৩১ আগস্ট, ১৯৪৪ তারিখে ব্রিটিশ গায়ানার কুইন্সটাউনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, রেফারি ও প্রশাসক। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
৬ ফুট ৫ ইঞ্চি (১.৯৩ মিটার) গড়ন নিয়ে দীর্ঘকায় শারীরিক গঠনের অধিকারী, আনত কাঁধ, বৃহৎ গোঁফ ও পুরো চশমা নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে বিরাট উত্থানপর্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন। ১২ বছর বয়সে বিদ্যালয়ে মারামারির ঘটনায় চোখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে চশমাকে আজীবনের সঙ্গী করে নিতে বাধ্য হন। বিখ্যাত ক্রিকেটার ল্যান্স গিবস সম্পর্কে কাকাতো ভাই ছিলেন। জর্জটাউনের চাদাম হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছিলেন। মারকুটে ব্যাটসম্যান ও ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সফলতম অধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। প্রায় প্রকাণ্ড দেহ, অলস ভঙ্গীতে চলাফেরা করলেও আদেশ প্রদানের গতি ও ক্ষীপ্রময়তা সহকারে নিখুঁতমানের কৌশল অবলম্বনপূর্বক ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে দুই দশক বিশ্ব ক্রিকেটের শীর্ষস্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সর্বকালের সেরা বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানের অন্যতম এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্যতম সফলতম ও সম্মানীয় অধিনায়কের মর্যাদা পেয়ে আসছেন। ‘বিগ সি’, ‘হুবাট’ কিংবা ‘সুপারক্যাট’ ডাকনামে পরিচিতি পান ও নির্দয় পেস বোলিংকে উপজীব্য করে বিশ্ব ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরিচিতি আনয়ণে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁকে বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের একাধিপত্য বিস্তারের মূল হোতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটের স্বর্ণযুগের সাথে নিজেকে জড়ান। সন্দেহাতীতভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা অধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছেন।
১৯৬৩-৬৪ মৌসুম থেকে ১৯৮৬ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে ব্রিটিশ গায়ানা ও গায়ানা এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ল্যাঙ্কাশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে তৎকালীন ব্রিটিশ গায়ানা দলের সদস্যরূপে বামহাতি মাঝারসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। ১৯৬৭ সালে ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে হ্যাসলিংডেনের পক্ষে খেলেন। ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পূর্বে ওয়ারউইকশায়ারের পক্ষে খেলার প্রস্তাবনা পান। ১৯৬৮ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে প্রথম খেলেন। পরবর্তী মৌসুমে ক্যাপ লাভ করেন।
১৯৬৬ থেকে ১৯৮৫ সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ১১০ টেস্ট ও ৮৭টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে গ্যারি সোবার্সের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে ভারত গমন করেন। ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৬৬ তারিখে বোম্বের বিএসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। প্রতিপক্ষীয় অজিত ওয়াড়েকরের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৮২ ও ৭৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে বর্ণাঢ্যময় আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। এ পর্যায়ে গ্যারি সোবার্সের সাথে ১০২ রানের জুটি গড়ে স্পিনারদের উপযোগী পিচে দলকে জয় এনে দেন। ৬ উইকেটে পরাজিত হলে স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
নিজ দেশে প্রথমবারের মতো টেস্টে অংশ নিয়ে প্রথম শতরানের সন্ধান পান। ত্রিনিদাদে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৮ রান তুলে নিশ্চিত পরাজয় রোধ করতে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। এরপর, ঐ সিরিজের চতুর্থ টেস্টে আরও একটি শতক হাঁকিয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ব্রিসবেনে স্বাগতিকদের বিপক্ষে নিজের প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেন।
১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে গ্যারি সোবার্সের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ৩ ও ১৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ৫ উইকেটে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৭১-৭২ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রাহাম ডাউলিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২০ এপ্রিল, ১৯৭২ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত সিরিজের চূড়ান্ত ও পঞ্চম টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৩ রানে পৌঁছানোকালে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১৮ ও ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দীসহ ১/১০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। অবশ্য, খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় শেষ হয়।
পূর্ববর্তী ১২ মাসে অনন্য ক্রীড়াশৈলী উপস্থাপনার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭১ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। এ পর্যায়ে ল্যাঙ্কাশায়ারের পক্ষে ৪৭ গড়ে ১৬০০ রান তুলেছিলেন। প্রায়শঃই বড় ধরনের খেলায় নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট ছিলেন। ১৯৭২ সালে লর্ডসে ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে ১২৬ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে ল্যাঙ্কাশায়ারকে জিলেট কাপের শিরোপা জয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন। ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ তারিখে লিডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওডিআইয়ে অংশ নেন। ১৯৭৫ সালে লর্ডসে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় দূর্দান্ত শতক হাঁকিয়ে উদ্বোধনী আসরের শিরোপা বিজয়ে নেতৃত্ব দেন।
নিজের স্বর্ণালী মুহূর্তে বোলারদের বিপক্ষে অতি মারমূখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। ভারী ব্যাট, শক্তিশালী কাঁধ ও বাহুর পূর্ণাঙ্গ ব্যবহারে যে-কোন খেলার গতিধারা পাল্টে দিতেন। একবার গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে মাত্র ১২০ মিনিটে ২০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। এরফলে, ১৯৭৬ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে দ্রুততম দ্বি-শতরানের রেকর্ডের সমকক্ষ হন।
১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে প্রথমবারের মতো বিদেশ সফরে দলের অধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। কিছু সময় নিচুমানের রান সংগ্রহের পর নাটকীয়ভাবে রানের ফল্গুধারায় নিজেকে নিয়ে আসেন। ব্যাঙ্গালোরে সিরিজের প্রথম টেস্টে ১৬৩ রান তুলেন। শতরানে পৌঁছতে মাত্র ৮৫ বল খরচ করেন। এরপর, বোম্বেতে সিরিজের পঞ্চম টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৪২ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন। এ খেলায় জয়লাভের ফলে তাঁর দল সিরিজ জয় করতে সমর্থ হয়। প্রায়শঃই সহজাত ব্যাটিংশৈলীর ধার ধারতেন না। দলের সঙ্কটকালীন সময়েও নিজেকে আক্রমণাত্মক ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন থেকে বিরত রাখতেন না। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে ৪৬.৯০ গড়ে ৪৬৯ রান পেয়েছিলেন। জেফ থমসন ও ডেনিস লিলি’র তোপে পড়ে ৫-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল।
অস্ট্রেলিয়া সফরে দলের শোচনীয় পরাজয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটে আমূল পরিবর্তন ঘটে। অস্ট্রেলীয়দের গৃহীত কৌশল অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নেন ও দলে ফাস্ট বোলারদেরকে যুক্ত করতে থাকেন। কিছুসংখ্যক ক্রিকেট বিশ্লেষকের অভিমত যে, অধিনায়ক হিসেবে ক্রমাগত সম্মুখের দিকে ধাবিতকালীন অ্যান্ডি রবার্টস, ম্যালকম মার্শাল, জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিং ও কলিন ক্রফ্টের ন্যায় ফাস্ট বোলাদের একযোগে আক্রমণ এবং গর্ডন গ্রীনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স ও ভিভ রিচার্ডসের ন্যায় তারকা ক্রিকেটারদের বিশাল সহায়তা পেয়েছেন। তাসত্ত্বেও পেশাদারীত্ব ও দৃঢ় স্থির লক্ষ্যমাত্রায় তিনি অবিচল ছিলেন। বিভিন্ন দেশ নিয়ে গঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে একত্রিতকরণে ভূমিকা রেখেছেন ও প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের চেয়ে দলীয়ভাবে বেঁধে রাখার দিকে সবিশেষ নজর দিয়েছেন। পাশাপাশি বিতর্কিতও হয়েছেন। ধীরগতিতে ওভার করা ও শর্ট পিচ বোলিং – উভয়ই তাঁর অধিনায়ক হিসেবে সফলতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। টেস্ট ক্রিকেটের গতিধারা পরিবর্তিত করে দেন।
ক্যারি প্যাকারের ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট চলাকালীন দল নির্বাচকমণ্ডলীর সাথে মতবিরোধে লিপ্ত হন। ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর পূর্বে অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। তাসত্ত্বেও, ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় আসরে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় পরবর্তী সফরে হাঁটুতে তাঁকে অস্ত্রোপচার করতে হয়। এরফলে, তাঁর গতিময়তা ও কার্যকারীতা আরও বৃদ্ধি পায়। অ্যাডিলেড ও ওল্ড ট্রাফোর্ডে শতক হাঁকান। ওয়েস্ট ইন্ডিজে নিজের স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। উপর্যুপরী নয় ইনিংসের মধ্যে সর্বনিম্ন ৪৯ রান তুলে রান-আউটের শিকার হয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ৭৬ গড়ে ও ঘরোয়া ক্রিকেটে পর্বতসম ১৭২.৫০ গড়ে রান পেয়েছেন।
বয়সের ভারে ন্যূহ হয়ে পড়লে ক্রিজে অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে থাকেন। তাসত্ত্বেও, মাঝারিসারিতে দলের অন্যতম ক্রিকেটার হিসেবে চিত্রিত হতেন। দলের সঙ্কটকালীন নিজেকে মেলে ধরতে কিংবা প্রয়োজন অনুযায়ী ভূমিকা নিতে তৎপর ছিলেন। ১৯৮১ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অ্যাডিলেড টেস্টে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস উপস্থাপনের মাধ্যমে জয়লাভ করাসহ সিরিজ ড্র নিশ্চিত করেন। দৃশ্যতঃ অস্ট্রেলিয়ার জয়ের সম্ভাবনা প্রবল থাকলেও ফাস্ট বোলারদের দাপটের পাশাপাশি দায়িত্বভার নিজ কাঁধে নিয়ে স্মরণীয় করে রাখেন। নিজ দেশে ও বিদেশে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিজয়ী হয়ে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৯৮৪ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে সর্বশেষ সফরে যান। ৬৭ গড়ে রান তুলেন ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিখ্যাত ৫-০ ব্যবধানের জয়ের ন্যায় ব্ল্যাকওয়াশে বিরাট ভূমিকা ও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে শেষবারের ন্যায় অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে অস্ট্রেলিয়া গমন করে ৫০.৮৫ গড়ে রান তুলে দলকে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করান। ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৮৪ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩৩ ও ৭২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, বব হল্যান্ডের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৫৫ রানে জয় পেলেও ১-৩ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল।
শেষবার অধিনায়কত্ব করে পরাজিত হলেও অবিস্মরণীয়ভাবে দল পরিচালনা করেছেন। একাধারে ২৬ টেস্টে অপরাজিত ছিল ও উপর্যুপরী ১১ টেস্টে তাঁর দল জয় পায়। এছাড়াও, প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলেন। বিদ্যালয় জীবনে অ্যাথলেটিক্সে পারদর্শী ছিলেন। কভার অঞ্চলে দূর্দান্ত ফিল্ডার হিসেবে আবির্ভুত হন। তবে, হাঁটুর সমস্যার কারণে স্লিপ অঞ্চলে দণ্ডায়মান থাকতে হয়। টেস্টে সর্বমোট ৯০ ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন।
কার্যকর ডানহাতি মিডিয়াম-পেসার হিসেবে বোলিংয়েও দক্ষ ছিলেন। টেস্টে ১০ উইকেট পেয়েছেন। সব মিলিয়ে ১১৪টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট দখল করেছিলেন। তন্মধ্যে, ১৯৭০ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ল্যাঙ্কাশায়ার বনাম লিচেস্টারশায়ারের মধ্যকার খেলায় ব্যক্তিগত সেরা ৪/৪৮ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। ১৯৭৭ সালে ল্যাঙ্কাশায়ার কর্তৃপক্ষ আর্থিক সুবিধা গ্রহণের খেলার জন্যে মনোনীত করে ও £২৭,১৯৯ পাউন্ড-স্টার্লিং লাভ করেন। ১৯৮১ সালে ক্লাবের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন ও সন্তানদেরকে কাউন্টিতে নিয়ে আসেন।
২০০৯ সালে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মানসূচক অস্ট্রেলিয়া অর্ডার পদবীতে ভূষিত হন। ২০১৯ সালে নাইটহুড উপাধীতে ভূষিত হন।
গায়ানার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চাকুরী করেন। তাসত্ত্বেও ক্রিকেটের সাথে সর্বদাই নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। কোচের দায়িত্ব পালন করেন ও খেলায় ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। পাশাপাশি, ১৯৯০-এর দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও গায়ানা দলের ব্যবস্থাপনায় নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সময়কালে আইসিসি ম্যাচ অফিসিয়াল হিসেবে কর্মজীবনের সূচনা করেন। অভিজ্ঞতার ঝুলিতে পরিপূর্ণ থাকা অবস্থায় আইসিসি ম্যাচ রেফারি হিসেবে মনোনীত হন ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ৫৩টি টেস্ট, ১৩৩টি ওডিআই ও ২টি টি২০আই পরিচালনা করেছেন। এ পদে থাকাকালীন তাঁর উপস্থিতিতে কোনরূপ গুঞ্জন ছিল না, শ্রদ্ধায় পরিপূর্ণতা ও খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস থাকতে দেখা যায়। সকলেরই অভিমত, অন্য যে-কোন ব্যক্তির চেয়ে ক্রিকেট খেলার সবকিছুই জানেন ও খেলাকে যে-কোন সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার সেমি-ফাইনাল ও চূড়ান্ত খেলায় কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। তবে, বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ব্যর্থতায় ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছেড়ে দেন। এ সময়টি ক্লাইভ লয়েডের হতাশাব্যঞ্জক অধ্যায় ছিল। পূর্ণাঙ্গ দল নির্বাচক হবার সিদ্ধান্তে তিনি বাঁধা দিয়েছিলেন। তাসত্ত্বেও পুরো সফরে দল নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য হয়। এছাড়াও, উত্তরোত্তর প্রশাসনিক দায়িত্বও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলশ্রুতিতে, ১৯৯৯ সালে নিউজিল্যান্ড সফর শেষে তিন বছরের দায়িত্ব পালনের পর পদত্যাগ করেন; পাশাপাশি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটেরও পতন ঘটতে শুরু করে।
২০০৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মেজর লীগ ক্রিকেট কর্তৃক ইন্টারস্টেট ক্রিকেট কাপের আয়োজন করা হয়। ঐ প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আসরটি তাঁর সম্মানার্থে স্যার ক্লাইভ লয়েড কাপ নামে নামাঙ্কিত হয়। সুনীল গাভাস্কার সংবাদপত্রের প্রতিবেদক ও ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে ২০০৮ সালে আইসিসি ক্রিকেট কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়। ২০০৭ সালে তাঁকে ঘিরে ক্রিকেট সাংবাদিক সিমন লিস্টার ‘সুপারক্যাট’ শিরোনামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ওয়াভনি লয়েড নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। তাঁর তৃতীয় সন্তান জেসন ক্লাইভ লয়েড গায়ানার গোলরক্ষক হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, চ্যান্টেল জিনেস লয়েড-ওয়েন্স নাম্নী কন্যা রয়েছে।