ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে নিজ দেশে জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৫ তারিখে মাদ্রাজে শুরু হওয়া সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। প্রথম ইনিংসে ১৯ রান সংগ্রহ করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। ১০২ রানের এ শতকটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর সপ্তম তিন অঙ্কের রান সংগ্রহ ছিল। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

টেস্টগুলো থেকে ৩৯.১২ গড়ে ৩২০৯ রান তুলেন। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের দূরন্ত গতিপণার বোলারদের বিপক্ষে খেলায় মিইয়ে থাকার যুগে তাঁর এ প্রয়াস বেশ স্বার্থক ছিল। রঞ্জী ট্রফিতে বোম্বে, বাংলা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, অন্ধ্র ও মহারাষ্ট্র-এ ছয়টি দলের সদস্যরূপে খেলেন। ৫৭.৪৪ গড়ে ৩৭৩৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। বোম্বের বিদ্যালয় থেকে ব্যাটসম্যান হিসেবে আলোকবর্তিকা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। পরবর্তীতে তাঁর এ ধারা পলি উমরিগড়সুনীল গাভাস্কারের মাঝে বহমান ছিল। এয়ার ইন্ডিয়ার চাকুরী করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। রেখা মাঞ্জরেকর নাম্নী এক রমণীকে বিয়ে করেন। তাঁদের সন্তান সঞ্জয় মাঞ্জরেকর ভারতের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নিয়েছে। ১৮ অক্টোবর, ১৯৮৩ তারিখে তামিলনাড়ুর মাদ্রাজে মাত্র ৫২ বছর ২২ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। সাতজন খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে বিসিসিআই কর্তৃক মরণোত্তর সম্মাননা লাভ করেন।