চান্দু বোর্দে
২১ জুলাই, ১৯৩৪ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের পুনায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও রেফারি। দলে মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। মাঝারিসারির ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে ভূমিকা রাখলেও কার্যকর লেগ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ভারত দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
পুনাতে বসবাসরত মারাঠী খ্রিস্টান পরিবারে তাঁর জন্ম। পাঁচ ভাই ও পাঁচ বোন নিয়ে গড়া বিশাল পরিবারের সদস্য তিনি। তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা রমেশ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বরোদার সাথে সম্পর্ক ছিল ও বিজয় হাজারে’র প্রভাব তাঁর মাঝে লক্ষ্য করা যায়। ১৯৫২-৫৩ মৌসুম থেকে ১৯৭২-৭৩ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বরোদা ও মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯৫০-এর দশকের শুরুতে মহারাষ্ট্রের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেন। এরপর, বরোদায় চলে আসেন। সেখানে অনেকগুলো বছর সফলতার সাথে খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। বিজয় হাজারে’র ছত্রচ্ছায়ায় থাকেন ও নিজেকে শহরের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে তুলে ধরতে সচেষ্ট হন। এছাড়াও, বিজয় হাজারে’র সাথে সাজঘরে অবস্থানের সুযোগ পান। রঞ্জী ট্রফিতে বরোদার পক্ষে তাঁর অভিষেক খেলায় বিজয় হাজারে দ্বি-শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন।
১৯৫২ সালে মহারাষ্ট্রের সদস্যরূপে বোম্বের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তাঁর। খেলায় তিনি অর্ধ-শতক হাঁকান। দলের সংগ্রহ ৭৪/৬ থাকা অবস্থায় মাঠে নেমে এ সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। পরের মৌসুমে বোলার হিসেবে পাঁচ-উইকেটের সন্ধান পান। ১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে বরোদার পক্ষে খেলতে শুরু করেন। ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে নিজস্ব স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৬০৪ রান তুলে জাতীয় রেকর্ড গড়েন। ৫০ বছরের অধিক সময় পর চেতেশ্বর পুজারা তাঁর এ রেকর্ড ভঙ্গ করে নিজের করে নেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৪০.৯১ গড়ে ১২৮০৫ রান ও ২৭.৩২ গড়ে ৩৩১ উইকেট দখল করেন।
১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৫৫ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে পাকিস্তানে ভারতের প্রথম সফরে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা পান। এ সফরে তিনি কোন টেস্টে অংশ নেয়ার সুযোগ পাননি। তবে, ছয়টি প্রস্তুতিমূলক খেলায় ৫০ গড়ে রান তুলেন ও ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৯৯ রান তুলেন।
১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে নিজ দেশে জেরি আলেকজান্ডারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান একাদশের বিপক্ষে চার উইকেট পান। অবশেষে ভারত দলের পক্ষে খেলার সুযোগ লাভ করেন। ২৮ নভেম্বর, ১৯৫৮ তারিখে বোম্বের বিএসে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। গুলাম গার্ড ও মনোহর হার্দিকরের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুটা তেমন ভালো না হলেও স্বপ্নীল পরিবেশ সৃষ্টি করেন। তবে, ওয়েস হল, সনি রামাদিন ও রয় গিলক্রিস্টের ন্যায় বোলারদের বিপক্ষে প্রথম চার ইনিংস থেকে মাত্র ২০ রান তুলতে সমর্থ হন। তন্মধ্যে, দুইবার শূন্য রানে বিদেয় নিতে বাধ্য হন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ০-০ ব্যবধানে অগ্রসর হতে থাকে।
এক পর্যায়ে কলকাতায় অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে বাদ পড়েন। মাদ্রাজ টেস্টে পুণরায় খেলতে নেমে রয় গিলক্রিস্ট ও ওয়েস হলের ন্যায় বোলারদের রুখে দিয়ে ৫৬ রানের প্রথম অর্ধ-শতরানের সন্ধান পান। এরপর, দিল্লিতে সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেয়ার মাধ্যমে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের বাঁক ঘুরে যায়। কোটলায় সর্বপ্রথম বড় ধরনের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। কার্যতঃ পরাজয়বরণ করা থেকে অসম্ভব থাকা অবস্থায় প্রথম ইনিংসে ১০৯ রান তুলেন। পলি উমরিগড় ও বিজয় মাঞ্জরেকর আঘাত পেলে তিনি রুখে দাঁড়ান ও ৯৬ রান তুলেন। রয় গিলক্রিস্টের বাউন্সারকে হুক করলে সীমানা দিয়ে বাইরে পাঠান। তবে, ব্যাট স্ট্যাম্পে আঘাত হানলে হিট-উইকেটে বিদেয় নিলে জোড়া শতক লাভ করা থেকে বঞ্চিত হন।
পরবর্তী কয়েক বছর অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর অপূর্ব নিদর্শনে অগ্রসর হন। ১৯৬১-৬২ মৌসুমে মনসুর আলী খান পতৌদি’র নেতৃত্বে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। চার্লি গ্রিফিথের বাউন্সারে নরি কন্ট্রাক্টর মাথায় গুরুতর চোট পান। এ দৃশ্য দেখে দ্রুত মাঠে নেমে তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসেন। এছাড়াও, অন্যতম হিসেবে রক্ত দান করেন।
১৯৬১-৬২ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের সিরিজ বিজয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন। এ সময়ে তিনি স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করছিলেন ও অল-রাউন্ডার হিসেবে তাঁর উত্থান ঘটে। সেলিম দুরানি’র সাথে দারুণ জুটি গড়েন। সুভাষ গুপ্তে’র কারণে খেলায় তেমন অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তবে, দল থেকে বাদ পড়ার পর আরও নিয়মিতভাবে বোলিংয়ের সুযোগ পান। পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া এ সিরিজে ৪৪.৮৫ গড়ে তিনটি অর্ধ-শতক সহযোগে ৩১৪ রান ও ২৮.৭৫ গড়ে ১৬ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, কলকাতা টেস্টে দুইটি অর্ধ-শতক করে দলের জয়ে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। ঐ সিরিজে ভারত দল ২-০ ব্যবধানে জয় পায়।
তিন বছর পর ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে বোম্বেতে সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে শ্বাসরুদ্ধকর খেলায় অংশ নেন। ২ উইকেট হাতে রেখে ৩২ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নিজেকে সংযত রেখে দলকে জয় এনে দেন। ১৯৬৪ সালে বোম্বের ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের চূড়ান্ত দিনে ২৫৪ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় ভারত দল অগ্রসর হয়। দলের সংগ্রহ ২১৫/৭ থাকাকালে তিনি মাঠে নামেন। খেলায় তিনি নয় নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নেমে অপরাজিত ৩০ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে দুই উইকেটের নাটকীয় জয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। এ জয়ের পর দর্শকেরা উল্লাসে নেমে পড়ে। এক পর্যায়ে তিনি তাঁর নতুন ব্যাটটি হারিয়ে ফেলেন। তবে, নিজ দেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিষ্প্রভ ছিলেন।
১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আবারও নিজেকে মেলে ধরেন। এ সিরিজের নিজস্ব প্রথম ও একমাত্র পাঁচ-উইকেটের সন্ধান পান। ১৯৬৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও একই ধারার খেলা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হন।
১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে নিজ দেশে জন রিডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৫ মার্চ, ১৯৬৫ তারিখে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৫৫ রানে পৌঁছানোকালে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৬২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ মুঠোয় পুড়েন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
ভারতের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ১৯৬৭ সালে বার্বাডোসের স্মৃতি উদযাপন খেলায় অংশ নেয়ার সৌভাগ্যের অধিকারী হয়েছিলেন। ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে যুক্তরাজ্য থেকে ঐ দ্বীপের স্বাধীনতা অর্জন উপলক্ষ্যে কেনসিংটন ওভালে তারকাসমৃদ্ধ বিশ্ব একাদশের সদস্যরূপে গ্যারি সোবার্সের নেতৃত্বাধীন বার্বাডোস দলের বিপক্ষে চারদিনের খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। তারপর থেকেই ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে ভারতের ব্যাটিংনির্ভর দলে বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহনে অগ্রসর হতে থাকেন।
খুব সম্ভবতঃ ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে নিজের স্বর্ণালী সময়ে অবস্থান করছিলেন। এ মৌসুমে ভারত দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নাকানি-চুবানির শিকার হলেও তিনি ১২১ ও ১২৫ রানের ইনিংস উপহার দেন। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া এ সিরিজে ৩৪৫ রান তুলেছিলেন। মাদ্রাজের তৃতীয় টেস্টে শতরানের পূর্বে চার্লি গ্রিফিথের বাউন্সারে তাঁর চুল স্পর্শ করে ও অল্পের জন্যে মারাত্মক আঘাত থেকে রক্ষা পান।
এরপর, ইংল্যান্ড সফরে ব্যর্থতার পরিচয় দিলেও ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে মিশ্র সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। অ্যাডিলেড টেস্টের পূর্বে নিয়মিত অধিনায়ক মনসুর আলী খান পতৌদি বিশ্রামে থাকলে তিনি ভারতকে একবার নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পান। সফরকারী দল ঐ টেস্টে ১৭৪ রানে পরাজিত হয়। প্রথম ইনিংসে ৬৯ রান তুলেছিলেন। মেলবোর্নের পরের টেস্টে গ্রাহাম ম্যাকেঞ্জি’র বিপক্ষে দূরন্ত খেলে উভয় ইনিংসে দুইটি অর্ধ-শতক হাঁকান।
১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে মনসুর আলী খান পতৌদি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৭ মার্চ, ১৯৬৮ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৪১ ও ৬৫* রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ২৭২ রানে পরাজিত হলে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। এ সফরে ৪৮.৪০ গড়ে ২৪২ রান তুলে ব্যাটিংয়ের শীর্ষে আরোহণ করেন। তন্মধ্যে, স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ভারতের প্রসিদ্ধ জয়ে ভূমিকা রাখেন।
এরপর, তিনি আর একটিমাত্র টেস্ট খেলার সুযোগ পান। দ্রুত খেলায় ছন্দপতন ঘটতে থাকে। বিজয় মার্চেন্টের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলী তরুণদের অগ্রাধিকারের সিদ্ধান্ত নিলে প্রথম ধাক্কা তাঁর উপর দিয়ে যায়। গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথ ও সুনীল গাভাস্কারকে পাশ কাটিয়ে অজিত ওয়াড়েকরকে অধিনায়কত্ব প্রদান করা হয়। পাশাপাশি, তাঁকে দল থেকে বাদ দেয়।
১৯৬৯-৭০ মৌসুমে নিজ দেশে বিল লরি’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ৪ নভেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে বোম্বেতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ২ ও ১৮ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয় তুলে নেয় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
টেস্টগুলো থেকে পাঁচ শতক সহযোগে ৩৫.৫৯ গড়ে ৩০৬১ রান তুলেন। মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ-স্পিন বোলিংয়ে দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে ভারতের জয়ে ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৪ সালে দূর্ভাগ্যজনকভাবে কাঁধে আঘাতের কারণে তাঁর বোলিংয়ে বিঘ্ন ঘটে। টেস্ট ক্রিকেট থেকে দুইবার পাঁচ-উইকেট লাভসহ ৪৬.৪৮ গড়ে ৫২ উইকেট দখল করেন। ব্যক্তিগত সেরা বোলিং করেন ৫/৮৮। ফিল্ডার হিসেবেও দক্ষতার পরিচয় দেন। মূলতঃ ডিপ অঞ্চলে অবস্থান করতেন। পরবর্তীতে, কাছাকাছি এলাকায় ফিল্ডিং করতেন। ৩৭ ক্যাচ তালুবন্দী করেন।
১৯৫০-এর দশকের শেষদিকে ভারতের সর্বাপেক্ষা উদীয়মান তরুণ ব্যাটসম্যান হিসেবে আবির্ভূত হন। ষাটের দশকে এসে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অল-রাউন্ডারের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। এরপর, ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ষাটের দশকের শেষদিক পর্যন্ত ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
শচীন তেন্ডুলকর, মার্ক ওয়াহ প্রমূখের ন্যায় তিনিও একই খেলায় পেস ও স্পিন বোলিং করেছেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রচলিত সকল ধরনের স্ট্রোক খেলতে পারদর্শী ছিলেন। ব্যাটিংয়ের ধরন অনেকাংশেই বিজয় হাজারে’র অনুরূপ হলেও তিনি রোমাঞ্চকর পরিবেশ সৃষ্টি করতেন। মনসুর আলী খান পতৌদি, এমএল জয়সীমা, ফারুক ইঞ্জিনিয়ার ও সেলিম দুরানী’র ন্যায় তিনিও প্রায়শঃই ভারতীয় ব্যাটিংয়ের উত্থানে অংশ নিতেন।
প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ৩০০০ রান সংগ্রহ ও ৫০ উইকেট লাভের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী হন। পরবর্তীকালে, কপিল দেব ও রবি শাস্ত্রী তাঁর এ অর্জনের সাথে যুক্ত হন। ৩৫.৫৯ গড়ে ৩০৬১ রান তুলেছিলেন। নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রচণ্ড চাপের মুখেও সংযত থাকতেন। সন্দেহাতীতভাবে তিনি তাঁর সময়কালে খুব সহজেই সেরা ভারতীয় ব্যাটসম্যান ছিলেন। এ সময়ে অন্য যে-কোন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের তুলনায় ৬৩৪ রান বেশী তুলেছিলেন।
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ক্রিকেট প্রশাসনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ ও ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত দুইবার জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতি মনোনীত হন। ভারত দলের ব্যবস্থাপক হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৮৯ সালে ভারত দলকে সাথে নিয়ে পাকিস্তান গমন করেন। এক স্বাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেন যে, জালবদ্ধ ঘেরা স্থানে অনুশীলনীতে ১৬ বছর বয়সী শচীন তেন্ডুলকরকে কিছু সময় মাঠের বাইরে রাখা বেশ কঠিন বিষয় ছিল। মাঠ কর্মকর্তা উইকেট প্রস্তুতের কথা জানান ও তাঁকে মাঠের বাইরে রাখার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে, ২০০৭ সালে ইংল্যান্ডে যান ও রাহুল দ্রাবিড়ের অধিনায়কত্বে ভারত দল ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। প্রথম-শ্রেণীর একটি খেলায় ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৯৯ সালে রেডিফে এক স্বাক্ষাৎকারে তরুণ মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনকে দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি তাঁর দায়িত্ব পালনের উল্লেখযোগ্য মুহূর্তরূপে উল্লেখ করেন। ২০০৭ সালে সিকে নায়ড়ু আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। এর পাঁচ বছর পূর্বে পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত হন।