Skip to content

২৭ জানুয়ারি, ১৯৭৪ তারিখে মাত্তুমাগালা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তরে অংশ নিয়েছেন।

শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের স্বর্ণযুগে অন্যতম সেরা ক্রিকেট তারকা ছিলেন। সন্দেহাতীতভাবে নতুন বল নিয়ে বিশ্বসেরা বোলারদের অন্যতম ছিলেন। খুব সহজেই শ্রীলঙ্কার নতুন বলের সর্বাপেক্ষা সফলতম বোলারের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। বলকে নিপুণ দক্ষতার সাথে সুইং ও সিম সহযোগে কিছুটা দেরিতে হাত থেকে ফেলতেন। এছাড়াও, অতীব সতর্কতার সাথে দৃষ্টিনন্দন অফ-কাটার মারতেন। পাশাপাশি উপমহাদেশের নিষ্প্রাণ পিচে রিভার্স সুইংয়ে ক্রমাগত উইকেট পেয়েছেন। মারাদানাভিত্তিক সেন্ট যোসেফস কলেজে অধ্যয়ন করেছেন।

৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ১৯৯০-৯১ মৌসুম থেকে ২০১২ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে বাসনাহিরা নর্থ, কোল্টস ক্রিকেট ক্লাব, হ্যাম্পশায়ার, ওরচেস্টারশায়ার, মিডলসেক্স, নর্দাম্পটনশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৬ বছর বয়সে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। এছাড়াও, এশিয়া একাদশ, মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব, ডেকান চার্জার্সের পক্ষে খেলেছেন। বোলিং উদ্বোধনে নামতেন। বিদ্যালয় ত্যাগ করার পর কোল্টস ক্রিকেট ক্লাবের সদস্য হন। গল ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে প্রথম অংশ নেন ও তাৎক্ষণিকভাবে সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। মাত্র তেরোটি খেলায় অংশ নেয়ার পরপরই টেস্ট দলের সদস্যরূপে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে অনেকগুলো ক্লাব দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০০৭ মৌসুমে ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে মিডলসেক্সের সাথে খেলে বেশ সফলতা পান। একই বছর ক্লাবের ক্যাপ লাভের অধিকারী হন। ২০১০ সালের টি২০ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকল্পে নর্দাম্পটনশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের সদস্য হন। এ প্রতিযোগিতায় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামেন ও তিনটি অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছিলেন। ২০১১ সালের ক্লাবের ক্যাপ লাভ করেন। এছাড়াও, নর্দান্টসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের উদ্বোধনী আসরে বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত ডেকান চার্জার্সের সাথে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন।

১৯৯৪ থেকে ২০০৯ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ১১১ টেস্ট, ৩২২টি ওডিআই ও ছয়টিমাত্র টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। টেস্টের ঊনিশজন শীর্ষ অল-রাউন্ডারের অন্যতম হিসেবে ২০০ উইকেট ও ৩০০০ রানের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪ তারিখে ভারতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম খেলার স্বাদ আস্বাদন করেন। ঐ খেলায় নবজ্যোৎ সিং সিঁধু’র একমাত্র উইকেট পান। ওভারপ্রতি ৫ রান দিয়ে ৪০ রান খরচ করেছিলেন। এর কয়েকমাস পর পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলায় অংশ নেন।

১৯৯৪ সালে নিজ দেশে সেলিম মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। একই সফরের ২৬ আগস্ট, ১৯৯৪ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। রবীন্দ্র পুষ্পকুমারা ও সঞ্জীবা রানাতুঙ্গা’র সাথে ২০ বছর বয়সে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ঐ খেলায় তিনি কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। তবে, বোলিংয়ে দক্ষতা প্রদর্শনে দল নির্বাচকমণ্ডলীর সুনজরে থাকেন। ০ ও ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একবার বোলিং করার সুযোগ পেয়ে ০/৮০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ওয়াকার ইউনুসের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৫২ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। তন্মধ্যে, একটি টেস্ট পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছিল।

খুব দ্রুত নিজের প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন। প্রথম বছরেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দলের প্রথম বিজয়ের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ১১ মার্চ, ১৯৯৫ তারিখে নেপিয়ারে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ঐ টেস্টে অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। বেশ কয়েকবার ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ১৭ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। এরপর, দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৩ রানে পৌঁছানোকালে আবারও ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। ৩৩ ও ৩৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেটের সন্ধান পান। এ পর্যায়ে কেরি ওয়ামস্লি’র উইকেট লাভ করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বতন সেরা ছিল ৪/৭৪। পরবর্তীতে আবারও নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বতন সেরা ছিল ৫/৪৭।

নেপিয়ারের সবুজ পিচে নিউজিল্যান্ডীয় সিমারদের পাশ কাটিয়ে শ্রীলঙ্কাকে বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়ে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। ঐ টেস্টে ৫/৪৭ ও ৫/৪৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এরফলে, বিদেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার খুব স্বল্পসংখ্যক বিজয়ে অংশ নেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে সফরকারীরা ২৪১ রানে জয় তুলে নেয় ও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

সিরিজের পরের খেলায়ও একই ধারা অব্যাহত রাখেন। নিজস্ব ষষ্ঠ টেস্টে আরও একবার পাঁচ-উইকেট পান ও ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। ১৮ মার্চ, ১৯৯৫ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছিলেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৩৬ রান অতিক্রম করেন। খেলায় ৫১ ও ৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে কেপি ওয়ামস্লিকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৫/৪৩। খেলায় তিনি ৬/৮৭ ও ০/০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরু থেকেই দলের স্থায়ী সদস্যের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন।

১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সাথে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ৭ মার্চ, ১৯৯৭ তারিখে ডুনেডিনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৪/১৪৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ২ ও ৫৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে রমেশ কালুবিতরানা’র (১০৩) সাথে সপ্তম উইকেটে ১৩৮ রানের জুটি গড়ে দ্বি-পক্ষীয় নতুন রেকর্ড দাঁড় করান। এরফলে, ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে নেপিয়ারে চামারা দুনুসিংহে (৯১) ও চামিণ্ডা ভাসের (৩৬) মধ্যকার সংগৃহীত ৮৯ রানের রেকর্ড ম্লান হয়ে যায়। তবে, ব্রায়ান ইয়ংয়ের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৩৬ রানে জয় পেয়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ১৯ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের তৃতীয় দিন প্রমোদ্যা বিক্রমাসিংহের সাথে ২৯ রানের জুটি গড়ে ৮ম উইকেটে ও মুত্তিয়া মুরালিধরনের সাথে ৩০ রানের জুটি গড়ে ৯ম উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নতুন রেকর্ড গড়েন। খেলায় তিনি ৩০ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৭৫ ও ২/৪১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। শন পোলকের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৭০ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

২০০১ সালে নিজ দেশে সৌরভ গাঙ্গুলী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২২ আগস্ট, ২০০১ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলেন। এরফলে নিজস্ব ৫০তম টেস্টে অংশ নেন। ৭ম শ্রীলঙ্কান ও বিশ্বের ১৭২তম খেলোয়াড় হিসেবে এ গৌরব অর্জন করেন। পরদিন ইংল্যান্ডের অ্যান্ডি ক্যাড্ডিক ১৭৩তম খেলোয়াড় হিসেবে ৫০তম টেস্ট খেলেন। ৪২ ও ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/৬৫ ও ০/৪২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, প্রতিপক্ষীয় দলনেতার অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

২০০১-০২ মৌসুমে নিজের স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। এ মৌসুমে নিজ দেশে কার্ল হুপারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৯ নভেম্বর, ২০০১ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত খেলেন। ৭/১২০ ও ৭/৭১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এরফলে, ভারতীয় উপমহাদেশে ইমরান খানের পর দ্বিতীয় ফাস্ট বোলার হিসেবে এক খেলায় ১৪ উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ২৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

এ সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ বিজয়ে ২৬ উইকেট দখল করেন। চামিণ্ডা ভাস ও মুত্তিয়া মুরালিধরন টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের দ্বিতীয় জোড়া হিসেবে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে উভয়ে ২০ বা তদূর্ধ্ব উইকেট উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। তাঁরা এ দূর্লভ কৃতিত্বের অধিকারী হন। দুজনে মিলে সর্বমোট ৫০ উইকেট পেয়েছিলেন। ভাস ২৬টি ও মুরালিধরন ২৪টি উইকেট পান।

এরপর, একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ওডিআইয়ের ইতিহাসে ৮-উইকেট লাভের কৃতিত্ব দেখান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওডিআইয়ের ইতিহাসের প্রথম আট-উইকেট লাভের বিরল কৃতিত্বের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। এ পর্যায়ে তিনি হ্যাট্রিক করেন। এছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়ায় যৌথভাবে অনুষ্ঠিত ২০০৩ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় খেলার প্রথম তিন বলে বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাট্রিক লাভ করেন। ঐ খেলায় আট ওভারে ৮/১৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। এছাড়াও, ওডিআইয়ে সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে ৩০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন।

২০০৪ সালে স্বীয় প্রতিভার বহিঃপ্রকাশের স্বীকৃতি পান ও আইসিসি পুরস্কারের উদ্বোধনী আসরে বিশ্ব একাদশের অন্যতম সদস্যরূপে মনোনীত হন। ২০০৪-০৫ মৌসুমে মারভান আতাপাত্তু’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১১ এপ্রিল, ২০০৫ তারিখে ওয়েলিংটনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৫ ও ৩৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৬/১০৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ল্যু ভিনসেন্টের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৩৮ রানে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

২০০৫ সালে নিজ দেশে শিবনারায়ণ চন্দরপলের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ১৩ জুলাই, ২০০৫ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত খেলেছিলেন। ৩/৩৫ ও ৪/১৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কারণে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

একই সফরের ২২ জুলাই, ২০০৫ তারিখে ক্যান্ডিতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৬ ও ১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৬/২২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, কুমার সাঙ্গাকারা’র অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ২৪০ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ৭৪ রান সংগ্রহসহ ১৩ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

২০০৫-০৬ মৌসুমে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ৩০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। জিম্বাবুয়ে সফরে ওডিআইয়েও একই অর্জনের সাথে জড়িত হন। মুত্তিয়া মুরালিধরনের পর খুব সহজেই উভয় ধরনের ক্রিকেটে দ্বিতীয় সফলতম বোলারের মর্যাদা পেয়েছেন।

বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ের দিকেও সমান মনোনিবেশ ঘটিয়েছেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে কার্যকর অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ৯৭তম টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম শতরানের সন্ধান পান। এর অল্পদিন পর শ্রীলঙ্কার তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ১০০তম টেস্টে অংশ নেয়ার মাইলফলক স্পর্শ করেন।

আগস্ট, ২০০৮ সালে কলম্বোয় যুবরাজ সিংকে শূন্য রানে বিদেয় করে আরও একটি মাইলফলকে পৌঁছেন। ওডিআইয়ে ৪০০তম উইকেট লাভ করে বিশ্বের চতুর্থ বোলার হিসেবে এ কৃতিত্বের সাথে নিজেকে জড়ান।

২০০৯ সালে নিজ দেশে ইউনুস খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২০ জুলাই, ২০০৯ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ১/৪৩ ও ০/৪৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, কুমার সাঙ্গাকারা’র ব্যাটিং সাফল্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয় পায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। ঐ টেস্ট থেকে নিজের অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। তবে, একদিনের আন্তর্জাতিক ও টি২০আইয়ে অংশ নিতে থাকেন। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ডীয় ফাস্ট বোলারদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নেন। পরের বছর শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের বোলিং কোচ হিসেবে মনোনীত হন। ২০১৬ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে আয়ারল্যান্ড দলের কোচ ছিলেন। এরপর, শ্রীলঙ্কার পরামর্শক হিসেবে পুণরায় নিযুক্তি পান। পরবর্তীতে, চম্পকা রামানায়াকে’র পরিবর্তে শ্রীলঙ্কার বোলিং কোচ হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন। ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ তারিখে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে দলের ফাস্ট বোলিং কোচ হিসেবে মনোনীত হন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। বসনা ভাস নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।