আব্বাস আলী বেগ
১৯ মার্চ, ১৯৩৯ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
১৯৫৪-৫৫ মৌসুম থেকে ১৯৭৫-৭৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে হায়দ্রাবাদ ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে খেলেছেন। মনসুর আলী খান পতৌদি’র একান্ত ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। বাঘের ন্যায় মুখমণ্ডল নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন। অক্সফোর্ড থেকে ব্লু লাভ করেছিলেন। মনসুর আলী খান পতৌদি, এমএল জয়সীমা, সৈয়দ আবিদ আলী, কেনিয়া জয়ন্তীলাল ও পচিয়া কৃষ্ণমূর্তিসমৃদ্ধ শক্তিধর হায়দ্রাবাদ দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ৩৪ গড়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১২৩৬৭ রান তুললেও হায়দ্রাবাদের পক্ষে ৩৯ গড়ে রান পেয়েছিলেন। সমারসেটে তিন বছর মেয়াদে খেলেছেন।
১৯৫৯ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ভারত দলের পক্ষে সর্বমোট ১০ টেস্টে অংশ নিয়েছেন। ১৯৫৯ সালে ইংল্যান্ড সফরে দত্তা গায়কোয়াড়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের শোচনীয় ফলাফলের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। ঐ সফরের শুরুতে একটি খেলায় অপরাজিত ২২১ ও ৮৭ রান তুলে অক্সফোর্ড রেকর্ড গড়েছিলেন। ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় চতুর্থ টেস্টের পূর্বে বিজয় মাঞ্জরেকার আহত হলে অক্সফোর্ডে অধ্যয়নকালে ভারত দলে খেলার জন্যে তারবার্তা পান। এ বার্তা লাভের পর ২০ বছর বয়সে ২৩ জুলাই, ১৯৫৯ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ফ্রেড ট্রুম্যানের ন্যায় বোলারদের রুখে দিয়ে অভিষেকে টেস্ট শতক হাঁকান। স্বাগতিক দল ১৭১ রানে জয় তুলে নেয় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
৫৪৮ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে দলের সংগ্রহ ৩৫/১ থাকা অবস্থায় মাঠে নামেন। দারুণ খেলতে থাকেন। ওল্ড ট্রাফোর্ডের ঐ টেস্টে ডাস্টি রোডসের বল তাঁর কপালে লাগে। ৮৫ রানে রিটায়ার হার্ট হন ও পরদিন খেলা শুরু হলে শতক হাঁকান। ২০ বছর ১২৬ দিন বয়সে ভারতের কনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে এ সফলতা পান। ১১২ রান করে বিদেয় নেন।
দূর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁর টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবন মাত্র ১০ টেস্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল ও আর তেমন উল্লেখযোগ্য সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। ২৪ গড়ে ৪২৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ শতকের পর দুইটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। ১৯৫৯-৬০ মৌসুমে বোম্বের ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ সাফল্য পান। চা-বিরতিকালীন ২০ বছর বয়সী ফ্রক পরিহিতা এক রমণী দর্শক নর্থ স্ট্যান্ডে তাঁর গালে চুমো খান। ঐ চুমো ব্যাপক সাড়া জাগায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে সালমান রুশদী ‘দ্য মুরস লাস্ট সাইয়ে মুরের মাতা অরোরা দ্য কিসিং অব আব্বাস আলী বেগ’ নামের চিত্রকর্ম অঙ্কন করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতিশীলতা ধরে রাখতে পারেননি।
১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে নিজ দেশে গ্যারি সোবার্সের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৬৬ তারিখে ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৪ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলায় তাঁর দল ইনিংস ও ৪৫ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
ম্যাগনেশিয়া অব ফ্রিকশন ম্যাটেরিয়ালস ও হিন্দুস্তান ফারোদো লিমিটেডে কাজ করতেন। মুর্তুজা ও অক্সফোর্ড ফেরৎ মাজহার নামীয় ভ্রাতৃদ্বয় হায়দ্রাবাদের পক্ষে খেলেছেন।