Skip to content

নাজমুল হোসেন শান্ত

1 min read

২৫ আগস্ট, ১৯৯৮ তারিখে রাজশাহীতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। বামহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ধ্রুপদীশৈলীর বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। দর্শনীয় ব্যাটিং নৈপুণ্যের অধিকারী হিসেবে পিছনে ব্যাট উঁচু করে বামহাতে বল মোকাবেলা করার সক্ষমতা প্রদর্শন করে চলেছেন। বিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থাতেই বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। কিশোর বয়সেই সংবাদ শিরোনামে চলে আসেন। রাজশাহীতে বিদ্যালয় দলের একদিনের খেলায় দ্বি-শতক হাঁকিয়ে বয়সভিত্তিক দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন। এরপর, দ্রুতলয়ে বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৭ দলের সদস্যদের খসড়া তালিকায় স্থান পান। পরবর্তীতে, ২০১৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্য হন। ফলশ্রুতিতে, ২০১৪ ও ২০১৬ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেন। তন্মধ্যে, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সফলতা সূচনা ঘটান। ঐ প্রতিযোগিতায় অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করে ৬৪.৭৫ গড়ে ২৫৯ রান তুলেন ও দলকে তৃতীয় স্থান অধিকারে বিরাট ভূমিকা পালন করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে উপর্যুপরী ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেছিলেন।

২০১৪-১৫ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে উত্তরাঞ্চল ও রাজশাহী বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, আবাহনী লিমিটেড, কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমি, খুলনা টাইগার্স, মিনিস্টার রাজশাহীর পক্ষে খেলেছেন। ৭ মে, ২০১৫ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত পূর্বাঞ্চল বনাম উত্তরাঞ্চলের মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তাঁর। একই বছর রাজশাহী বিভাগের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজস্ব প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেন। ২০১৬ সালের ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের আসরে প্রথমবারের মতো ঘরোয়া পর্যায়ের খেলার স্বাদ আস্বাদন করেন। ৪১.৩০ গড়ে ৫৩৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০১৬-১৭ মৌসুমে তামিম ইকবালের নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ড সফরকে ঘিরে নভেম্বর, ২০১৬ সালে সিডনিতে প্রশিক্ষণ শিবিরে বড়দের সাথে খেলার জন্যে মনোনীত হন। ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবার পূর্বদিন মমিনুল হক পাঁজরে আঘাত পেলে তাঁকে প্রথম একাদশে রাখা হয়। অতঃপর, বাংলাদেশের ৮৪তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে নূরুল হাসানের সাথে তাঁর একযোগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত অভিষেক টেস্টে ১৮ ও ১২ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। খেলায় স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে জয়লাভ করে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়ী হয়।

এরপর অবশ্য হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের একমাত্র টেস্টে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে খেলা থেকে বাদ পড়েন। পরবর্তী বছরগুলোয় কয়েকটি আন্তর্জাতিক খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেও তার সদ্ব্যবহার করতে পারেননি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তেমন সুবিধে করতে না পারলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে ঠিকই রানের ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেন।

সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সালে ত্রি-দেশীয় টি২০আই সিরিজে আফগানিস্তানের কাছে বেশ নাকানিচুবানি খেলে পুণরায় সিরিজের বাদ-বাকী খেলাগুলোয় অংশগ্রহণের জন্যে আমন্ত্রণ পান।

২০২১-২২ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ৩১ মার্চ, ২০২২ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩৮ ও ২৬ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে সাইমন হারমারের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। কেশব মহারাজের অনবদ্য বোলিং সাফল্যে সফরকারীরা ২২০ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে যায়।

২০২৩-২০২৫ আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের অংশ হিসেবে নভেম্বর, ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড দলের বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে তাঁকে ত্রয়োদশ অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৫ রানের মনোজ্ঞ শতক হাঁকিয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন। এরপূর্বে প্রথম ইনিংসে ৩৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ টেস্টে তাইজুল ইসলামের ১০ উইকেট দলের ১৫০ রানের বিজয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখে ও প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড দলকে পরাজিত করে।

২০২৩-২৪ মৌসুমে নিজ দেশে ধনঞ্জয় ডি সিলভা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কা দলের মুখোমুখি হন। দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব করেন। দলের অনেকের ন্যায় তিনিও ব্যর্থতার পরিচয় দেন। ২২ মার্চ, ২০২৪ তারিখে সিলেটে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে ৫ ও ৬ রান সংগ্রহ করেন। ঐ টেস্টে তাঁর দল ৩২৮ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয়।

এরপর, ৩০ মার্চ, ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম টেস্টে ১ ও ২০ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বিশ্ব ফার্নান্দোকে ১১ রানে রান-আউটে বিদেয় করেন। ঐ টেস্টেও স্বাগতিকরা ১৯২ রানে পরাস্ত হবার পাশাপাশি ২-০ ব্যবধানে সিরিজে পরাজয়বরণ করে। 

২০২৫ সালে বাংলাদেশী দলকে নেতৃত্ব দিয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ১৭ জুন, ২০২৫ তারিখে গলে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন ও ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ১১১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১৪৮ ও ১২৫* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর মনোমুগ্ধকর জোড়া শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

এরপর, ২৫ জুন, ২০২৫ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৮ ও ১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পথুম নিশাঙ্কা’র অসাধারণ শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৭৮ রানে পরাজিত হলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।