Skip to content

অজিত ওয়াড়েকর

1 min read

১ এপ্রিল, ১৯৪১ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ, রেফারি ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে মিডিয়াম কিংবা স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

লিকলিকে গড়নের অধিকারী হলেও বলে সপাটে আঘাত করতে পারতেন। নিজস্ব ব্যাটিং কৌশল গ্রহণে অগ্রসর হতেন। পায়ের সাথে বেশ ফাঁক রেখে ব্যাট হাতে দাঁড়াতেন। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুম থেকে ১৯৭৪-৮৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বোম্বের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৭ বছরের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনে ৪৭ গড়ে ১৫৩৮০ রান পেয়েছেন। কেবলমাত্র রঞ্জী ট্রফিতেই ৫৯ গড়ে ৪৩৮৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে বোম্বে দলের প্রধান ব্যাটিং চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৭২-৭৩ মৌসুমের সেমি-ফাইনালে পিছলে পড়ে রান-আউটের শিকারে পরিণত হলে দলে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।

১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে মহীশূরের বিপক্ষে ৩২৩ রানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান তুলেন। ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রস্তুতিমূলক খেলায় স্যাম গ্যাননের বাউন্সারে তাঁর দাঁত পড়ে যায়। পরের বলেই তিনি বোল্ড হন।

১৯৬৬ থেকে ১৯৭৪ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৩৭ টেস্ট ও দুইটিমাত্র ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে নিজ দেশে গ্যারি সোবার্সের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৬৬ তারিখে বোম্বের বিএসে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় সফরকারীরা ৬ উইকেটে জয়লাভ করে ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। ৮ ও ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন।

১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মনসুর আলী খান পতৌদি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট হন। এ সফরেই ভারত দল নিজ দেশের বাইরে এসে বিদেশের মাটিতে তাদের প্রথম টেস্ট ও সিরিজ বিজয়ে অংশ নেয়। ডুনেডিনে ৮০ ও ৭১ রান সংগ্রহের পর ওয়েলিংটনে ব্যক্তিগত সেরা ১৪৩ রানের ইনিংস খেলেন। উভয় টেস্টেই ভারত দল বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ৪৭ গড়ে ৩২৮ রান তুলে দলের শীর্ষ রান সংগ্রাহকে পরিণত হন।

১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৮০ ও ৭১ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে জ্যাক অ্যালাবাস্টারের শিকারে পরিণত হন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

একই সফরের ২৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। ব্যাট হাতে নিয়ে প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৯৯ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেন। খেলায় তিনি ১৪৩ ও ৫* রান তুলেছিলেন। এছাড়াও, চারটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয় পেলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

বিজয় মার্চেন্টের কাস্টিং-ভোট প্রয়োগের পর মনসুর আলী খান পতৌদি’র পরিবর্তে ভারতের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্যে মনোনীত হন। দুই বিজয়ে অংশ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ফলাফল অনুকূলে নিয়ে আসেন। ফলো-অন করার কথা জানিয়ে গ্যারি সোবার্সকে বিভ্রান্তিতে ফেলেন। চারদিনের টেস্টে দল ১৭০ রানে এগিয়ে থাকার পরও তাঁর এ সিদ্ধান্ত প্রদানকালে সুনীল গাভাস্কারকে স্নানাগারে তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখেছিলেন।

কুইন্স পার্ক ওভালে চারজন স্পিনারকে নিয়ে খেলেন। এরপর ভারত দল দিলীপ সরদেশাই ও সুনীল গাভাস্কারের অসামান্য ব্যাটিংয়ের বদৌলতে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্টে জয় পায়।

কয়েক মাসের ব্যবধানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের মাটিতে দুইটি বিজয়ের সাথে জড়িয়ে রেখে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে স্বীয় নামকে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করে রেখে গেছেন। এরপর, নিজ দেশে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের বিজয়ে দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর, ইংল্যান্ডে ভারত দল সিরিজে পরাজিত হয়। তাঁকে শুধুমাত্র অধিনায়কত্ব থেকেই প্রত্যাহার করা হয়নি, পাশাপাশি দল থেকে চিরতরে বাদ দেয়া হয়।

১৯৭৪ সালে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ইংল্যান্ড সফরে যান। ৪ জুলাই, ১৯৭৪ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেন। ইনিংস ও ৭৮ রানে জয় পেয়ে স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে। ৩৬ ও ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

টেস্টে ভারতের প্রথম বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০০০ রান সংগ্রহ করার গৌরব অর্জন করেন। ক্রিকেট থেকে অবসরগ্রহণকালীন টেস্টগুলো থেকে ৩১ গড়ে ২১১৩ রান তুলেছেন। কেবলমাত্র তিন নম্বর অবস্থানে ব্যাটিং করেই পেয়েছেন ১৮৯৯ রান। এ রেকর্ডটি এক দশক টিকেছিল।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে লালা অমরনাথের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ভারত দলের অধিনায়ক, ব্যবস্থাপক ও দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালনের কৃতিত্বের অধিকারী হন। ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও, অর্জুনা পদক, পদ্মশ্রী পদক, ক্যাস্ট্রল আজীবন সম্মাননা পুরস্কারসহ বিসিসিআই সভাপতি এন শ্রীনিবাসনের কাছ থেকে সিকে নায়ড়ু আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায় চাকুরী করেছেন।

১৫ আগস্ট, ২০১৮ তারিখে মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে ৭৭ বছর ১৩৬ দিন বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।